প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হয়: প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৭, ১৯:৩২ | প্রকাশিত : ১৮ মার্চ ২০১৭, ১৭:৫০

ছোট ছোট সমস্যা নিয়ে বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেছেন, বিচার বিভাগ নিয়ে সঠিক তথ্য না দিয়ে সরকারপ্রধানকে ভুল বোঝানো হয়।

শনিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করি, বিচার বিভাগের যত ক্ষতি করেছে তা আমাদের বিচার বিভাগের কিছু লোক। আমরা কিন্তু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তবে এটা দু-একজন মাত্র। প্রশাসনকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, বলা হয় বিচার বিভাগ প্রশাসনের প্রতিপক্ষ, এটা অত্যন্ত ভুল ধারণা। কোনোদিনই বিচার বিভাগ প্রশাসন বা সরকারের প্রতিপক্ষ নয়।

ছোট ছোট বিষয় নিয়ে এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের ছোট ছোট প্রবলেম, আমরা কিন্তু বেশি কিছু চাচ্ছি না। এই ছোট ছোট প্রবলেমগুলো ঠিকমতো তুলে ধরা হয় না। বরং উল্টোভাবে পেশ করা হয়।’

‘বিচারকশূন্যতা নিয়ে আমরা সময়মতো চিঠি দেই, কিন্তু সময়মতো সহযোগিতা পাই না। এটা হলো নিম্নপর্যায়ের প্রশাসন। উচ্চপর্যায়ে একটা ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়।’ এ সংক্রান্ত বিষয় যারা দেখেন তাদের উদ্দেশে তিনি বেলন, ‘আশা করি তারা সরকারপ্রধানকে ভুল রিপোর্ট সরবরাহ করবেন না। ঠিক রিপোর্ট দেবেন, যাতে বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক থাকে।’

ভুল রিপোর্ট দেওয়ার কারণে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, উল্টো সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করেন এস কে সিনহা। কারণ হিসেবে বলেন, ‘সরকারের একটা বড় বিষয় হলো আইনশৃঙ্খলা সুন্দরভাবে বজায় রাখা। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবচেয়ে বড় কাজ অপরাধীদের ঠিকমতো বিচার করা। সময়মতো বিচার না হলে সেই অপরাধী জামিনে বের হয়ে যায়। এরপর সে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে সংবিধান ও আইনের আওতার মধ্যে যে ক্ষমতা দেয়া আছে, সেই ক্ষমতা যদি ঠিকমতো কাজ করতে দেয়া হয় তাহলে দেশে অনেকাংশে দুর্নীতি, অপরাধপ্রবণতা, এমনকি সন্ত্রাসমূলক কাজ চলে যেত। সরকার ও প্রশাসন এটা উপলব্ধি করবে, ভবিষতে যাতে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়।’

প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের বিভিন্ন পর‌্যায়ে মোট ৩০৭ পদ শূন্য থাকার কথা তুলে ধরেন তার বক্তব্যে। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘এখনো ছয়জন জেলা জজের পদ খালি, এটা কি কল্পনা করা যায়!’ এই পদের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের তিনি (জেলা জজ) ডেপুটি কমিশনার, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অনুমতি ছাড়া তিনি এক মিনিটের জন্য বের হতে পারবেন না স্টেশন থেকে।’

প্রধান বিচারপতির বক্তব্য অনুযায়ী ৬টি জেলা জজ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত জেলা জজ ৯টি খালি, যুগ্ম জেলা জজ ১৬টি, সহকারী জজ পর্যায়ে ১২৩টি এবং জুডিশিয়াল সার্ভিসে ১৫৯টি পদ খালি।

এসব পদে পদায়ন না হওয়ার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট থেকে চাহিদা (রিকুইজেশন) দেয়া হয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের তরফ থেকে সরকারি আদেশ করা হয়নি। তাই খালি।’

মামলা জটের পেছনে এসব শূন্য পদও একটা বড় কারণ বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, শূন্য পদ পূরণ না করায় জেলা জজের যে মামলা সেটা কিন্তু ডেডলক থেকে গেল। এক মাস, দুই মাস, তিন মাস, ছয় মাস যদি নিয়োগ না দেয়া হয় সেগুলো কিন্তু ডেডলক হয়ে গেল। আজকে আমাদের ৩০ লাখ মামলা, এটা ডেডলক হওয়ার কারণেই হয়েছে।’

তিনি বলেন, আজকে যে চলে গেলেন সেই জায়গায় যদি কালকে পদায়ন করা হয়, তাহলে কিন্তু ডেডলকটা হতো না।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রতিটি সরকার যেহেতু রাজনৈতিক সরকার, কিছুটা বাড়াবাড়ি হবে। দলীয় চিন্তাচেতনা হবেই, সে কারণেই বিচার বিভাগ। তা না হলে বিচার বিভাগ প্রশাসনের অধীনেই থেকে যেত। আগে যেমন রাজা-বাদশাহরা বিচার করেছে। কিন্তু এটা হয়নি এই কারণে যে কোনো চাপ বা দলীয় চিন্তা-চেতনার বাইরে হবে বিচার বিভাগ।’

বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের কাজ সম্পর্কে শাসনতন্ত্রে পরিষ্কারভাবে বলা আছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকার যেটা করছে তা রাজনৈতিক চিন্তাধারায়। কিন্তু যখন শাসনতন্ত্র অনুযায়ী ঠিকমতো হচ্ছে না তখন সুপ্রিম কোর্ট এগিয়ে আসবে, বিচার বিভাগ এগিয়ে আসবে। তা না হলে সেই দেশের সভ্যতা থাকবে না।’

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মুসা খালেদ, বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সচিব পরেশ চন্দ্র শর্মা।

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এমএবি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি

কক্সবাজারে কতজন রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন

আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় চট্টগ্রামের ডিসি এসপিসহ চার জনকে হাইকোর্টে তলব

১১ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি ২৯ জুলাই

২৮ দিন পর খুলল সুপ্রিম কোর্ট

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :