জঙ্গি আস্তানার তথ্যদাতাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে পুলিশ

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৭, ০৮:৪৭ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭, ০৮:৫৬

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

পরিচয় গোপন রাখা হবে-এমন অঙ্গীকার করে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে তথ্য চাইছে পুলিশ। বেশ কিছু আস্তানার তথ্য বাহিনীটি গোপন সূত্রেই পেয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অভিযান চালানোর দিন সেই তথ্যদাতার নাম প্রকাশ করে দিয়েছে পুলিশ। এর আগেও রাজধানীতে একটি জঙ্গি আস্তানায় তথ্যদাতার নাম প্রকাশ করে দিয়েছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

একজন মানবাধিকার কর্মী বলেছেন, জঙ্গিদের বিষয়ে নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতেই তার ভয় লাগে। ওই ব্যক্তি ঝুঁকি নিয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়েছেন। তার নাম প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর এখন তিনি যদি কোনো রকম বিপদে পরেন, তাহলে অন্যরা আর পুলিশকে তথ্য দিতে চাইবেন না। সে ক্ষেত্রে পুলিশই আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতা শুরুর পর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার সন্দেহভাজন জঙ্গিদের তথ্য দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। গত শনিবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই আহ্বান জানিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো জানিয়েছে, তাদেরকে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে তথ্য দেয়া যাবে ফোন করে, সরাসরি হাজির হয়ে বা বিশেষ অ্যাপ (র‌্যাবের অ্যাপের নাম রিপোর্ট টু র‌্যাব আর পুলিশের অ্যাপের নাম হ্যালো সিটি অ্যাপস) ব্যবহার করে। বাহিনী দুটি বারবার অঙ্গীকার করেছে, তথ্যদাতার নাম-পরিচয় কোনোভাবেই প্রকাশ করা হবে না।

এর মধ্যে একজনের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সীতাকুণ্ডে অভিযান চালায় পুলিশের বিশেষ বাহিনী। সাম্প্রতিককালে যে কয়েকটি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলেছে, এটিই সবচেয়ে বড়।

প্রথমে সাধন কুঠির নামে একটি বাড়িতে যায় পুলিশ। আটক করা হয় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দানকারী দুইজনকে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই বাহিনীটি অভিযানে যায় পাশের ছায়ানীড় ভবনে। ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবরোধ করার পর ওই ভবনে অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জন। দুই দিন পর এরপর সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমা।

সাধন কুঠিরে অভিযান চালানোর পর যখন পুলিশ ছায়ানীড় ভবন ঘেরাও করে, তখন চট্টগ্রাম পুলিশের সীতাকু- সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম সাংবাদিকদেরকে অভিযানের বিষয়ে বর্ণনা দেন। সাধন কুঠিরে ‘জঙ্গি আস্তানা’ সম্পর্কে কার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে, ওই ব্যক্তি কীভাবে এসব জানলেন এবং তথ্য জানার পর তিনি কী কী করেছেন, তার সবই বর্ণনা দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশের এই বক্তব্যের পর আস্তানার সন্ধানদাতার নাম-পরিচয় প্রকাশ করে দেয় বেশ কিছু গণমাধ্যমও। পরের দিন আবার কিছু গণমাধ্যমে এও ছাপা হয় যে, তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আতঙ্কে আছেন ওই ব্যক্তি। জঙ্গিরা প্রতিশোধ নিতে তার বা তার স্বজনদের ওপর হামলা করে কি না-এ নিয়ে তার ভয় কাটছেই না।

জঙ্গি আস্তানার সন্ধানদাতার পরিচয় প্রকাশ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আপনি ওই তথ্যদাতাকে জিজ্ঞেস করুন ওনি কেন অতি উৎসাহিত হয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন।’

যখন অভিযানের সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম সংবাদ মাধ্যমগুলোকে ব্রিফ করে ওই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করেছেন- এই তথ্য জানানোর পর পুলিশ সুপার বলেন, ‘তাহলে আপনি ওই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে জিজ্ঞাসা করুন, এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই।’

তবে বারবার চেষ্টা করেও রেজাউল করিমের  বক্তব্য জানা যায়নি। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গোচরে আনব। বিষয়টি নিয়ে আমি তেমন জানি না।’

জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে কেউ তথ্য দিলে তার নাম পরিচয় প্রকাশ করার বিষয়ে পুলিশের নীতি কী- জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) এ কে এম শহীদুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যে কেউ জঙ্গিদের সম্পর্কে তথ্য দিলে তার পরিচয় অবশ্যই গোপন রাখা হবে।’ তাহলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার তথ্যদাতার পরিচয় কেন পুলিশ প্রকাশ করলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই পুলিশ কর্মকর্তার সংস্কার প্রয়োজন’।

এখন তো তাহলে তথ্যদাতা ঝুঁকিতে পড়ে গেলেন- তার নিরাপত্তায় আপনারা কী করবেন-এমন প্রশ্ন করলে এ কে এম শহীদুর রহমান বলেন, ‘ওই ব্যক্তি যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে তার নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা করা হবে।’


 
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহজাহান কবীর ঢাকাটাইমসকে বলেন, অপরাধীর তথ্য দিলে তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখা পুলিশের কর্তব্য। এটা ওই ব্যক্তির মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ওই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ হলে তিনি যদি হামলার শিকার হন, তাহলে তার দায় পুলিশের।’

সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানার তথ্যদাতার পরিচয় এক পুলিশ কর্মকর্তার প্রকাশ করে দেয়ার বিষয়টি জানালে এই আইনজীবী বলেন, ‘ওই ব্যক্তি সোর্স হিসেবে কাজ করেছেন। সোর্সের নাম পুলিশ কোনোভাবেই প্রকাশ করতে পারে না।’

আগেও একই কাজ করেছে পুলিশ

কেবল সীতাকুণ্ড অভিযান নয়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে মিরপুরের রূপনগরে হলি আর্টিজানে হামলাকারীদের প্রশিক্ষক হিসেবে চিহ্নিত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে আটকে অভিযান শুরুর পর ওই আস্তানার তথ্যদাতার পরিচয়ও ফাঁস করে দেয় পুলিশ।
সেদিনও ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন ওই তথ্যদাতার পরিচয় প্রকাশ করে দেন। তিনিও ওই তথ্যদাতা কখন, কীভাবে তাদেরকে তথ্য জানিয়েছেন সেই বিষয়টি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার চলার সময় বলে দেন।

ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/এএ/ডব্লিউবি