কৃষক সলেমানের সৌরপাম্প উদ্ভাবন

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও
 | প্রকাশিত : ২০ মার্চ ২০১৭, ০৯:০০

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের কৃষক সলেমান আলী বৈদ্যুতিক পাম্প ব্যবহার করে বোরো ক্ষেত ও মাছের হ্যাচারিতে পানি দিতেন। এতে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার টাকা বৈদ্যুতিক বিল পরিশোধ করতে হতো তার। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি সোলার প্যানেল দিয়ে পানি সেচ দেওয়ার সৌরপাম্প উদ্ভাবন করেন। ২০১৬ সালে তার সে প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখে।

সলেমান আলী জানান, প্রথম দিকে তিনি এই সোলার পাম্প দিয়ে পাঁচ একর বোরোর জমি ও মাছের হ্যাচারিতে পানি সরবরাহ করেন। এ বছর চারটি সৌরপাম্প দিয়ে প্রায় ৫০ একর জমিতে সেচ দিচ্ছেন।

মোলানী গ্রামের এই কৃষক আগে সোলার আইপিএস তৈরি করতেন।দেশে সৌর সেচযন্ত্র চালু হওয়ার পর তিনি এই প্রযুক্তি আরও সহজলভ্য করতে কাজ শুরু করেন। বাজারে থাকা সৌর সেচযন্ত্র সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। চলমান সোলার চার্জার গাড়ির মানুষ পরিবহনের বিষয়টি চিন্তায় নিয়ে একের পর এক সৌর প্যানেল,কন্ট্রোলারসহ নানা যন্ত্রপাতি লাগিয়ে দ্রুতগতিতে পানি তুলতে পাম্পে যোগ করেন গিয়ারবক্স। আর এভাবে তিনি নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন সৌর পাম্প।

এজন্য ১০টি সৌরকোষ একেত্রে সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে সৌর প্যানেল। প্রতিটি সৌরকোষের ধারণ ক্ষমতা ২৫০ ওয়াট। ওই সৌর প্যানেলের উপর সূর্যের আলো পড়তেই ভোল্টেজ তৈরি হয় এবং সংযুক্ত তারের মাধ্যমে এটি থেকে পাওয়া যায় বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে চলে তিন হর্স পাওয়ারের একটি পাম্প। এই সেচযন্ত্র দিয়ে সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত জমিতে সেচ দেওয়া যায়। সূর্যের তাপ যতই বাড়ে পানির তীব্রতা ততই বাড়ে। ২৫০০ ওয়ার্ডের সৌর প্যানেল দিয়ে মিনিটে সাতশ লিটার পানি ওঠে। এমনিভাবে একদিনে ১০ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া যায়।

সোলেমানের হিসেবে এক ওয়াট সৌরকোষের দাম পড়ে ৫০ টাকা। সে হিসেবে ২৫০০ ওয়াটের দাম পড়ে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা।পানির পাম্প ও সোলারের অবকাঠামো তৈরিতে আরও ব্যয় ২৫ হাজার টাকা। একটি সৌর সেচযন্ত্র তৈরিতে খরচ পড়ে দেড় লাখ টাকা। আর তার উদ্ভাবিত প্রতিটি পাম্প বিক্রি করছেন দুই লাখ টাকায়। এজন্য প্যানেলের ওয়ারেন্টি ২০ বছর এবং পাম্পের ওয়ারেন্টি পাঁচ বছর। এ পর্যন্ত তিনি ১৪টি সেচযন্ত্র তৈরি করেছেন। এরমধ্যে নয়টি বিক্রি করেছেন। দুই প্রকারের সোলার পাম্প তৈরি করা হয়। একটি স্থায়ী। অন্যটি ভ্রাম্যমাণ বা মুভিং। সেটি বিভিন্ন জায়গায় নড়াচড়া করা যায় এবং যে কোনো বোরিংয়ে বসিয়ে পানি তোলা যায়।

স্থানীয় চাষীরা জানান, বিদ্যুৎচালিত নলকূপ দিয়ে জমিতে সেচ দিতে কার্ডে অগ্রিম টাকা রিচার্য করতে হয়। তাছাড়াও লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচ দিতে না পারলে বোরো ধানের ক্ষেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। ডিজেলচালিত স্যালো দিয়ে পানি সেচ দেওয়াও ঝামেলার। ডিজেল ছাড়া মেশিন চলে না এবং পানিও ওঠে না। একমাত্র সোলার পাম্পই ব্যতিক্রম। সোলার পাম্প থাকলে পানি তুলতে এক টাকাও লাগে না।

সোলেমান আলী জানান,একটি বরেন্দ্র গভীর নলকূপ দিয়ে ৪০ একরের বেশি জমিতে সেচ দেওয়া যায় না। অথচ তিনি চারটি সৌরপাম্প দিয়ে ৫০ একর জমিতে সেচ দিয়েছেন। কাজেই সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি সারা দেশের বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ সূর্যের আলো দিয়ে চালিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চান।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খন্দকার মো. মাওদুদুল ইসলাম জানান,মোলানী গ্রামের সোলেমান আলী নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে সোলার পাম্প তৈরি করেছেন। ২৫০০ ওয়াটের চারটি প্যানেল বসিয়ে তিনি ৫০ একর জমিতে সেচ দিচ্ছেন। তার উদ্ভাবিত সোলার পাম্প ভর্তুকি মূল্যে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে সেচ কাজে উৎপাদন ব্যয় অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে কৃষকেরা উপকৃত হত এবং দেশে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের সাশ্রয় ঘটনো সম্ভব হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/প্রতিনিধি/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :