জঙ্গিবাদের উত্থান: শেষ কোথায়?

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৭, ১৩:১৪

সাকিব আল মামুন

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। জনমনে আতঙ্কের, ভয়ের এবং অনভিপ্রেত অবস্থার জন্য যা তৈরি হয়েছে, এটি নিয়ন্ত্রণ করা বা জনমনে শান্তি ফিরিয়ে আনা কষ্টকর হয়ে উঠবে। সারা পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধের ভয়াবহতা, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাতাংক, শিয়া সুন্নির মতবিরোধ আজ চরম আকার ধারণ করছে। বিশ্ববাসী দেখছে চরম হতাশা।

জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা, আমেরিকা, রাশিয়া সহ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের একগুঁয়েমি, অস্ত্রের ঝনঝনানি আর শক্তি প্রয়োগের প্রতিযোগিতা পৃথিবীর জন্য অশান্তির বার্তা নিয়ে আসছে, যার প্রভাব দরিদ্র ও উন্নয়নশীল বাংলাদেশেও আছড়ে পড়ছে।

আইএস, জেএমবি, হুজির মত চরমপন্থি সংগঠন বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কারণ আজ। সেপ্টেম্বর ২০১৫ সাল থেকে মার্চ ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৯০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।  নিরীহ সাধারণ নাগরিক এই অশান্তি কখনোই আশা করেনা অথচ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েই চলছে। 

বাংলাদেশে জঙ্গি হামলায় পুরুষদের সাথে সাথে নারী জঙ্গির অংশগ্রহণ বাড়ছে। সীতাকুণ্ডের আত্মঘাতী হামলা নারী জঙ্গির অংশগ্রহণের প্রমাণ বহন করে। ইতোপূর্বে যেসব হামলা বাংলাদেশে হয়েছে তার অনেকগুলোই আইএস দায় স্বীকার করেছে। অথচ সরকারের কতিপয় মন্ত্রী বলছে এদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই।

ঢাকার হলি আর্টিজান, কল্যাণপুর(ঢাকা), গাজীপুরের পাতারটেক, ঢাকার আশকোনা, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড আর সর্বশেষ ঢাকার RAB ব্যারাকে আত্মঘাতী বোমা হামলা, যার অনেকগুলোর দায় স্বীকার করছে আইএস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যারা মারা যাচ্ছে তারা কোন বিদেশি নাগরিক নয়। এদেশেরই মাটিতে বেড়ে উঠা নাগরিক। প্রশ্ন হলো,  কেন তারা জঙ্গি সংগঠনে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করছে?

ইরাক ও সিরিয়ার ভূখণ্ডে জন্ম নেয়া আইএস বাংলাদেশে কী চায়? ধর্মীয় গোঁড়ামি আর রাজনৈতিক অপরিপক্বতা মধ্যপ্রাচ্যের সংকট তৈরি করছে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের কী ক্ষতি করছে? কেন এদেশের নাগরিকরা আইএসের মত কুখ্যাত বর্বর শ্রেণীর সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে? দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা হয়তো অর্থের প্রলোভনে কিংবা অন্ধ ধর্মবিশ্বাসের কারণে নিজকে বিলিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানেরা কেন জড়িয়ে পড়ছে? এ সকল প্রশ্নের উত্তর হয়তো কোনদিন প্রকাশ হবেনা, তবুও কি হামলা বন্ধ হবে? গত নয় মাসে সাতটি অভিযানে অন্তত ৩২ জন জঙ্গি মারা যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি কমসংখ্যক নয়।  আমরা ৩২ জনের মৃত্যুর খবর শুনেছি; আরও কত ৩২জন লুকিয়ে আছে এ ভূখণ্ডে তার কী হিসেব আছে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের জনগণ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে  অংশগ্রহণের মাধ্যমে লাল সবুজের পতাকাসহ একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন করে। স্বাধীনতার মাসে লাখো শহিদের আত্মত্যাগ আমাদের চেতনাকে জাগ্রত করে। অথচ, নব্য জঙ্গিবাদ আর আইএসের আক্রমণ আমাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কট, রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওলিয়াত্ব, নাগরিকদের মাঝে সরকারের দূরত্ব তৈরি করছে। আর এরই সাথে যুক্ত হচ্ছে অপ্রত্যাশিত জঙ্গি আক্রমণ।  যার ফলশ্রুতিতে বৈদেশিক বাণিজ্য,  বিনিয়োগ সহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। 

বাঙালির আত্মত্যাগ, মুক্তি সংগ্রাম,  আর রাজনৈতিক সচেতনাই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়প্রত্যয়ী রাজনৈতিক নেতৃত্ব একটি দরিদ্র আর অশিক্ষিত জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিল। আর আমরা পেয়েছি স্বাধীন ভূখণ্ড। আধুনিক তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। নোবেলবিজয়ী ড.ইউনুছ,  স্যর ফজলে হাসান আবেদ,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাড়া জাগানো বিস্ময় বালক আইনস্টাইন খ্যাত সুবর্ণ আইজ্যাক বারী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়প্রত্যয়ী নেতৃত্ব বাংলাদেশের নামকে রঙিন করে তুলছে।

ধর্মের নামে অধর্মের কাজ! সর্গ সুখের আশায় কিছু বিপথগামী তরুণ তরুণী জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গি কার্যক্রমে। পারিবারিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় অনুশাসনের অপব্যাখ্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর্থ-সামাজিক কারণে জঙ্গি হামলা বেড়েই চলছে। কোথায় এর শেষ পরিণতি?

লেখক: আইন বিভাগ তৃতীয় ব্যাচ, জবি।