যুদ্ধাপরাধ: জামায়াত নেতা খালেকসহ চারজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৭, ১৪:০৯ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭, ১৫:৩৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল খালেক মণ্ডলসহ চারজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউশন। অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে আগামী ২১ এপ্রিল আদেশ দিবেন ট্রাইব্যুনাল।

বিচারপতি আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সোমবার এই আদেশ দেন।

আদালতে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর শাহীদুর রহমান, প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর জাহিদ হোসেন প্রমুখ। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

মামলার চার আসামির মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর গ্রামের খালেক মণ্ডল কারাগারে আছেন। পলাতক রয়েছেন দুইজন। তারা হলেন- একই উপজেলার দক্ষিণ পলাশপোল গ্রামের খান রোকনুজ্জামান ও বৈকাবি গ্রামের জহিরুল ইসলাম ওরফে টেক্কা খান। এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে আছেন বুলারআটি গ্রামের এম আব্দুল্লাহ আল বাকি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি আব্দুল খালেক মন্ডলসহ চারজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়।

তদন্ত সংস্থা জানায়, ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট মামলার তদন্ত শুরু হয়। শেষ হয় ৫ ফেব্রুয়ারি। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৬০ জনকে।

আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

অভিযোগ-১: ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকাল আটটার দিকে বুধহাটা খেয়াঘাটে বেতনা নদীর পাড়ে আফতাবউদ্দিন ও সিরাজুল ইসলামকে রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সহযোগীরা গুলি করে  হত্যা করে। এছাড়া খলিলুর রহমান, মো. ইমাম বারী,  মো. মুজিবর রহমান ও ইমদাদুল হককে রাজাকার সদর দপ্তর ও নির্যাতন কেন্দ্র ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করে।

অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের ১ ভাদ্র ভিকটিম কোমরউদ্দিন ঢালীকে তৎকালীন সাতক্ষীরা মহাকুমার রাজাকার কমান্ডার এম আব্দুল্লাহ আল বাকী, খান রোকনুজ্জামান ১০/১২ জন রাজাকার তার বাড়ী থেকে ধরে দঁড়ি দিয়ে বেধে ধুলিহর বাজার থেকে সাতক্ষীরা জেলার দিকে নিয়ে যায়। পরে তাদের মৃতদেহ বেতনা নদীর পাড়ে পাওয়া যায়।

অভিযোগ-৩:  ১৯৭১ সালের ১ ভাদ্র বেলা তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার দিকে রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল বাকী, রোকনুজ্জামান খানসহ চার থেকে পাঁচজন মিলে সবদার আলী সরদারকে চোখ বেঁধে পিকআপে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ-৪: ভিকটিম মৃত সোহেল উদ্দিন সানা বড় ছেলে আব্দুল জলিল সানাকে সাথে নিয়ে একই তারিখে বুধহাটা বাজার অতিক্রম করার সময় রাজাকার কমান্ডার মৃত ইছাহাক ও তার সঙ্গীয় রাজাকারদের হাতে আটক হয়। পরে তাকে ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে সোহেল সানার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ-৫: ১৯৭১ সালে আষাঢ় মাসের ৭ তারিখ বেলা সাতটার দিকে ভিকটিম আবুল হোসেন ও তার ভাই গোলাম হোসেন তাদের বাড়ির দক্ষিণ পাশে হালচাষ করছিলেন। গোলাম হোসেন নয়টার দিকে বাড়িতে নাস্তা খেতে গেলে জহিরুল ইসলামসহ ১০ থেকে ১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে আব্দুল খালেক মন্ডল আবুল হোসেনকে জমি থেকে তুলে নিয়ে পেছনের পাটক্ষেতে গুলি করে হত্যা করে।

অভিযোগ-৬: ১৯৭১ সালের ২ ভাদ্র  সকাল নয়টার দিকে ভিকটিম মো. বছির আহমেদ ডিফেন্সে ডিউটিরত বাশদহ বাজারের ওয়াপদার মোড় হতে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে ও তার বুড়ো আঙ্গুলের রগ কাটিয়ে দেয়।

অভিযোগ-৭: ১৯৭১ সালের জৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বেলা ১০টার দিকে আসামি আব্দুল খালেক মন্ডল একদল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও আসামি রাজাকার কমান্ডার জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান কাথন্ডা প্রাইমারি স্কুলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ডেকে মিটিং করিয়া বলেন যারা আওয়ামী লীগ করে, যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা কাফের।

এরপর তারা কাথন্ডা ও বৈকারী গ্রামের আওয়ামী লীগের সমর্থক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া লোকজনের বাড়িঘরের মালামাল লুট করে ও আগুন দিয়া পুড়ে দেয়। সেই সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দুই সদস্য মৃত গোলাম রহমানের স্ত্রী আমিরুনকে তার বাড়ির রান্নাঘরের পেছনে ধর্ষণ করে। এ ছাড়া বৈকারী গ্রামের ছফুরা খাতুনকে মৃত শরীয়তউল্লাহর বাড়িতে নিয়ে চার পাকিস্তানী সৈন্য ধর্ষণ করে। 

(ঢাকাটাইমস/২০ মার্চ/এমএবি)