জঙ্গি মোকাবেলা না হলে বাংলাদেশ হবে আফগানিস্তান: ফখরুল

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৭, ১৪:১৪ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭, ২২:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সরকার জঙ্গিবাদ নিয়ে ভয়ংকর খেলায় মেতেছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না পারলে বাংলাদেশ আফগানিস্তান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সরকার জঙ্গিবাদের প্রকৃত রহস্য উম্মোচনে আন্তরিক নয়। তারা জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা এই অভিযোগ করেছেন। ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ জিয়ার ভূমিকা ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে বিএনপি জোটের শরিক ন্যাশনাল পিপপলস পার্টি ( এনপিপি) এর আয়োজন করে।

বিএনপি সাম্প্রতিক জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কট্টর সমালোচক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন তাদেরকে হত্যা করছে, সে প্রশ্ন তুলছেন খোদ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আর সম্প্রতি জঙ্গিবিরোধী বেশ কিছু অভিযান এবং র্যাছবের নির্মাণাধীন সদরদপ্তরে আত্মঘাতী হামলার পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এসব ঘটনা নিয়ে তাদের মনে সন্দেহ আছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে এসব ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই তার ধারণা।

মির্জা ফখরুল বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের সঙ্গে জঙ্গি সন্দেহে যারা বন্ধুকযুদ্ধে যারা মারা গেছে তাদের বিষয়ে অভিভাবকদের বক্তব্য ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে কার বক্তব্য সঠিক, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ব্যাখা চান ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আশকোনায় র্যা বের ব্যারাকে আত্মঘাতি হামলার এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে হানিফ নামের একজনকে আটক করা হয়। পরবর্তিতে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার মৃত্য ঘটে। অথচ তার পরিবার বলছে ২৭ ফেব্রুয়ারি হানিফকে র্যাতব ( র্যা পিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান) তাকে আটক করে। স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দাবি করছি। র্যা বের দাবি সত্য, নাকি পরিবারের দাবি সত্য। পারিবারের দাবি যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে আমরা কোনো দেশে বাস করছি। সরকারের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া এবং সঠিক সত্য জাতির কাছে তুলে ধরা। তাহলে এটা কি? আমি দাবি করছি- সত্য উদঘাটন করতে সুষ্ঠু তদন্ত করুন।’

ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘শুধু এটাই নয়, অসংখ্য এমন ঘটনা ঘটছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে এক কথা পরিবার বলছে আরেক কথা। তিন মাস আগে তুলে নেওয়া হয়েছে, ছয় মাস আছে তুলে নেওয়া হয়েছে। যদি পরিবারের দাবি সঠিক হয় তাহলে কি এক কথা মনে করতে পারি । এটা অত্যন্ত গভির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই লোকগুলো তুলে নিয়ে পরবর্তি সময়ে তাদেরকে জঙ্গি বানিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।  জঙ্গিবাদ কে প্রকাশ করার জন্য তাদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘ আমরা আশঙ্কা করছি, যে কোনো সময় কাউকে তুলে নিয়ে যাবে এবং জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত অভিযোগ দিয়ে তাকে হত্যা করবে।’

এরই মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশ একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলেও দাবি করে বিএনপি মহাসচিব এই পরিস্থিতিতে সব দলের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানান।

বাংলাদেশে সরকার দেশের মধ্যে হিংসা ও বিভক্তি সৃষ্টি করছে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে না পারলে দেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে। ইতোমধ্যে  বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা শুরু হয়ে গেছে।আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে জঙ্গিবাদ একটি ভয়ংকর সমস্যা। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এর সমাধান না করি। তাহলে বাংলাদেশেকে কোন দিকে যাবে, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া মত ভাগ্য বরণ করতে হয় কিনা জানি না।’

প্রায় শতভাগ মুসলিম অধ্যুষিত আফগানিস্তান জঙ্গি তৎপরতার কারণে সারা বিশ্বেই পরিচিত। বিবাদমান গোষ্ঠীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আর বিভেদকে ব্যবহার করে বৈধ সরকারকে উৎখাত করে সেখানে জঙ্গি সংগঠন তালেবান মাঝে রাষ্ট্রক্ষমতাও দখল করে ফেলে তারা। পরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তালেবানদের উৎখাত করা গেলেও এখনও সে দেশে তাদের তৎপরতা রয়েছে। সেই সঙ্গে আইএস, হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ নানা জঙ্গিগোষ্ঠী এক সময়ের সমৃদ্ধ দেশটির জনজীবন বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। সীমিত হয়ে পড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। আগামী ৭ থেকে ১১ এপ্রিল এই সফর হবে। এই সফরে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ নিরাপত্তা বিষয়ে চুক্তি করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। তাদের দাবি, এই চুক্তি হলে বাংলাদেশের নিরাপত্তাই হুমকির মুখে পড়বে। নষ্ট হবে দেশের সার্বভৌমত্ব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরাও চাই প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর করুন। কিন্তু ভারত সফরে তিস্তা পানি চুক্তি, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি আলোচনার সবার আগে হতে হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যান্য বিষয়গুলোর সমাধান করতে হবে। কিন্তু কোনো মতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে নয়।’

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। কারণ দেশের মানুষ মনে একমাত্র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিরাজমান সংকট নিরসণ সম্ভব। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন চায়। বিগত দিনের অভিজ্ঞাতায় বলতে পারি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।  তাই একটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার চাই।’

জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আওয়ামী লীগের দূর্বলতার রয়েছে। তাই তারা ইতিহাস বিকৃত করছে। স্বাধীনতার ষোঘাণা জিয়াউর রহমান দিয়েছেন এই নিয়ে বির্তক করছে আওয়ামী লীগ।’

এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী,২০ দলীয় জোটের মোস্তফা জামাল হায়দার, শফিউল আলম প্রধান, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, আজহারুল ইসলাম, সাঈদ আহমেদ,সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/২০ মার্চ/বিইউ/ডব্লিউবি