রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে আপিলে পক্ষভুক্ত হতে চান তৈমুরসহ পাঁচ জন

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৭, ১৪:৩৪ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭, ১৫:২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানিতে পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছেন বিএনপি নেতাসহ পাঁচ জন। এই আবেদনটি আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তারা এ আবেদন করেন। ওইদিনই এই আবেদনটির ওপর চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালতে শুনানি হয়। আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে করা মূল আপিলের সঙ্গে শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।

এই পাঁচজন হলেন বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার, অনলাইন বিশ্ববার্তার সম্পাদক আরিফুর রহমান, প্রজেক্ট বিল্ডিং লিমিটেডের পরিচালক শওকত হোসেন খান, দেশ ইউনিভার্সাল লিমিটেডের উপদেষ্টা আবু ইউসুফ জোবায়ের উল্লাহ ও আল মুথ মাইনাহ মা ও শিশু হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল আলী।

আবেদনের এই পাঁচ ব্যক্তি বলেন, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলাম। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে রিটকারী দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চান।

গতকাল ১৯ মার্চ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য নির্ধারিত থাকলেও কার্যতালিকায় না আসায় শুনানি হয়নি।

রিটকারী আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী জানান, ১৯ মার্চ শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ ছিল। তবে কার্যতালিকায় না আসায় শুনানি হয়নি। বিষয়টি শুনানির জন্য যে কোনো দিন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসতে পারে।

২০১৫ সালের ১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী আরেকটি সম্পূরক আবেদন করেন। ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ রিট সরাসরি খারিজ করে দেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর খারিজের রায়টির পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বছরের ১৬ নভেম্বর চেম্বার বিচারপতি এ বিষয়ে আপিল শুনানির জন্য ১৯ মার্চ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।

১৯৭২ সালের বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিষয়টি ছিল না। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনীতে এটি যুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর সঙ্গে ২ (ক) দফা যুক্ত হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’।

২০১১ সালের ২৫ জুন আনা পঞ্চদশ সংশোধনীতে ওই অনুচ্ছেদ আবারও সংশোধন করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।’

২৮ বছর আগে করা আরেক রিট খারিজ হয়েছে গত মার্চে

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে ১৯৮৮ সালে প্রথমে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’  সদস্য ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি। এদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

আবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে নানা ধর্মবিশ্বাসের মানুষ বাস করে। এটি সংবিধানের মূল স্তম্ভে বলা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রধর্ম করে অন্যান্য ধর্মকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অভিন্ন জাতীয় চরিত্রের প্রতি ধ্বংসাত্মক।’

২৩ বছর পর রিট আবেদনকারী পক্ষ ২০১১ সালের ৮ জুন একটি সম্পূরক আবেদন করে। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সেদিনই বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের তৎকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চ রুল দেয়।

সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে ২ (ক) অন্তর্ভুক্তি কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

২৮ বছর পর ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ এই আবেদনটি খারিজ করে দেয় বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ। তবে সে আদেশের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হয়নি এখনও।

পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে সম্পূরক আবেদন

২০১১ সালের ২৫ জুন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের ওই ২ অনুচ্ছেদ আবারও সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।’

এরপর রিট আবেদনকারী পক্ষ পঞ্চদশ সংশোধনীতে থাকা ওই বিধান চ্যালেঞ্জ করে সম্পূরক আবেদন করে।

(ঢাকাটাইমস/২০ মার্চ/এমএবি/ডব্লিউবি)