ব্রহ্মপুত্র নদ দখল করে চাষাবাদ, দোকান-বাড়ি

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৭, ১৯:১৯ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭, ২০:২০

মনোনেশ দাস, ময়মনসিংহ থেকে

ক্রমেই দখল হয়ে যাচ্ছে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদ। শহর রক্ষা বাঁধ ঘেষে গড়ে তোলা হচ্ছে দোকান-পাট, ঘর-বাড়ি, চাষের জমি, বালু মহাল।

এই জমি ভাড়া দিয়ে টাকা কামাচ্ছেন এক শ্রেণির নেতা। ব্রহ্মপুত্র তীরে অবৈধ এসব কার্যক্রম চলছে অনেক দিন ধরেই। বাধা দেয়ার নেই কেউ। চরজুড়ে ক্রমাগত চলছে বালি তোলার কাজ। আর তাতেই নদ ক্রমে মরে যাচ্ছে। চর দখল হচ্ছে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। গত কয়েক বছরে তা আরও বেড়েছে।

সরকারি কিংবা বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সক্রিয়ভাবে নদের জমি ভাড়ার কারবারের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। দলের মধ্যেও তা নিয়ে আছে ক্ষোভ। দলের স্থানীয় নেতাদের একটি অংশ তা নিয়ে জেলা প্রশাসন অফিসে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছে। ভূমি দপ্তরের ভূমিকা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন।

এ ব্যাপারে কথা হয় ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুস সালাম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি জেনেছেন এবং আগামীকাল মঙ্গলবারই অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে নামবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাধিক নেতা নদ দখল করে ভাড়া এবং বালির ব্যবসার সুবাদে গাড়ি কিনেছেন। বাড়ি করেছেন। বিপিন পার্ক সংলগ্ন নদের পাশে কলোনি তৈরি হয়ে গেছে অনেক আগেই। সেখানে বিদ্যুৎ, রাস্তাও তৈরি হয়েছে। এটি দেখে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে খাসজমি থেকে নদের চর বেদখলের। অভিযোগ, এই চক্রে সক্রিয় এলাকার একাংশ ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

অনেকটা এলাকায় বাঁশের খুঁটি পুঁতে ঘিরে দেয়া হচ্ছে। কিছু দিন বাদেই সেই ঘেরা জায়গার বিভিন্ন প্রান্তে দরমা বেড়ার ঘর গজিয়ে উঠছে। রাতের অন্ধকারে সেই ঘরের মেঝেতে কংক্রিটের ঢালাইও হচ্ছে।

এলাকাবাসীর দাবি, প্রথমে এলাকার ওই নেতারা বাঁশের খুঁটি পুঁতে জমি ঘিরে দেন। তার পরে মোটা টাকার বিনিময়ে ঘেরা জায়গায় ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট তৈরির অনুমতি দেন। নদের এই সরকারি খস জমির ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট থেকে ‘মাসিক বন্দোবস্ত’ করতে হয় বলে শোনা যায়। প্রথমে জমির জন্য মোটা টাকা সেলামি দিতে হয়, পরে মাসে মাসে জমির ভাড়া গুণতে হয়।

সূত্রের খবর, পনেরো ফুট বাই বিশ ফুট জমির জন্য প্রথমে এককালীন অন্তত ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। প্রতি মাসে দিতে হয় সর্বনিম্ন হাজার টাকা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাটগুদাম ব্রিজ থেকে বিপিন পার্ক পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র শহর রক্ষা বাঁধের দুই পাশে সরকারি জমি বেদখল করে পাঁচ শতাধিক ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট তৈরি হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি মাসেই জমির ভাড়া পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ওঠে। এককালীন হিসেব যোগ করলে কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

নদের বুক থেকে বালি উত্তোলন, নদের অববাহিকাজুড়ে ভূমিক্ষয় বেড়ে যাওয়ার কারণে নদ অগভীর হয়ে পড়ছে। ফলে, নদের মৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে।

এদিকে নদের নাব্য দিন দিন হ্রাস পেলেও হয় না ড্রেজিং। শহর রক্ষার বাঁধটি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দরকার প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা। এমটাই মনে করে বিশেষজ্ঞ মহল।

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)