গণপরিবহনের নিয়ন্ত্রক কে-১

ঢাকায় ‘সিটিং’ বাসের ‘চিটিংবাজি’

তায়েব মিল্লাত হোসেন ও এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৭, ০৯:৩২ | প্রকাশিত : ২১ মার্চ ২০১৭, ০৭:৫৯

রাজধানীতে পরিবহনের শৃঙ্খলা এবং ভাড়ায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ আছে―এমন প্রমাণ নেই। বাস থেকে অটোরিকশা সবকিছুতে মালিকপক্ষের ইচ্ছাই শেষ কথা। এতে করে ঠকতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হলো এখানে।

রুট আছে, নেই লোকাল বাস

‘বন্ধু তুই লোকাল বাস রে/বন্ধু তুই লোকাল বাস!/আদর কইরা ঘরে তুলস/ঘাড় ধইরা নামাস’- হালে সংগীতশিল্পী মমতাজের ‘লোকাল বাস’ শীর্ষক এ গান খুব জনপ্রিয় হয়েছে। লোকাল বাসে যারা চড়েছেন, তাদের কমবেশি এ অভিজ্ঞতা আছে। তারপরও সীমিত আয়ের মানুষজন ঘুরেফিরে লোকাল বাসের খোঁজ করেন। কিন্তু রাজধানী থেকে এ বাস হারিয়ে যেতে বসেছে।

ঢাকার মিরপুরে রুটে এ ধরনের বাস পাওয়া এখন কঠিন। গাবতলী, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, নতুনবাজার, রামপুরা, সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী এলাকায় যেসব বাস লোকাল হিসেবে জনপ্রিয় ছিল, হালে সেগুলো নাম অদল-বদল করে সিটিং নামে চলছে।

এতে লোকাল বাসের টাকার হিসাবে যাদের মাসের যাতায়াত খরচের খাত, তারা পড়েছেন বিপাকে। আবার যারা একটু আয়েশ করে যেতে সিটিং পেয়ে খুশি তারাও এগুলোর সেবা নিয়ে নাখোশ। কারণ সিটিং নামধারী বাসগুলোর কর্মীরাও নরম সুরে তুলে, সেই ঘাড় ধরেই নামায়।

বিপাকে স্বল্পদূরত্বের যাত্রীরা

গুলিস্তান থেকে টঙ্গীর দিকে যাচ্ছে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস। এটি কিছু দূর যাওয়ার পর বাস কন্ডাক্টরের সঙ্গে যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এক যাত্রী বলে, ‘ওই মিয়া বেশি ভাড়া রাখছ, তবে দাঁড় করাইয়া লোক নিছো ক্যান?’ কিন্তু বাসকর্মীর এক কথা, ‘যে খানেই নামেন ভাড়া ২০ টাকা দিতে হইব।’ ‘কেন এত বেশি ভাড়া দিব?’ যাত্রীর এ অনুযোগে কন্ডাক্টরের উচ্চকণ্ঠ, ‘সিটিং ভাড়া বেশিই দিতে হইব।’

একই বাসে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তার অভিযোগ, ‘সুপ্রভাত পরিবহন সিটিং এর নামে প্রতিদিন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। তারা সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করছে ২০ টাকা। যেখানেই নামেন তাদের নির্ধারিত গন্তব্যের ভাড়া দিতে হবে। যাত্রীরা এদের কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। কিছু বললেই রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নামিয়ে দেয়। দেখার যেন কেউ নেই।’

শুধু সুপ্রভাতেই নয় রাজধানীতে চলাচলকারী অনেক বাসের চিত্র এখন এমন। যাত্রীদের অভিযোগ সিটিং সার্ভিসের নামে চলছে ‘চিটিংবাজি’। অথচ বিআরটিএ বলছে, রাজধানীতে চলাচলকারী সব বাসই লোকাল বাস। সিটিং সার্ভিস বলে কোনো গণপরিবহন নেই। অধিকাংশ বাস সরকারি নিয়ম ভেঙে রাতারাতি সিটিং সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া মানছে না কোনো গণপরিবহনই।

যাত্রী যেখানেই নামুক, সর্বশেষ গন্তব্যের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, যা ন্যায্য ভাড়ার চার থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত। এ কারণে বেশি বিপাকে আছে স্বল্পদূরত্বের যাত্রীরা। তাদের এখন ৫ টাকার জায়গায় গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা। নয়তো ৭ টাকার জায়গায় ২০ থেকে ৩০ টাকা।

রাজধানীতে চলাচলকারী ‘কাউন্টার সার্ভিস’, ‘সিটিং সার্ভিস’ ও ‘কম স্টপেজ’ নামের বাসগুলো সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া মানছে না। একই দোষে দুষ্ট খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে থাকা বাসও। এক্ষেত্রে যাত্রীদের অভিযোগের আঙুল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে চলাচলকারী বাস নিয়ে।

বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাজধানী ও এর পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলায় চলাচলকারী সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়ায় সরকার। বাসে ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা। মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা। বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও মিনিবাসে ৫ টাকা নির্ধারণ করে বিআরটিএ। প্রায় সব বাসই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। পরিবহন ব্যবসায়ীরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, প্রশাসনের নমনীয়তার সুযোগ নিচ্ছেন তারা। তবে আইনকানুনও বর্তমান সময়ের উপযোগী নয় বলে অভিযোগ তাদের।

অনিয়ম ঠেকাতে অবশ্য মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে মাঠে বিআরটিএ। এতে কিছু জরিমানা দিয়েই পার পান বাসমালিকরা। তারপর যাচ্ছেতাই চলে তারা। খোদ সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও পরিবহন খাতের এই নৈরাজ্য নিয়ে নাখোশ। সম্প্রতি রাজধানীর সায়েদাবাদে একটি পরিবহনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যাত্রীসেবায় বিশ্বাস হারানো যাত্রীদের টানতে এখন বিভিন্ন পরিবহন প্রতারণা করছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে দেখেছি গাড়ির গায়ে লেখা সিটিং সার্ভিস, অথচ ভেতরে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। এটি সিটিং নয় একটা চিটিং সার্ভিস।’

তিনি আরো বলেন, “এখন কেউ বিশ্বাস করে না বলে লিখে দিয়েছে ‘আল্লাহর কসম সিটিং সার্ভিস!’ আরেকটা বাস দেখলাম মুন্সিগঞ্জের পথে, লিখেছে ‘আল্লাহর কসম ভিআইপি সার্ভিস’!” দেশের গণপরিবহনের এ অব্যবস্থাপনা দূর করতে পরিবহন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।

বিআরটিএর চোখের সামনেই লোকাল বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য, সিটিং সার্ভিসের নামে রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করছে। বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হলেও যাত্রীসেবার মান বাড়েনি। বেশিরভাগ সিটিং সার্ভিস বাসে ফ্যানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এক সিট থেকে অন্য সিটের দূরত্ব এতই কম যে বসতে গেলে পা লেগে যায়।

বাসগুলোতে সিটিং বা কম স্টপেজ লেখা থাকলেও থামানো হয় সবখানেই, অনেক সময় গাদাগাদি করেও যাত্রী নিতে দেখা গেছে অনেক গণপরিবহনে। বেশির ভাগ গাড়ির ফিটনেস নেই, জানালা ও আসন ভাঙাচোরা, অপরিচ্ছন্ন আসন, লক্কড়ঝক্কড় বাস, ইঞ্জিনের ওপর বসানো হয় যাত্রী। সব মিলিয়ে মানসম্মত গণপরিবহন একেবারে নেই বললেই চলে রাজধানীতে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস রাস্তায় নামানোর পর একবারও সিটের কাপড় পরিবর্তন হয়নি। যা ছিল তাই আছে। বিআরটিএর কোনো অনুমোদন ছাড়াই বেশির ভাগ বাস সিটিং সার্ভিস হয়ে গেছে রাতারাতি। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাসকর্মীদের বাদানুবাদ চলছে প্রতিদিনই।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি এই সময়কে বলেন, রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিস বলতে কোনো সার্ভিস নেই। গাড়ির আসন বিবেচনা করে বিআরটিএ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। এ হিসেবে কোনো পরিবহনেই দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার কথা নয়। কিন্তু একদিকে বাস কোম্পানিগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছে অন্যদিকে সিটিংয়ের নামে বাড়তি ভাড়াও নিচ্ছে। এখন প্রকাশ্যে স্টিকার লাগিয়ে সিটিং সার্ভিস চলছে। এসব অবৈধ কোম্পানিকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘রাজধানীতে চলাচলকারী গণপরিবহনের রুট পারমিটে সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই। সিটিং সার্ভিস হিসেবে বিআরটিএ কোনো বাসের অনুমোদন দেয় না। তবুও অনেকে সিটিং হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছেন, এটা ঠিক নয়। আর এ কারণে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও আসছে। বাড়তি ভাড়া যাতে না নেওয়া হয় তার জন্য অভিযুক্তদের সমিতির পক্ষ থেকে সতর্ক করা হবে।’

বাড়তি ভাড়ার চালচিত্র

যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর-১০ রুটে হিমাচল পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৩০ টাকা। গুলিস্তান থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত হিমাচল ভাড়া নিচ্ছে ৩০ টাকা। গুলিস্তান থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৭ টাকা হলেও নেওয়া হচ্ছে ২৩ টাকা। অথচ দূরত্ব হিসাবে গুলিস্তান থেকে মিরপুর-১০ নম্বরের ভাড়া সর্বোচ্চ ২৩ টাকা। ফার্মগেট থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার দূরত্বে স্বাধীন পরিবহন ভাড়া নিচ্ছে ১০০ টাকা। অথচ সরকার নির্ধারিত এ দূরত্বে ভাড়া ৭৪ টাকা।

মতিঝিল-মোহাম্মদপুর রুটে এটিসিএল পরিবহনে প্রেস ক্লাব থেকে সায়েন্স ল্যাব ভাড়া নেওয়া হয় ১৫ টাকা। ৩.৯ কিলোমিটার দূরত্বে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৭ টাকা। একই অবস্থা এ রুটে চলাচলকারী রাজা, সিটি ও শতাব্দী পরিবহনের বাসে। তরঙ্গ প্লাস বাসে মোহাম্মদপুর থেকে রামপুরার ভাড়া ২৫ টাকা। আবার মৎস্য ভবন ভবন পর্যন্তও ভাড়া ২৫ টাকা। যাত্রাবাড়ীগামী বাসে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে মিরপুর ১০ নম্বর মাত্র দুই কিলোমিটার দূরত্বে ভাড়া ২০ টাকা।

আবার মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজারের ভাড়াও ২০ টাকা গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। গুলিস্তান থেকে আব্দুল্লাহপুরগামী বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিবহনে (৩ নম্বর বাস) আগে শাহবাগ থেকে মহাখালী যেতে ছয় টাকা ভাড়া দিতে হতো। তবে নতুন ভাড়া কার্যকরের দিন থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা আদায় করছে তারা। মতিঝিল থেকে সাভার রুটে সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলছে ওয়েলকাম পরিবহন। শাহবাগ থেকে গাবতলী পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। মতিঝিল থেকে চলা ৭১ পরিবহন, বাহান্নসহ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির বিরুদ্ধেও সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুরু থেকেই লাব্বায়েক পরিবহন যাত্রীদের পকেট কাটছে বলে অভিযোগ। যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী ও সাভার পর্যন্ত এটি চলাচল করে। তাদেরও সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। লাব্বায়েক পরিবহনের চালক ইব্রাহিমের দাবি, ‘বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের সার্ভিস ভালো। তাই যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে কোনো ক্ষোভ নেই।’

ভাড়া নৈরাজ্যের আরেকটি পরিবহন এভারেস্ট পরিবহন। সংসদ ভবনের সামনে থেকে বাংলামটরে আসতে ভাড়া গুনতে হলো ২৫ টাকা। কারণ হিসেবে দেখাল ওয়ে বিলের গাড়ি যেখানেই নামেন ২৫ টাকাই দিতে হবে। এ গাড়িতেই দেখা হয়ে গেল গাড়ির মালিক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বললে তিনি এই সময়কে বলেন, ‘আমাদের সিটিংয়ের অনুমতি নাই। বিআরটিএ আমাদের সুযোগ দিচ্ছে, তাই বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি।’

বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে শাহবাগে ডিএমপির ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি এই সময়কে বলেন, ‘আমরা এখন ভাড়া নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনগণ এর সুফল পাবে।’

এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন, ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিং ও এনফোর্সমেন্ট) নাজমুল আহসান মজুমদার এই সময়কে বলেন, ‘রাজধানীতে গণপরিবহনে কোনো সিটিং সার্ভিসের অনুমোদন নেই। যারা সিটিং সার্ভিসের নামে অবৈধ কার্যবক্রম পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হচ্ছে।’

ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/জিএম/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :