ধানমন্ডিতে সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য ‘ভাত উৎসব’
সকাল থেকে কিছু খায়নি বজলু। খাবারের আশায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে ফাস্টফুডের দোকানের সামনে ঘুরঘুর করছে। যদি কেউ খাবারের উচ্ছিস্টাংশ ফেলে, তার দিকে চেয়ে আছে। কপাল খারাপ হলে যা হয় তাই হয়েছে তার। আজ কেউ কিছু ফেলছে না। ক্ষুধায় পিত্তি জ্বলে যাওয়ার দশা। এরমধ্যে কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া ছেলে এসে ক্ষুধার্থ বজলুকে ডেকে নিয়ে যায়। দুটি খাবারের বাটি ধরিয়ে দেয়। পাশেই কয়েকজন হ্যান্ডওয়াস দিয়ে তার হাত ধুইয়ে দেয়। চটজলদি সরোবরের বেধিতে বসে যায়। বক্সের ঢাকনা খুলতেই মাংসের মিষ্টি গন্ধে বজলুর মুখে হাসি ফুটে উঠে। চোখে তারার আলোর মতো চিকচিক করে ঝিলিক খেলে যায়। সাদা ভাত সাথে আলু ভর্তা, আর এত্তগুলো মাংস ভুনা। অন্য বক্সে ডাল ভুনা। বেশ তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে বজলু।
বজলুর মতো শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে আজ মঙ্গলবার দুপুরে খাবার তুলে দেয় তারুণ্য দ্য ইয়ুথ নামের একটি সেবামূলক সংগঠন। এই উৎসবের নাম দেয়া হয়েছে ‘ভাত উৎসব’।
রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে আয়োজিত উৎসবে যোগ দেয় সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র মানুষেরা। বিতরণ করা হয় ভাত, মাংস, ভর্তা, ডাল।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মেরাজ মাহফুজ, স্নাতক করছেন ঢাকা কলেজে। চার বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সাথে যোগ দিয়েছে একদল উদ্যোমী তরুণ। তারাও বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
মেরাজ মাহফুজ বলেন, আমরা হয়তো পুরো সমাজে হাসি ছড়িয়ে দিতে পারব না। তবে সমাজের একটি অংশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি। একটু একটু করে সবাই এমন প্রচেষ্টা চালালে হয়তো একদিন পুরো সমাজই হাসতে পারবে।
তারুণ্য দ্য ইয়ুথের উপদেষ্টা গণমাধ্যমকর্মী মাইদুর রহমান রুবেল বলেন, আমরা নিজেদের নিয়ে এতই ব্যস্ত যে আশপাশে কী হচ্ছে তার দিকে খেয়ালই থাকে না। ভালো কাজ করতে ভুলতে বসেছে দেশের মানুষ। আর যারা করতে চায় তাদের সামর্থ্য থাকে না। নিজেদের পয়সা খরচ করে কেউ করলে তারও নানা সমালোচনা করেন অনেকে। যার কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এই ধরনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। তারপরও আমরা চেষ্টা করি বছরের বিভিন্ন সময়ে কিছু সামজিক কাজ করার। মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতি আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা তো আছেই।
তরুণদের এমন আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও সমাজকর্মী আলী আসগর খান। তিনি বলেন, এমন আয়োজন এখন তেমন চোখে পড়ে না। যাদের সামর্থ্য আছে নানা প্রতিকূলতায় তারা হয়তো করতে পারে না। তবে তরুণদের বেশি বেশি উদ্যোগী হতে হবে। আর যাদের সামর্থ্য আছে তাদের দাঁড়াতে হবে তরুণদের পাশে। ভালো কাজ কমে গেলে সমাজে খারাপ কাজ বাড়বে এটাই তো স্বাভাবিক।
(ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/বিইউ/জেডএ)