দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে রাজধানীর গাছ

সৈয়দ অদিত ও নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৭, ০৯:৪৩ | প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০১৭, ০৮:১৫

অক্সিজেন দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচায় গাছ। যে গাছ মানুষের জীবন বাঁচায়, সেই গাছেই এখন মানুষের মৃত্যুঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ঢাকা শহরে ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াই মাঝেমধ্যে উপড়ে পড়ছে গাছ। এতে ঘটছে প্রাণহানি। সর্বশেষ গত রবিবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানসংলগ্ন সড়কে গাছচাপা পড়ে প্রাণ হারান এক ব্যক্তি।

রাজধানীর পথপাশের পুরনো ও বয়সী অনেক গাছ মানুষের চলাচলের নিরাপত্তার শঙ্কা হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব গাছের গুঁড়ির বেশির ভাগই ফাঁপা। চলতি পথে মানুষ ভয়ে থাকে কখন জানি মাথায় ভেঙে পড়ে গাছ! রাজধানীতে আগে এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু কাজটি করবে কে?

হেলেপড়া, উপচেপড়া, মরা গাছ কাটার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কিন্তু সেদিকে সিটি করপোরেশনের খেয়াল নেই বললেই চলে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছ শনাক্তে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব নেই দুই সিটি করপোরেশনের।

সকালে যখন অফিসগামী যানবাহনের স্রোত, ব্যস্ত চন্দ্রিমা উদ্যানসংলগ্ন সড়কে যানবাহনের ওপর হঠাৎ ভেঙে পড়ে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। এতে নিহত হন একজন মোটরসাইকেল আরোহী। আহত হন এক অটোরিকশার চালক। এর আগে গত ৫ মার্চ রাতে ঝড়-বৃষ্টিতে বিজয় সরণি সড়কের ওপর একটি গাছ ভেঙে পড়ে। এতে দীর্ঘ সময়ের জন্য যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। ঠিক এক বছর আগে গত বছরের মার্চে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গাছচাপায় মারা যান চিত্রশিল্পী, চলচ্চিত্রকার ও লেখক খালিদ মাহমুদ মিঠু। তখনো রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ গাছ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগের কথা জানা যায়নি।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, উদ্যান ও পার্কে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি মনে করা হয়। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য পর্যাপ্ত না হলেও অনেক গাছ চোখে পড়ে সড়কের ধারে। তবে বেশির ভাগ গাছই দুর্বল। এর মধ্যে আবার পুরনো ও বড় গাছগুলো রয়েছে ঝুঁকিতে। ঢাকার রাস্তা ও ফুটপাতের ধারে থাকা গাছগুলোর শেকড়ের সঙ্গে মাটির সংযোগ খুবই কম। ইট ও কংক্রিট দিয়ে ঘিরে গাছগুলো মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নের নামে হামেশাই কাটা পড়ছে গাছের শিকড়। সরে যাচ্ছে গাছের গোড়ার মাটি। দুর্বল হচ্ছে গাছের ভিত্তি। ঢাকায় এমন শত শত গাছ রয়েছে ভেঙে পড়ার অপেক্ষায়।

সাধারণত পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য একটি জনপদে জনসংখ্যার তিন গুণ গাছ অথবা মোট ভূমির ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আদর্শ ধরা হয়। বাংলাদেশে রয়েছে ১৬ শতাংশ। এই হিসাব থেকেই অনুমান করা যায়, ঢাকায় যতটুকু গাছপালা থাকার দরকার, বর্তমান অবস্থা তার ধারে-কাছেও নেই। এমনকি এই শহরে গাছের সঠিক সংখ্যাটা সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা সংস্থার জানা নেই। তবে অনুমান করা হয় রাজধানীতে গাছের সংখ্যা দুই-তিন লাখের বেশি হবে না। এর মধ্যে আবার রুগ্ন গাছের ছড়াছড়ি। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে প্রতি বছর যে গাছ লাগানো হয়, তা শহরের জন্য কতটা উপযোগী তা বিবেচনা করা হয় না। নেই কোনো নিতিমালাও।

ধানমন্ডির বাসিন্দা জব্বার বলেন, ঢাকায় যে গাছ লাগানো হচ্ছে সেটা অবশ্যই ঢাকার মাটির উপযোগী হতে হবে। গাছগুলোর সঠিক পরিচর্যা করতে হবে।

এই ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক আবদুল আজিজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের ইকোসিস্টেমের পরিবর্তন সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে আমি মনে করি। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, এই আবর্জনায় বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান বৃষ্টির পানির সঙ্গে গাছের শিকড়কে দুর্বল করে। ফলে পুরো গাছের শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। গাছের ডাল কাটার সময় সতর্ক হতে হবে, কারণ গাছের ডাল সঠিকভাবে না কাটলে পুরো গাছই অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসের আক্রমণ তো আছেই। তাই মরা কিংবা নুয়ে পড়া গাছ কেটে ফেলা উচিত।

কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের ক্ষেত্রে পরিবেশবাদীদের আন্দোলনকে বাধা হিসেবে দেখছে সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঝুঁকি আছে এমন গাছ কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হয়। মরা গাছ কাটতে গেলেও পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করেন। ফলে গাছ হেলে না পড়া পর্যন্ত কাটা সম্ভব হয় না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবদুল আজিজ বলেন, ‘মরা গাছ যদি ঝুঁকির কারণ হয়ে থাকে, অবশ্যই আপনি মানুষ বাঁচাবেন; গাছ নয়। তবে আমরা যদি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করি, তাহলে আমাদের গাছগুলোও বাঁচবে দীর্ঘদিন।’

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/এসও/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :