রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবগুলোতে সরঞ্জাম সঙ্কট

সালমান শাকিল, রাবি
 | প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০১৭, ১২:২৫
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গবেষণাগারগুলোতে নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। বরাদ্দ বেড়েছে তবে প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় সরঞ্জাম ক্রয় করতে পারছে না প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের যেতে হচ্ছে পাশের রুয়েটসহ বিভিন্ন স্থানে। যন্ত্রপাতি সঙ্কটে পূর্ণাঙ্গভাবে গবেষণা সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না গবেষকদের। এতে বছর বছর গবেষক বের হলেও সামগ্রিকভাবে কিছুটা হলেও কমে যাচ্ছে গবেষণার মান বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।

এভাবে যন্ত্রপাতির সমস্যায় বিশেষ করে সবসময় যাদের যন্ত্রনির্ভর থাকতে হয় যন্ত্রপাতি না থাকায় নিয়মিত হাতেকলমে হচ্ছে না কাজ। গবেষণার সকল ধাপ সম্পন্ন না করে গবেষণা শেষ করছেন অনেকে। এতে করে কিছুটা হলেও নিম্নমানের গবেষণার কথা জানাচ্ছেন এই গবেষকরা।

তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব গবেষণার জন্য একটা মারাত্মক সমস্যা। বিজ্ঞানের প্রত্যেকটি গবেষণার জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে করতে হয়। কাজগুলো অনেকটা সিরিজ পর্যায়ের।

রাবিতে মোট ২৬টি বিভাগে বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠদান করানো হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ বিভাগের আছে নিজস্ব গবেষণাগার আছে। তবে এগুলোতে পূর্ণাঙ্গ গবেষণার জন্য নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। শিক্ষকদের হিসাব মতে ২৫-৩০ ভাগ সরঞ্জাম আছে এ গবেষণাগারগুলোতে। কিছু বিভাগ নতুন হওয়ায় এখনও গবেষণাগার স্থাপন করা হয়নি। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে সামান্যসংখ্যক বিভাগের ল্যাবগুলো উন্নত।

যন্ত্রপাতি না থাকায় সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন না বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে যাচ্ছে। গবেষণার জন্য যাচ্ছেন পাশের রুয়েট, ধান গবেষণা কেন্দ্র, বিসিএসআইআরে। ক্যাম্পাসের বাইরে গবেষণায় দৌড়াদৌড়িতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এছাড়া নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান বলেন, গবেষণার একেবারে সরঞ্জাম নেই বলা ঠিক হবে না। সরঞ্জাম আছে তবে কিছু সংকট থাকায়, কোন কোন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও গবেষণার জন্য যেতে হয় আমাদের।

এদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করে আসা শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্রপাতির পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়ায় ফল পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়। কোন আউটপুট দিতে পারছেন না তারা। আলস্য ভাব চলে আসছে তাদের মধ্যে বলে নিজেরাই দাবি করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও মাশরুম গবেষক আহমেদ ইমতিয়াজ বলেন, গবেষকদের কাজ হলো সবসময় গবেষণার উপর থাকা। বাইরের দেশে যে গবেষণার যে নিয়মিত চর্চা আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব সকালে আসলেও যন্ত্রপাতির অভাবে গবেষণায় মন দিতে পারি না।

এছাড়াও গবেষণা কাজ সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত করতে সাহায্য করতে পারবেন না বলে পিএচডি, এমফিল গবেষকদের ফেলোশিপ নিতে চাচ্ছেন না অনেক গবেষক।

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আনসার উদ্দিন বলেন, সায়েন্স বিষয়ের গবেষণার অনুমতি থাকলেও ল্যাব না থাকায় এই ইনস্টিটিউটে সায়েন্সের বিষয়গুলোতে এমফিল ও পিএইচডি গবেষকদের অফার করতে পারছি না।

এদিকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ল্যাব না থাকায় সায়েন্স বিভাগ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা মানবিক বা সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোতে গবেষণা করছেন। এতে করে পিএইচডি, এমফিল গবেষকদের আগ্রহও কমে যাচ্ছে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, গবেষকদের মান উন্নতকরণে কিছু নিয়ম হওয়ায় এমফিল, পিএইচডিতে ভর্তির সংখ্যা কমেছে। সেক্ষেত্রে রেজাল্টের কারণে অনেকটা পিছিয়ে পড়ার বিষয় হিসেবে তারা দেখছেন। আগে কম জিপিএ/সিজিপিএ থাকলেও ভর্তি হতে পারত, কিন্তু এখন সেখানে অনেক ভাল রেজাল্ট নিয়েও পূর্বের এসএসসি বা এইচএসসিতে কম জিপিএ থাকায় শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছেন না বলে জানাচ্ছেন তারা।

এদিকে গবেষণা কাজ পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন না সনদের মূল্যায়ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে সদ্য এমএসসি পাস করা জহুরুল মুন বলেন, জাতীয়ভাবে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মূল্যায়ন করা হয়- সেখানে আমাদের গবেষণা সেভাবে মূল্যায়ন পাওয়া যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব বায়োলোজিক্যাল সায়েন্সের পরিচালক প্রফেসর মো. মনজুর বলেন, এবার বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার রেটিংয়ে ৮ এ নেমে এসেছে। আর ২০১৫ সালে ছিল ৫তম। যেখানে নব্বইয়ের দশকে ৩তম ছিল। এভাবে গবেষণা চলতে থাকলে আগামী ৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা রেটিংয়ে যে ১১ প্রতিষ্ঠান আছে, তার মধ্যে থাকার সম্ভাবনা হারিয়ে যাচ্ছে।

বিভাগের নিজস্ব উদ্যোগে ল্যাব প্রতিষ্ঠার কথা জানতে চাইলে ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স বিভাগের সভাপতি ড. আসাদুল হক বলেন, বিভাগে একটি পূর্ণাঙ্গ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তবে সেখানে ৬০ থেকে ৭৫ ভাগ যন্ত্রপাতি থাকলে মোটামুটিভাবে গবেষণা করা সম্ভব হয়। একটি সরঞ্জামের অনেক মূল্য। সেজন্য ব্যক্তি পর্যায়ে বা বিভাগের একার পক্ষে এগুলো কেনাও সম্ভব নয়। তাই বিভাগ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থসংকটে বিফলে যাচ্ছে। বিশাল একটি বাজেটের প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

গবেষণায় ব্যয় বাড়লেও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় না বলেও জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, সরকারের থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবগুলোকে উন্নত করার জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী চারবছরে বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :