জীবনযুদ্ধে হার না মানা নাসিরদের শেষ আশ্রয় ফুটপাত
পরিবারের প্রধান মোক্তার হোসেন। বয়স ষাটোর্ধ্ব। কাজ করতে পারেন না। তার স্ত্রী তাহেরা বেগম। অসুস্থ অনেক দিন ধরে। তাদের দুই ছেলে নাসির ও সোহেল। আছে এক মেয়েও। ইস্কাটন রোডের ফুটপাতকে নিজেদের আশ্রয়স্থল বানিয়েছে পরিবারটি।
বরগুনার হতদরিদ্র এই কৃষক পরিবারটি জানালো, ভয়ঙ্কর এক ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় তাদের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে আবাদি জমি। এরপর শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে তারা ঢাকায় আসেন।
ঢাকায় কী করেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা একসঙ্গে বললেন- ‘যখন যা পাই তাই করি, খাবার জুটলেই হয়। না জুটলে না খেয়েই দিন পার করি।’
নাসির হোসেন। বয়স ৪০। খুব কষ্টে স্মৃতির শুকনো পাতা থেকে মনে করতে পারলেন, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় তাদের জীবনে এনেছিল সর্বনাশা পরিবর্তন। এরপর জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে খাবারের সন্ধানেই তারা এসেছিলেন ঢাকায়।
নাসির জানান, আগে কৃষিকাজ করেই সংসার চলতো তাদের। ঢাকায় আসার পর বাসাবাড়ির বিভিন্ন রকম কাজ, পরিছন্নকর্মীর কাজসহ পেটেভাতে বাঁচার জন্য নানা কাজ করছেন তারা।
চার বছর আগে ঢাকায় এসেছেন নাসিররা। তার বাবা দারোয়ানের চাকরি করতেন। এখন আর কোনো কাজ করতে পারেন না। আর মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। বাবা-মা আর দুই ভাইবোনের দায়িত্ব এখন তার ওপর। কোনোরকম খেয়েপরে বেঁচে আছেন এই ফুটপাতে অবস্থান করে।
পাঁচজনের পরিবারের খরচ যোগাতে সহযোগী হিসেবে পরিবারের ছোট সদস্য সোহেল কাজ করে হোটেলে। ঢাকায় কেন এসেছো প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, ‘গ্রামে চাষ ভালা নাই, তাই আব্বা ঢাকা চইলা আইছে।’
এই পরিবারটির মতো এমন অসংখ্য মানুষ কৃষিকাজ ছেড়ে শহরমুখি হতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে দেশের কৃষিখাত দিন দিন অকৃষিতে চলে যাচ্ছে। কৃষকরা তাদের আদি পেশা ছেড়ে শহরমুখি হচ্ছেন এবং বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। এভাবেই জীবন বাঁচানোর তাগিদে সংগ্রাম করছে হাজারও পরিবার।
(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এনআই/জেবি)