জঙ্গি, যুদ্ধাপরাধীদের ‘পক্ষে’ই কেবল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আউয়াল খান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০১৭, ০৮:১১

মানবতাবিরোধী অপরাধ বা জঙ্গি হামলা মামলার বিচারে কথিত ‘আন্তর্জাতিক মান’ নিয়ে সোচ্চার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশে অন্য কোনো মামলায় প্রাণদণ্ডের আদেশ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় না। প্রশ্ন উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠনটি কোনো বিশেষ মহলের পক্ষে সোচ্চার কেন। এ ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থটাই বা কী।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির প্রায় প্রতিটি রায় আর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি এসেছে পাশাপাশি সময়েই। প্রতিটি বিবৃতিতেই সংস্থাটি ফাঁসি কার্যকর না করার আবদার জানিয়েছে এই কথা বলে যে, এই বিচার ‘আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন’ নয়। এবার একটি জঙ্গি হামলা মামলা ১৩ বছর ধরে চলার পর জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও তার দুই সহযোগীর ফাঁসির আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে একই সংগঠন। আসামিরা সবাই বিচারিক আদালত এবং উচ্চ আদালতের প্রতিটি ধাপেই আইনি সুযোগ পেয়েছে। তারপরও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

মুফতি হান্নানের ফাঁসির চূড়ান্ত আদেশ হয়েছে ২০০৪ সালে সিলেটে শাহজালাল (র) এর মাজারের বাইরে গ্রেনেড হামলায় মামলায়। ওই হামলায় বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী আহত হয়েছিলেন। নিহত হয় আরও তিন জন।

এই ঘটনাটি ছাড়ও মুফতি হান্নান ২০০১ সালে গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার অদূতে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা, একই বছর রমনা বটমূলে বোমা বোমা, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলাসহ অন্তত ১৩টি মামলার আসামি। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে একশ জনেরও বেশি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আবদার, জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘আমরা বারবারই বলে আসছি যে এসব বিচার অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে এবং বাংলাদেশকে মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এমন অবস্থান নেয়ায় বাংলাদেশে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সমালোচনাও কম নয়। সমালোচকরা বলে থাকেন, সংস্থাটি কেবল যুদ্ধাপরাধী বা জঙ্গিদের কথিত মানবাধিকার নিয়ে চিন্তিত। এর পেছনে টাকার খেলা আছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

একটি বিষয় স্পষ্ট যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা আরও কিছু মানবাধিকার সংগঠন মৃত্যুদণ্ড নিয়ে তখনই অবস্থান নিয়েছে যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা বা জঙ্গি হামলা মামলা অথবা বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় কারও মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। কিন্তু অন্য কোনো মামলা নিয়ে তারা কখনও এই ধরনের বিবৃতি দেয় না।

২০১৫ সালের ৩০ মে বিভিন্ন মামলায় দেশে মোট ২৯ জনের ফাঁসির আদেশ হয়। কিন্তু এ নিয়ে কোনো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা কোনো বিবৃতি দেয়নি।

একইভাবে গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় ফাঁসির আদেশ হয় ২৬ জনের। এ নিয়েও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তারা এই দুটি ঘটনায় বিচারের ‘আন্তর্জাতিক মান’ খোঁজার চেষ্টা করেনি।

এ ছাড়াও প্রায়ই বিভিন্ন মামলায় বাংলাদেশে দুই, তিন, চার, পাঁচ বা আরও বেশি আসামির ফাঁসির আদেশ হয়। এর কোনোটির বিষয়েই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কোনো অবস্থান নেয় না।

বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির মনে করেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জঙ্গি ও যু্দ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে এতো বড় গণহত্যা ঘটল, ৩০ লক্ষ মানষকে মারা হল, তাদের বিচারে যখন উদ্যোগ নেয়া হলো তখন তারা অপরাধীদের পক্ষ নিয়েছে। এখন জঙ্গিরা নিজেদের ইচ্ছায় এবং ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানষকে হত্যা করছে। মুফতি হান্নানের মতো জঙ্গিরা হামলার দায় স্বেচ্ছায় স্বীকার করছে। কিন্তু তাদের কাজে অনুতপ্ত হচ্ছে না। কিন্তু হিউমেন রাইটস ভিকটিমদের পক্ষে কোন কথা বলেনি, তারা কথা বলছে খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে। এটা কোনো যুক্তির কথা হতে পারে না।

এই সাংবাদিক বলেন, ‘যারা খুন হয়েছে তাদের মানবাধিকার বড়, নাকি যে খুনি তার মানবাধিকার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে বড়?’।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যারা মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে কাজ করে, তাদের তো মানবতাবিরোধী অপরাধ বা জঙ্গি হামলার বিচারের প্রশংসা করার কথা। কিন্তু তারা যখন এটি না করে অন্য কাজটি করে, তাহলে তারা মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে গণ্য করার যোগ্য নয় বলে আমি মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ধারাবাহিকভাবেই এমনটি করে যাচ্ছে, তার মানে এর পেছনে অন্য সমস্যা আছে।’

সারওয়ার আলী বলেন, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী থেকে শুরু করে রমনার বটমূলে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় যার দায় প্রমাণ হয়েছে, তার পক্ষ নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার আসল চেহারা উন্মোচন করে ফেলেছে। এমনটা তারা করে যেতে থাকলে বিশ্ববাসীর কাছে কোনো গ্রহণযোগ্যতা তাদের থাকবে না।

ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এএকে/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :