গরিবের জন্য প্রকল্পের টাকা শুষে নিচ্ছে সম্পদশালীরা

দুলাল হোসাইন, জামালপুর প্রতিনিধি
| আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৭, ০৮:৫৫ | প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০১৭, ০৮:২২

জামালপুরের মেলান্দহে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের নেয়া বিশেষ প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য। শ্রমিককে কাজে নিয়োগ দেয়া হয়েছে দেখিয়ে পুরো টাকাই আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ফলে সুবিধাভোগীরা হচ্ছে বঞ্চিত, তার লাভবান হচ্ছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

মেলান্দহ উপজেলায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচির (প্রথম পর্যায়) আওতায় ১১টি ইউনিয়নের ৫১টি প্রকল্পের বিপরীতে তিন হাজার ৩৩৯ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক ধরা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের শ্রমিক মজুরি বাবদ দুই কোটি ৬৭ লাখ ১২ হাজার এবং প্রকল্পের অন্যান্য ব্যয় (নন ওয়েজ কস্ট) দেখানো হয়েছে ২৬ লাখ ২৯ হাজার ৮২৮ টাকা।

সরেজমিনে মেলান্দহ উপজেলার চরবানীপাকুরিয়া, ঘোষেরপাড়া আদ্রা, নয়ানগর, কুলিয়া, শ্যামপুর, ও নাংলা ইউনিয়নে প্রকল্প ঘুরে কোন শ্রমিকের দেখা মেলেনি।

চরপলিশা মধ্যপাড়া সিএনবি রাস্তা থেকে গণি মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় প্রতিদিন ৮০ জন ও বেতমারী দক্ষিণপাড়া পাকা রাস্তার মাথা থেকে দক্ষিণপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে প্রতিদিন প্রতিদিন ১১৮ জন শ্রমিক কাজ করা কথা থাকলে ওই দুই প্রকল্পে কোন শ্রমিক পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, তিনি অসুস্থ ছিলেন, এজন্য কয়েকদিন ধওে কাজ রেখেছেন। তবে প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা জানান, বোরো ধান লাগানোর আগে কিছুদিন কয়েক জন শ্রমিক কাজ করেছেন। এরপর আমরা আর কোন শ্রমিককে রাস্তায় কাজ করতে দেখেননি তারা।

চরপলিশা মধ্যপাড়া প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা ইমান আলী জানান, প্রায় এক মাস আগে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক ২০ দিনের মতো কাজ করতে দেখেছেন। পর আর কোন কাজ হয়নি এই রাস্তায়।

এসব প্রকল্পের সরকারের উন্নয়ন কাজ জনসাধারণের দৃষ্টির জন্য কাজের বিবরণ, বরাদ্দকৃত টাকা ও শ্রমিক সংখ্যা উল্ø্খে করে প্রতিটি প্রকল্পের সাইনবোর্ড টানানোর জন্য বরাদ্দ দেয়া হলেও কোন প্রকল্পেই সাইনবোর্ড টানানো হয়নি।

ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের আমিত্তি মধ্যপাড়া থেকে আমিত্তি পশ্চিমপাড়া পাকা রাস্তায় প্রতিদিন ৮৫ জন এবং বীরঘোষেরপাড়া পাকা রাস্তা থেকে ঘোষেরপাড়া হযরত সুতারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে ৯৫ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক দেখানো হয়েছে। এই ইউনিয়নে আরও দুইটি প্রকল্পে ১৭১ শ্রমিক থাকার কথা। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে কোন শ্রমিকের দেখা মেলেনি।

উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নে কর্মসংস্থান প্রকল্পের চারটি প্রকল্পে ২৪৯ জন শ্রমিকের বিপরীতে তিন লাখ ৪৮ হাজার ছয়শ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এই ইউনিয়নের ২নং কুলিয়া ইউনিয়নে কর্মসংস্থান প্রকল্পের চারটি প্রকল্পে ২৯৫ শ্রমিকের মজুরি ব্যয় ধরা হয়েছে চার লাখ ১৩ হাজার টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় বাবদ প্রকল্প ব্যয় দেখানো হয়েছে দুই লাখ ২৯ হাজার টাকা।

এই ইউনিয়নের কুলিয়া হেলালের বাড়ি থেকে হযরত ওরফে হজ মাঝির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে চল্লিশ দিনে দুই হাজার শ্রমিকের কাজ করার কথা। ওই প্রকল্পের সভাপতি কুলিয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য। তিনি বলেন, তার প্রকল্পে কত জন শ্রমিক ও কত টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তিনি কিছুই জানেন না।

কর্মসংস্থান প্রকল্পের ব্যাপক এই অনিয়ম ও দুর্নীতির একই চিত্র পুরো উপজেলার প্রতিটি প্রকল্পে। এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জন কেনেডি জাম্বিলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব প্রকল্পই নিয়ম অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে।’

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চান বলেছেন, তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজ করেন না। এজন্য দৃশ্যমান কাজের স্বার্থে গরুগাড়ি, ভটভটি ও দিন হাজিরা শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজ করানো হচ্ছে। তবে এর জন্য কাজের খরচ বাদে বাকি টাকা শ্রমিকদের দেয়া হবে।

কর্মসংস্থান প্রকল্পের কাজ এভাবে বাস্তবায়ন করার নিয়ম রয়েছে কি না জানতে চাইলে এই জনপ্রতিনিধি এর কোন সুদোত্তর দিতে পারেননি।

চলতি বছর জামালপুর জেলার সাত উপজেলায় অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূিচ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২৪ হাজার ৪৭৩ অতিদরিদ্র নারী-পুরুষ শ্রমিকের মজুরি বাবদ ১৯ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং প্রকল্পের আনুষাঙ্গিক ব্যয় বাবদ দুই কোটি ১৯ লাখ ৫২ হাজার ২৯৬ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

মেলান্দহের মতই অন্যান্য উপজেলাতেও কর্মসংস্থান প্রকল্পের একই চিত্রের খবর পাওয়া গেছে। এতে জেলার হাজার হাজার অতিদরিদ্র নারী-পুরুষ শ্রমিক সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে।

কাজ থাকে না, বছরের এমন সময় গ্রামীণ জনপদে অতিদরিদ্র ও অদক্ষ শ্রমিকদের ৪০ দিনের আয় নিশ্চিত করতে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে। কিন্তু শুরু থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। আর এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণও বিরল।

ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :