খালেদার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা চলবে
কানাডার তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে চুক্তি করে রাষ্ট্রের প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলা চলতে বাধা নেই। এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। ফলে বিচারিক আদালতে এই মামলাটি চলবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ তিন সদস্যের আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
নাইকো দুর্নীতি মামলা ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আরও চারটি মামলার কার্যক্রম চলছে। এগুলো হলো জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা ও বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা।
২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাশকতার ঘটনায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু মামলা হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু মামলায় প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়ার তথ্য মতে বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে ২৫টির মত মামলা রয়েছে।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদের একটি আবেদনের পর গত ৭ মার্চ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করে আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদেরকে উক্ত রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ মামলা স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা।
খালেদা জিয়ার সাথে মওদুদ আহমদও এ মামলার আসামি। মওদুদ আহমদ ওয়াশিংটনে নাইকোর বিষয়ে চলা আরবিট্রশেন শেষ না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। গত বছরের ১৬ আগস্ট বিচারিক আদালত এ আবেদন খারিজ করে দেয়।
পরে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ফৌজদারি আবেদন করেন মওদুদ আহমদ। এর বিরুদ্ধে মওদুদ আহমদ হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর মওদুদের বিরুদ্ধে করা নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট। দুদক এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে।
মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে এ মামলা স্থগিত আছে এবং রুল শুনানি চলছে উল্লেখ খালেদা জিয়াও এ মামলা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলা এ মামলার উপর স্থগিতাদেশ দেন। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করে। আপিলের শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার মামলা চলবে চলে রায় দেয়।
মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এর আগেও একবার হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত ও রুল জারি করেন আদালত। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। তবে ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর রুল নিষ্পত্তি করে খালেদা জিয়ার ওই আবেদন খারিজ করে নাইকো দুর্নীতি মামলা চলবে বলে রায় দেয় আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায়ে সচল হওয়ার পর নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ-৯ আমিনুল ইসলামের আদালতে। মামলাটি আগামী ১২ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ রয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালে কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান। অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এমএবি/ডব্লিউবি)