গবাদি পশু পালনে কামরুন্নাহার এখন লাখপতি
গবাদি পশু পালন করে সাবলম্বী হয়েছেন এক জীবন সংগ্রামী নারী। তার নাম কামরুন্নাহার। নারায়ণঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী এলাকায় স্বামী, শাশুড়ি, তিন ছেলে ও দুই মেয়েসহ আট সদস্যের সংসার তার। স্বামীর কাঁচামাল ব্যবসায় বারবার লোকসান হওয়ায় ঋণের জালে আটকে পড়ায় হতাশ হয়ে একাধিকবার বাপের বাড়ি চলে যান তিনি। আবার ফিরে আসার মধ্যদিয়ে কষ্টে চলছিল তাদের সংসার। প্রশিক্ষণের অভাবে দেশীয় জাতের গরু পালনেও দেখল না আলোর মুখ। সামান্য রোগ-বালাই হলেই পালের গরুটি মারা যেত। তাই সাংসারিক অভাব-অনটন আরো বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতেও হিমসিম খাচ্ছিলেন তিনি।
এক সময় তার কথা হয় একটি এনজিও (ব্রাক ব্যাংকের মাঠ কর্মী)’র সাথে। তার পরামর্শে গবাদি পশু পালনের উপর একটি প্রশিক্ষণ নেন কামরুন্নাহার। সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি চিকিৎসক হাবীব ইফসুফের সাথে কথা বলে দেশীয় জাতের পরিবর্তে শংকর ও অস্ট্রেলিয়ার উন্নত জাতের গাভী পালন শুরু করেন।
শুরুতে নিজের জোগার করা ৫০ হাজার টাকা ও প্রশিক্ষণ নেয়ায় ব্রাক থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন। এ সময় দেড় লাখ টাকা দিয়ে একটি অস্ট্রেলিয়ার উন্নত জাতের গাভী ক্রয় করা হয়। গাভীটি প্রতিদিন ১২ লিটার দুধ দেয়ায় দৈনিক ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি করে একদিকে কিস্তি পরিশোধ করেন, অন্যদিকে সংসারের অভাব-অনটন দূর করতে থাকে। একই আয় থেকে নিজের ছেলেমেয়ের লেখাপড়া করাতেও কোন রকম কষ্ট হয় না। সময়ের ব্যবধানে গাভী পালনের জন্য আলাদা ঘর, প্রশিক্ষণের সকল সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ, উন্নতজাত সঠিকভাবে পালন করে আলোর মুখ দেখেন কামরুন্নাহার। এখন তার খামারে ৩টি গাভী, দুটি বাছুর ও একটি ষাড় রয়েছে।
এসব গাভী থেকে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে মিলে ২৫ কেজি দুধ পাওয়া যায়। সকালের দুধ স্থানীয় মিষ্টির দোকানে পাইকারি দর তথা ৫০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করে দেয়। আর বিকালে বাসা বাড়িতে রোজ হিসেবে ৬০ টাকা করে বিক্রি করে দেন। এভাবে প্রতিদিন ১৩শ টাকা দুধ বিক্রি থেকে আসেন। পরে গো খাদ্য বাবদ খরচ হয় ৩শ টাকা, অন্যান্য খরচ আরো ২শ টাকা হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৮শ টাকা আয় হয়।
এ টাকা থেকে মাসিক কিস্তি দিয়েও মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান তার স্বামী বিল্লাল হোসেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর ঈদ উল আজহার জন্য এ বাছুর থেকে একটি করে ঘাড় পালনের জন্য রেখে বাকিগুলো গো-খাদ্য অভাবে বিক্রি করতে দেন। তবে তার দাবি গো-চারণ ভূমি, সবুজ ঘাষ জাতীয় খাদ্যের অভাবে গবাদি খামার থেকে পালিত গরুর মাংসের স্বাদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
এ বিষয়ে গৃহবধূ কামরুন্নাহার বলেন, আমার স্বামীর কাঁচামাল ব্যবসায় বারবার লোকসান হওয়ায় সাংসারিক অশান্তি লেগেই থাকত। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই।
তিনি আরো বলেন, সঠিক সময়ে ব্র্যাকের নেয়া প্রশিক্ষণকে কাজে না লাগাতে পারলে জীবন চাকা থেমে যেত।
ইকোনোমিক ইম্পাওয়ারমেন্ট ফর পুওর অ্যান্ড ভালনারেবল উইমেন ইন বাংলাদেশ (ইইপি)’র সিনিয়র ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা বলেন, সারাদেশেই আমরা দরিদ্রদের তাদের চাহিদামত খাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। শুধু প্রশিক্ষণেই সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের কর্মসূচি। কামরুন্নাহারকে প্রশিক্ষণ পরবর্তী ব্যাংক থেকে ঋণ আদায়, মার্কেটিং, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাথে সমন্বয়সহ সকল বিষয়ে সহযোগিতা করেছি। এভাবে যারা প্রশিক্ষণ নেয়- তাদের আমরা সহযোগিতা করে থাকি।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র রূপগঞ্জে-ই ৩ হাজার ৬০০ পরিবারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৩৩৪ জন সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়ে লাভবান হয়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি চিকিৎসক মো. ইউসুফ হাবীব বলেন, প্রশিক্ষণের অভাবে অনেক খামারি লোকসানের মুখে পড়ে হাল ছেড়ে দেয়। এটা ঠিক না। সঠিক পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ নিলে কোন খামারিই লোকসানের মুখে পড়বে না। কামরুন্নাহারের সফলতার পেছনে সঠিক পদ্ধতি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)
মন্তব্য করুন