নাইটিংগেল মেডিকেলের সুরম্য ভবনে হচ্ছেটা কী
দৃষ্টিনন্দন সুরম্য ভবন। তার ভেতরে আছে ওয়ার্ড, বিছানা। রোগী ও তার স্বজনদের অপেক্ষার জন্য আছে সারি সারি চেয়ার। অভ্যর্থনা কক্ষ। চিকিৎসকদের জন্য চেম্বার, নার্সদের জন্য ওয়ার্ক স্টেশন। একটি হাসপাতালের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধার সবই আছে এখানে। কিন্তু যে জন্য এত আয়োজন, সেই চিকিৎসাসেবাই নেই সাভারের নাইটিঙ্গেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
কারণ এখানে কোনো রোগী নেই, তাই রোগীর স্বজনদের ভিড় নেই। অপারেশন থিয়েটারের সামনে নেই উদ্বিগ্ন স্বজনদের অপেক্ষা। সাদা অ্যাপ্রন পরে চিকিৎসক ও নার্সদের ছোটাছুটি নেই।
নাইটঙ্গেল হাসপাতালের এই চিত্র এক যুগ ধরে চলছে। এমারজেন্সিসহ হাসপাতালটির সব ওয়ার্ড পড়ে থাকে খালি। চিকিৎসকদের রোগী দেখার চেম্বারগুলো তালাবদ্ধ। অপারেশন থিয়েটার থাকলেও নেই কোনো যন্ত্রপাতি।
এমনি একটি নামসর্বস্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসা শিক্ষার কলেজ খুলেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ নিয়ে আছে নানা অনিয়ম আর প্রতারণার অভিযোগ। পরে সরকার প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্র ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়। ফলে বিপাকে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী।
ঢাকাটাইমসকে দেওয়া শিক্ষার্থীদের একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে আসে তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার কথা।
আরিফুল ইসলাম নামে এমবিবিএস শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘ভর্তি হওয়ার পর থেকে এই মেডিকেলে কোনো রোগীকে সমস্যা নিয়ে আসতে দেখিনি। শিক্ষার্থী ছাড়া সব সময় ফাঁকা থাকে প্রতিষ্ঠানটি। তবে সরকারি কোনো অডিট টিম আসার আগে কর্তৃপক্ষ অন্য হাসপাতাল থেকে রোগী ও যন্ত্রপাতি ভাড়া করে নিয়ে আসে।
এ নিয়ে এর আগে অনেকবার তারা আন্দোলন করেছেন জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন, সর্বশেষ মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই কলেজের সকল কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করেন। এর পর ২০১৬-১৭ থেকে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
আরিফুল ইসলাম জানান, সর্বশেষ ২২০ জনের মতো অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী মাইগ্রেশন নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আর ১০২ জন শিক্ষার্থীকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাইগ্রেশন দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের দুজন প্রতিনিধি আশরাফুজ্জামান নয়ন ও জিনাত নাজমিনের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ-সংক্রান্ত নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু সাত কার্যদিবসের মধ্যে সেই নোটিশ মেডিকেলে আসার কথা থাকলেও এখনো তা পৌঁছায়নি। নোটিশ নিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেন এই শিক্ষার্থী।
একই বর্ষের খালিদ হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নিজ প্রতিষ্ঠানের এমন করুণ অবস্থায় আমরা চরম হতাশায় ভুগছি।’ তিনি জানান, এই প্রতিষ্ঠানের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন না থাকায় জানুয়ারিতে এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি তারা। এর বাইরেও ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী পাস করে বসে আছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মাইগ্রেশন দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে নানা তালবাহানা করছে।
আনিছুর রহমান ও সুমন সরকার নামে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষার্থী জানান, তাদের কাছ থেকে ভর্তির জন্য সরকারি নির্ধারিত ফির বাইরেও অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শিক্ষক সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকা, প্র্যাকটিস করতে না পারাসহ নানা সমস্যার কারণে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন এখন তাদের হুমকির সম্মুখীন।
এমনকি ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তারা অভিযোগ করেন, মেডিকেলের হোস্টেল থেকেও তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে এখানে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ নামে প্রতিষ্ঠানটি থাকলেও চিকিৎসাসেবা নিতে কোনো রোগী সেখানে যেত না। শুধু শিক্ষার্থীদেরই এখানে দেখা যেত। আর মাঝে মধ্যে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে গ-গোলের মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটত।
এত সব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হুমায়ন জামান চৌধুরীরর মুঠোফোনে (০১৭১৩-০১৪৯৭০) যোগাযোগ করা হলে রফিক উদ্দিন নামে একজন নিজেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দেন। এ সময় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনাকে যারা অভিযোগ করেছে তাদের কথা আপনি মিডিয়ায় যত খুশি লেখেন। গত এগারো বছর ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে, আর আপনারা মিডিয়ায় লিখছেন। তাতে আমাদের কিছুই আসে যায়নি। এখনি নিউজটা আপনার সংবাদমাধ্যমে (ঢাকাটাইমসে) তুলে দেন। আমি ব্যস্ত আছি।’ বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।
এরপর পরিচালকের নম্বরটি নিশ্চিত হতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাব্বির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ সময় তিনি নাইটিংগেল মেডিকেলের কেউ না বলে এক সাংবাদিকের ছোট ভাই বলে পরিচয় দেন।
(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/মোআ)
মন্তব্য করুন