প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় নয় বছর পর মাগুরা বস্ত্রকল চালু

মাগুরা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ মার্চ ২০১৭, ১৫:৫৬

দীর্ঘ নয় বছর পর প্রায় ১৪০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আবার উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন মাগুরা বস্ত্রকলটি।

গত ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাগুরা জনসভায় নতুন করে মিলটির উৎপাদন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ঘোষণা দেন।

মাগুরা বস্ত্রকলে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন করে উৎপাদনে যাওয়ায় মিলটির প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মিলের সাইরেন বাজার সাথে সাথে শ্রমিকরা নিজেদের কর্মস্থলে যোগ দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

মাগুরা বস্ত্রকলের সহকারী-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) এবং মিলটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বললেন, বিটিএমসি এবং মাগুরার আলী ট্রেডার্সের মধ্যে মাসিক দেড় লাখ টাকা ভাড়ার ভিত্তিতে সম্পাদিত দুই বছর মেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে বস্ত্রকলটি আবার উৎপাদন শুরু হয়েছে।

মিলটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানালেন, প্রায় নয় বছর ধরে বন্ধ থাকার কারণে এখানকার অনেক যন্ত্রপাতিই মরিচায় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বস্ত্রকলটির সুষ্ঠু উৎপাদনের স্বার্থে তারা কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি এনেছেন।

দাপ্তরিক সূত্র মতে, ১৯৮৫ সালে উৎপাদনে যাওয়া এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে ১৯৯৯, ২০০২, ২০০৫ এবং ২০০৮ সালসহ চারবার বন্ধ হয়েছে।

মাগুরা বস্ত্রকলের সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অনুকুল বিশ্বাস ঢাকাটাইমসকে জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের জুন মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত মাগুরা বস্ত্রকলের লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

মাগুরা বস্ত্রকলের হিসাবরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানায়, ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ বস্ত্রকলটির উৎপাদন কার্যক্রম চললেও ৬৭.১৪ কোটি টাকা লোকসানসহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর বিটিএমসি কর্তৃপক্ষ ২০০০ সালে পাবনা জেলার কর্ণফুলি ট্রেডার্সের সাথে দুই বছরের চুক্তিতে ‘সার্ভিস চার্জ’-এর ভিত্তিতে আবার বস্ত্রকলটি চালু করলেও এ সময়কালে আরও ২২.৫৫ কোটি টাকা লোকসানের শিকার হয় প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ ১৯৮৫ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বস্ত্রকলটিতে সর্বমোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯.৬৯ কোটি টাকা।

পরবর্তীতে প্রায় প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর কর্ণফুলি ট্রেডার্সের সাথে আবারও দুই বছরের চুক্তিতে ‘সার্ভিস চার্জ’-এর ভিত্তিতে ২০০৪ সালে আবার বস্ত্রকলটি চালু করেন বিটিএমসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২০০৫ সালে আরও ১৬.৪৬ কোটি টাকা লোকসানসহ এটি আবারও বন্ধ হয়ে যায়।

প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ১০৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা লোকসানের বোঝাসহ এ বস্ত্রকলটি নতুন ব্যাবস্থাপনায় চতুর্থবারের মত চালু করা হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি সার্ভিস চার্জ-এর ভিত্তিতে মাগুরার আলী ট্রেডার্সের সাথে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রতি বেল সূতা উৎপাদনের মাধ্যমে ছয় হাজার টাকা আয় করত। এ আয় থেকেই মিলটির কর্মকর্তাদের বেতন পরিশোধ করা হতো। এ দুই বছরে মিলটিতে আরও ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা লোকসান হয়। এ অবস্থায় চুক্তি নবায়ন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে আবারও তা বন্ধ হয়ে যায়।

অনুকুল বিশ্বাস আরও জানালেন, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকলেও এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, প্রশাসনিক ব্যয়, পাঁচজন স্থায়ীসহ ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, পৌর কর এবং যান্ত্রিক অবচয়ের কারণে প্রতিবছর বৃহৎ অংকের লোকসান গুণতে হয় মাগুরা বস্ত্রকলকে।

তার হিসাব মতে, এ বস্ত্রকলটি ১৯৯৯ সাল ২০০০ পর্যন্ত এক বছর, ২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত দুই বছর, ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এক বছর এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত বন্ধ পড়ে থাকার কারণেই এ প্রতিষ্ঠানে লোকসান হয়েছে আরও প্রায় ২৪.০২ কোটি টাকা।

মাগুরা শহরের ভিটাসাইর এলাকায় ১৬ একর জমির উপর ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫ হাজার ৫৬ টাকুবিশিষ্ট বস্ত্রকলটি ১৯৮০-৮১ অর্থ বছরে স্থাপিত হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :