গণতহ্যা দিবস ঘোষণায় খুশি মির্জাপুরের শহীদ পরিবারগুলো

জাহাঙ্গীর হোসেন, মির্জাপুর থেকে
| আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৭, ১৮:৫২ | প্রকাশিত : ২৪ মার্চ ২০১৭, ১৬:৫৯

একাত্তরের ২৫ মার্চের সেই ভয়াল কালরাতে ৪২ দিন পর ৭ মে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ মির্জাপুর গ্রামের ৩১ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে। এছাড়া একাত্তরের ৭ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত এ উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়ন থেকে ভাতগ্রাম কে আর এস ইনস্টিটউশনের প্রতিষ্ঠাতা জগবন্ধ রায়সহ অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। এ সময় অধিকাংশ বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয় হানাদার বাহিনী।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষিত হওয়ায় এ উপজেলার শহীদ পরিবারের সদস্যরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ২৫ মার্চ যাতে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি পায় সেজন্য সরকারে কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

১৯৭১ সারের ৭ মে ছিল শুক্রবার। উপজেলা সদরের হাটবার। দুপুরের দিকে অধিকাংশ মানুষই সওদা বেচাকেনার জন্য হাটে এসেছিলেন। আবার কেউ কেউ হাটে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় বেলা পৌনে তিনটার দিকে পাকবাহিনী ক্যাপ্টেন আইয়ূব ও তার স্থানীয় দোসর মাওলানা ওয়াদুদের নেতৃত্বে পাক হায়েনার একটি দল উপজেলা সদরের মির্জাপুর এবং আন্ধরা গ্রাম দুটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং যে যেখানে অবস্থান করছিল তাকেই পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে। সঙ্গে চলে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। এতে সদা কর্মচঞ্চল-কোলাহলময় গ্রাম দুটি মুহূর্তেই বিরান ভূমিতে পরিণত হয়। ঘাতকদের এই দলটিই ওইদিন সন্ধায় নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা এব্ং কর্মচারী গৌর গোপাল সাহাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।

ঘাতকদের এই দলটি পরের দিন বাসায় আওয়ামী লীগের অফিস থাকার অপরাধে এবং লুটপাটের প্রতিবাদ করায় মাজম আলী সিকদারকে মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।

৯ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক পুষ্টকামুরী গ্রামের আবুল হোসেনের বৃদ্ধ পিতা জয়নাল সরকারকে ঘাতক বাহিনী ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে এ উপজেলার ভাতগ্রাম, বাগজান, পাঠানপাড়া, মির্জাপুর, আন্ধরা, পুষ্টকামুরী এবং দূর্গাপুরসহ আশপাশের গ্রাম থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে, ধরে এনে ভাতগ্রাম কে আর এস ইনস্টিটিউশনের প্রতিষ্ঠাতা জগবন্ধু রায় এবং তৎকালীন সময়ে উপজেলা সদরের বড় মহাজনী ব্যবসায়ী রাখাল চন্দ্র সাহাসহ অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নয় মাসে এ উপজেলার গুড়ান, সাটিচড়া, পুষ্টকামুরী চরপাড়া, হিলড়া, লক্ষিন্দা, শেওড়াতৈল, বাঁশতৈল নয়াপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের দেড়শতাধিক নিরপরাধ বাঙালিকে ঘাতক পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরা হত্যা করে।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২৫ মার্চ সরকার গণহত্যা দিবস ঘোষিত হওয়ায় শহীদ জগবন্ধু রায়ের পৌত্র কল্লোল রায়, শহীদ মাজম আলীর ছেলে মো. আলী হোসেন, শহীদ জয়নাল সরকারের পৌত্র মাজহারুল ইসলাম শিপলু, গৌর গোপাল সাহার পুত্র সাহা প্রাণ গোপাল, শহীদ সুদাম চন্দ্র সাহার ছেলে সঞ্জিব সাহাসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তারা ২৫ মার্চ যেন আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায় তার জন্যও সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :