অদম্য শেখ হাসিনা

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০১৭, ২০:৩৫ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭, ২২:০৯

আরিফুর রহমান
আরিফুর রহমান দোলন

২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা মার্চ মাসে কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন অসুস্থ মেয়ে ও সন্তানসম্ভাবা পুত্রবধূকে দেখার জন্য। ওই বছরের ১৮ এপ্রিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁর দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

সে সময় আল-জাজিরা টেলিভিশনে এক আবেগময় সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে আমার জন্ম। ওই মাটিতেই আমার মৃত্যু হবে। কোনো ভয়ভীতি, হুমকি আমাকে বাংলাদেশে ফেরা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।’

অদম্য শেখ হাসিনা। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নানা ষড়যন্ত্র, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ২০০৭ সালের ৫ মে দেশে ফিরে আসেন। একপর্যায়ে জবরদস্তিমূলকভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। খাদ্যে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যার চেষ্টাও ছিল। ফৌজদারি দ- দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখার জন্য একের পর এক মামলার চক্রান্ত তো ছিলই।

কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শেখ হাসিনা ছিলেন অবিচল। নির্যাতন সয়েছেন। ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছেন কাছ থেকে। তবু পিছপা হননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নির্মমভাবে হত্যার পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর থেকেই শাসক গোষ্ঠী আর ষড়যন্ত্রকারীদের রোষানলে পড়েন বারবার। তাঁকে হত্যার জন্য অন্তত ১৯ বার সশস্ত্র হামলা হয়েছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের ২১  আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেনেড হামলায় ¯্রফে ভাগ্যের জোরে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

বারবার প্রাণনাশের নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যেও গণতন্ত্রের সংগ্রামে হাল ছেড়ে দেননি শেখ হাসিনা। দেশের ভাগ্যোন্নয়ের লড়াইয়ে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সব সময়। আজ তাঁর নেতৃত্বে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই স্বপ্নও এখন দেশবাসী দেখছেন পুরোপুরি যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে এগোচ্ছি আমরা তাতে উন্নত রাষ্ট্রও হব শিগগিরই।

শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখতে জানেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে জানেন। কীভাবে বাধা অতিক্রম করতে হয়, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হয়, সেটি বোঝেন তিনি। এ জন্য তিনি অনন্য। শেখ হাসিনা অদম্য।

সেনা-সমর্থিত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে শেখ হাসিনা আগাম কিছু ধারণা করতে পেরেছিলেন। তাঁকে যে গ্রেপ্তার করা হবে সেটি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন। ছোট্ট একটি চিঠিতে প্রিয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁর অদম্য মনোভাবের কথাই লিখেছিলেন। বিপন্ন জীবনের চেয়ে দেশের মানুষ ও তাদের অধিকারের প্রশ্নে কতখানি দৃঢ়চিত্ত সেটি স্পষ্ট করেন ওই চিঠিতে। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে ১৭ জুলাই দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল সেই চিঠি। শেখ হাসিনা লিখেছিলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আমার সালাম নিবেন। আমাকে সরকার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনো অন্যায় করিনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও আপনারা দেশবাসী আপনাদের উপর আমার ভরসা।’ শেখ হাসিনা আরও লেখেন, ‘আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন কখনও মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সাথে, আমৃত্যু থাকবো। আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই।’

বঙ্গবন্ধু-কন্যা তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবই। কী অবিচল মনোভাব। গ্রেপ্তারের পর পরিণতি কী হবে জানেন না। তবুও মানুষের অধিকার আদায়ে কী দৃঢ় মনোভাব। ঠিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো। আর এই অদম্য মনোভাবের কারণেই শেখ হাসিনা প্রমাণ দিচ্ছেন সারা বিশ্বে যে,বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

নজিরবিহীনভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) থাকতে মরিয়া ছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে ইউনূসকে এমডি রাখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছেন। নানাভাবে চাপ রেখে গেছেন আরেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের দৌড়ঝাঁপ তো ছিলই। কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিছু করতে চাননি শেখ হাসিনা। চাননি এমডি নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘিত হোক। তাই তো চাপের মুখে নুইয়ে পড়েননি। বাংলাদেশ চলবে নিজের মতো, এটাই চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য অনেক ষড়যন্ত্র, চাপ সামলাতে হয়েছে তাঁকে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ চুক্তি করেও কাল্পনিক দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়নি বাংলাদেশকে। কিন্তু শেখ হাসিনা যে অদম্য। বাংলাদেশের নিজের টাকায় হচ্ছে পদ্মা সেতু। বিশ্বব্যাংককে শুধু নয় গোটা বিশ্বকে তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে অদম্য ইচ্ছে থাকলে সবই সম্ভব। অথচ দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা পরিষ্কার বলে দিয়েছিল পদ্মা সেতু করা আর সম্ভব নয়। তাদের বক্তব্য ছিল,  অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পদ্মা সেতু করতে গেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। জিডিপি থমকে যাবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার সর্বশেষ ৭ দশমিক ১ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই হলেন শেখ হাসিনা।

এখন তো বিশ্বব্যাংক রীতিমতো ১৮০ ডিগ্রি উল্টো কথা বলছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। বলে গেছেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের সাফল্য বিস্ময়কর। বাংলাদেশের এই সাফল্য নানাভাবে তাঁরা তুলে ধরবেন এমন কথা বলে গেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ অনেক বেশি সম্মানীত। চীনের কথাই বলি। সচারচর কারো প্রশংসা করে না চীন। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন, টেকসই উন্নতি না দেখে চীনা নেতৃত্ব কার্যত ধীরে চলো নীতি নেয়। কিন্তু ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে এসে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি দেখে চীনের রাষ্ট্রপতি তাঁর মুগ্ধ মনোভাবের কথা প্রকাশ করেছেন প্রকাশ্যে। এমন অসংখ্য অর্জন আছে শেখ হাসিনার।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোভাবের কথা এ প্রসঙ্গে বলতেই হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করার ব্যাপারে দেশে ও দেশের বাইরে কী চাপটাই না ছিল! পাকিস্তান, তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশ যেমন নানাভাবে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে তেমনি একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দড়িতে না ঝোলানোর বিষয়ে নানাভাবে তদবির করেছে। শেখ হাসিনা ছিলেন অবিচল। সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়েছে, বাকিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান। শেখ হাসিনার অদম্য মনোভাবের কারণেই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার কাজটি আরও এক ধাপ এগিয়েছে।

পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতোই জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে শেখ হাসিনার রয়েছে দৃঢ় অনুভূতি।  দেশ পরিচালনায় বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের অযাচিত পরামর্শও তাঁর না-পছন্দ এ বিষয়টি তিনি বহু আগেই স্পষ্ট করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর একটি উক্তি থেকেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা কারো সাথে কখনো যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি আক্রমণ করে তাহলে আমরা তার সমুচিত জবাব দিতে পারি সে প্রস্তুতি আমাদের থাকবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা যা যা করণীয় তা করে যাচ্ছি।’ চট্টগ্রাম নৌ-জেটিতে দেশে প্রথমবারের মতো ‘নবযাত্রা’ এবং ‘জয়যাত্রা’ নামে দুটি ডুবোজাহাজকে আনুষ্ঠানিক কমিশনিং প্রদানকালে প্রধান অতিথির ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা চাই সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে যাতে জনগণের সার্বিক উন্নতি করতে পারি। তবে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের যা যা প্রয়োজনীয় তা আমরা সংগ্রহ করবো। কারণ, এগুলো হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক।’ আর এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে তিনি যে কতখানি দৃঢ় মনোভাব, অনুভ’তি নিয়ে চলেন তা আরও একবার স্পষ্ট হয়। গঙ্গা পানি চুক্তি করার সময়েও তিনি তার এই জাতীয়তাবাদের তীব্র অনুভূতির পরিচয় দিয়েছিলেন। গঙ্গা পানি চুক্তি করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী সিপিআইএম নেতা জ্যোতি বসু। শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে জ্যোতি বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করে এই সাফল্য অর্জন করেন।

অথচ এর আগে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারত সফরে গিয়ে বিষয়টি উচ্চারণই করেননি। বাংলাদেশে ফেরার পর সাংবাদিকরা যখন বেগম জিয়াকে গঙ্গার পানি চুক্তির বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, তখন তিনি বিষয়টি যে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন তা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ যে সমুদ্রসীমা জয় করল, এটি শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোভাবের ফসল।

জঙ্গি দমনে শেখ হাসিনার অদম্য মনোভাব সারা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট যখন বাংলাদেশ সফর করেন তখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ লালনে বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের মদতের বিষয়টি নানাভাবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। আর এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি স্পষ্ট। শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন। এ জন্য তিনি বলতে পারেন, ‘আমাদের ভূখ- ব্যবহার করে আমাদের প্রতিবেশী দেশের সাথে অথবা দেশের ভেতরে কেউ যেন কোনো ধরনের অশান্তির সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের ভূখ- কাউকে এ ধরনের সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করতে দেব না, সেটি আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা সেভাবেই আমাদের পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ আর এ কারণেই কোনো জঙ্গি সংগঠনই এখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশে নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতিতে সারা বিশ্বই আজ চমকিত। বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক রোল মডেল। শেখ হাসিনার অদম্য ইচ্ছের কারণেই আজ এটি সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুতের কথাই বলি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে শুধু কথার ফুলঝুরি হয়েছে। আর শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে দেশে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। দেশি-বিদেশি অনেকের কাছেই এটি ছিল বিস্ময়কর। রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যে উন্নতি হবে তাতে দেশের চেহারাই বদলে যাবে- এ কথা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাই বলছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ৪০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। সীমিত আকারে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা সমুদ্রবন্দরে মালামাল ওঠানামার কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেল প্রকল্প, যা ২০১৯ সালে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। দোহাজারি গুনদুম রেল প্রকল্প, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট, স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’, ডিজিটার সেন্টার- এ ধরনের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়ে শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের উন্নয়নই তাঁর দর্শন।

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন এক হাজার ৪৬৬ ডলার। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে গেছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তিনি আমাদের স্বপ্ন দেখাতে পারছেন যে কীভাবে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে হয়। এই শেখ হাসিনাকে, তাঁর নেতৃত্বকে আমাদের অনেক বেশি প্রয়োজন। জাতিসংঘ শেখ হাসিনার শান্তির মডেল গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ পর্যন্ত ২৭টি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার ও পদক অর্জন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার দিয়েছে জাতিসংঘ। আমাদের মাথা উঁচু হযেছে সারা বিশ্বে।

উন্নয়ন, মানুষের অধিকার আদায়, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে অদম্য শেখ হাসিনা যে কতটা মানবিক, এটা আমরা সবাই জানি। রাজধানীর নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সব হারা তিন কন্যা রুনা, রত্না, শান্তাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে নিজের মেয়ের স্বীকৃতি দেন মমতাময়ী মা শেখ হাসিনা। নীরবে নিভৃতে তিনি হাজার হাজার অসহায় ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালান। লাখ লাখ দরিদ্র, অসহায়ের চিকিৎসার ব্যয় বহন করেন। তিনি অসাধারণ।

একজন সফল, দক্ষ ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। সফল মা, সফল অভিভাবক। সফল রাজনৈতিক নেতা, সংগঠক। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এমন দেশপ্রেমী নেতৃত্ব আসলেই খুব প্রয়োজন। আমরা চাই শেখ হাসিনা যেভাবে সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করছেন, তা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকুক।

লেখক- সম্পাদক, ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময়