নাজিরপুরে জামায়াতপন্থিদের হাত থেকে নৌকা রক্ষায় মানববন্ধন

পিরোজপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৭, ২২:৩৩ | প্রকাশিত : ২৪ মার্চ ২০১৭, ২০:৪১

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৩ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের (দেউলবাড়ী দোববড়া) আসন্ন নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত পরিবারের সন্তানকে নৌকা প্রতীক দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের জনগণ এতে অংশ নেয়।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় স্বাধীনতাবিরোধী ও জামায়াত পরিবারের হাত থেকে স্বাধীনতা স্বপক্ষের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ফিরিয়ে এনে প্রকৃত আওয়ামী লীগের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়।

শুক্রবার দুপুরে উপজেলার দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের বিতর্কিত জামায়াত পরিবারের সন্তান ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালী উল্লাহর গাওখালী বাজারস্থ বাস ভবনের সন্মুখ সড়কে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়।

দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়ন শাখার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জুর পরিচালনায় এ প্রতিবাদ সভা হয়।

সভায় মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বেপারী তার বক্তব্যে বলেন, ‘৭১ সালে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। তখন এ অঞ্চলে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে- তাদের অন্যতম এই ইউনিয়নের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মাওলানা মফিজুর রহমান। তার সন্তান ওয়ালী উল্লাহকে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন দেয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ।’

এছাড়া তার চাচা মীম ফজলুর রহমান জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে দুইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। তার ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম ফারুক একজন তালেবান নেতা হিসেবে আফগান যুদ্ধে নিহত হলে লাশ দেশে এনে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়। মীম ফজলুর রহমান ও ওয়ালী উল্লাহ তখন গর্ব করে বলতেন, তাদের পরিবারের সদস্য ফারুক আফগান যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওয়ালী উল্লাহ নিজেও সক্রিয়ভাবে সাঈদীর নির্বাচনে কর্মী হিসেবে কাজ করেছে অভিযোগ করেন বক্তারা।

তারা বলেন, সাঈদী এ এলাকার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বেশ কয়েকবার ওয়ালী উল্লাহর বাড়িতে নেতাকর্মীসহ ভূড়িভোজও করেছেন। স্বাধীনতাবিরোধী ও জামায়াত পরিবারের সন্তান সেই ওয়ালী উল্লাহর হাত থেকে নৌকা প্রতীক ফিরিয়ে এনে নৌকার সম্মান ও ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

সভার সভাপতি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেন বলেন, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা থেকে ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এফ এম রফিকুল আলম বাবুলের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হলেও কিভাবে একজন স্বাধীনতাবিরোধী ও জামায়াত পরিবারের সন্তানকে নৌকা প্রতীক দেয়া হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন খান বলেন, ওয়ালী উল্লাহর বাবা মাওলানা মফিজুর রহমান দেউলবাড়ী দোবরা ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার চাচা মীম ফজলুর রহমান ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন ও ১৯৯৬ সালে নেছারাবাদ-বানারীপাড়া আসনে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। এক বছর আগে ওয়ালী উল্লাহ আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অমূল্য রঞ্জন হালদার বলেন, আমি যখন নাজিরপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম তখন ওয়ালী উল্লাহকে কখনও আওয়ামী লীগ করতে দেখিনি। শুনেছি, এমপি আউয়ালের হাত ধরে এখন আ.লীগের সদস্য হয়েছে। আমি নাজিরপুরকে হাইব্রিড থেকে রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রেও বারবার বলেছি। তাছাড়া তার বাবা স্বাধীনতাবিরোধী ও চাচা জামায়াত নেতা ছিলেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তার পরেও নেত্রী যখন তাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন তা নিয়ে আমরা কোন মন্তব্য করতে পারি না।

এ বিষয়ে, জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ হাকিম হাওলাদারের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, মনোনয়ন বোর্ড আমাদের পাঠানো তালিকা আমলে না নিয়ে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে, ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় নেতাকর্মী সমর্থক ও মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। দলকে বিতর্কের মুখে ফেলেছে।

উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারেফ হোসেন খাঁন ঢাকা টাইমসকে জানান, ৩ নং দেউলবাড়ী দোবরা ইউনিয়নে মনোনয়ন বোর্ড যাকে (ওয়ালিউল্লাহ) দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে তিনি জামায়াত পরিবারের লোক। স্বাধীনতার সময় তার বাবা মফিজুর রহমান ‘শান্তি কমিটি’র সভাপতি ও তার আপন চাচা (ফজলুর রহমান) তৎকালীন বৃহত্তর বরিশাল জেলা জামায়াতের আমির ছিল। তারা জামায়াতের ব্যানারে দাড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচন করেছেন।

তিনি আরো বলেন, ওয়ালিউল্লাহ গত ৫/৬ মাস আগে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহকালে ১০ টাকা মূল্যের টিকিট (ফর্ম) কিনে প্রাথমিক সদস্য হয়েছে। আমরা ইউনিয়ন আ.লীগ সম্পাদক এফএম রফিকুল আলম বাবুলকে সমর্থন সম্বলিত ফর্ম স্বাক্ষর করে জেলায় পাঠিয়েছিলাম।

অপর দুটি আসন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নেত্রী এনএসআই রিপোর্টের’ উপর ভিত্তি করে তাদের মনোনয়ন দিয়েছেন বলে শুনেছি।

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :