গাজীপুরে জলাশয়ে ভূমিদস্যুদের থাবা

শাহান সাহাবুদ্দিন, গাজীপুর থেকে
| আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৭, ০৮:৩৫ | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০১৭, ০৮:৩৪

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের গাড়ারণ গ্রামে প্রায় দেড় একর জমির উপর ছিল জলাশয়। এক যুগ আগেও জলাশয়টিতে ছিল থইথই পানি। ছিল জলাশয় ভরা মাছ। গ্রামের মৎস্যচাষিরা জলাশয়টি ইজারা নিয়ে মৎস্যচাষ করতেন। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে রাক্ষুসে ভূমিদস্যুরা জলাশয়টি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে। এখন জলাশয়টির অস্তিত্ব শুধু নকশায়। বাস্তবে সেখানে ধু ধু মাঠ।

শ্রীপুর পৌর শহরের মিজানুর রহমান খান মহিলা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পাশে এক একর জমির উপর জলাশয়। কলেজ অধ্যক্ষ গত প্রায় দুই বছর আগে ওই জলাশয়টি দখল করেছেন বলে অভিযোগ রযেছে। এভাবে একের পর এক জলাশয় দখল হয়ে পড়ছে। ভূমিদস্যুদের দখলবাজিতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শ্রীপুর উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট খাস (সরকারের অধিকারভুক্ত) জলাশয়ের সংখ্যা ১৯১টি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে প্রতিবার প্রায় ৫০ ভাগ বাদ রেখে জলাশয় ইজারা দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে বাদ পড়া জলাশয়গুলো দখলবাজির শিকার হয়। ভূমিদস্যুদের দখলবাজি ও দুর্বিত্তায়নে আকার ও প্রকৃতিই পরিবর্তন শুধু নয়, জলাশয় বলে আর কিছু থাকে না। সেখানে তৈরি হয় স্থাপনা, শিল্প প্রতিষ্ঠান।

মৎস্যচাষিরা জানান, নিয়মিত ইজারা দেয়া হলেও দখল হয়ে পড়া জলাশয়গুলো ইজারায় তালিকাভুক্ত করা হয় না। ফলে ভূমিদস্যুরা আরও উৎসাহিত হয়ে জলাশয় দখলে নামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তেলিহাটী ইউনিয়নের মুলাইদ এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড শিল্প গ্রুপ প্রায় তিন একর জমির জলাশয় দখল করে নিয়েছে। জলাশয়ের চার পাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে কারখানার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এখন মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ চলছে।

এছাড়া গাজীপুর ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকায় এক একর জমির জলাশয় দখল করছেন ভূমিদস্যুরা। পাড় কেটে মাটি ভরাট করে জলাশয়টির পরিসরও ছোট করে ফেলা হয়েছে।

মাওনা ইউনিয়নের সিংদিঘী গ্রামে প্রায় দেড় একর জমির জলাশয় প্রকাশ্য দখল চলছে। গ্রামবাসী জানায়, একটি প্রভাবশালী চক্র জলাশয়ের পাড় থেকে কয়েকশ পুরনো গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন পাড় কেটে মাটি ভরাট করে জলাশয়টি দখল করে নিচ্ছে।

জলাশয়ের পাড়ে প্রায় একশ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন ২২টি ভূমিহীন পরিবার। দখলদার চক্রটি এখন ওই ভূমিহীনদেরও উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে।

ভূমিহীন মফিজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, জলাশয়টি ভরাট করে পাশের একটি কারখানায় ‘দখল’ বিক্রির পাঁয়তারা করছে চক্রটি। এতে ওই চক্রের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা যখন-তখন তাদের উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে।

ওই জলাশয়ের পাড়ে বাস করা ভূমিহীন নারী আজিরন বেওয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এইহানতে উইট্যা না গেলে আমগর লাশ নাকি হেয়াল-কুত্তায় (শিয়াল-কুকুরে) খায়বো।’

এদিকে বরমী ইউনিয়নের বরামা গ্রামে দখল হয়ে পড়ছে আরও একটি জলাশয়। গ্রামের প্রভাবশালী কয়েকজন জলাশয় ভাগ করে দখল করে নিয়েছে।

সর্বশেষ গত প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ফকির শিল্প গ্রুপের মালিক ফকির মো. মনিরুজ্জামান শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামে তিন দশমিক ৫২ একর জমির জলাশয় দখল করে নেয়।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, জলাশয় দখল চক্রের সঙ্গে ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। ভূমিদস্যুরা জলাশয় ভরাট করে কোটি কোটি টাকায় ‘দখল’ বিক্রি করছে।

সাতখামাইর গ্রামের মৎস্যচাষি রফিকুল ইসলাম আকন্দ ঢাকাটাইমসকে জানান, শ্রীপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন দেশীয় প্রজাতির মাছের তীব্র আকাল। চাহিদার সব মাছই এখন জলাশয় থেকে আহরিত। গাজীপুরের বাইরে থেকে দেশীয় মাছ সংগ্রহ করতে হয়।

এই মৎস্যচাষি দাবি করেন, দখল হয়ে পড়া জলাশয় উদ্ধার করে ফের খননের পর সহজ শর্তে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের ইজারা দেয়া হলে দেশীয় মাছের চাহিদা পূরণ সহজ হবে।

শ্রীপুর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেশে প্রাণিজ আমিষের বিরাট অংশ মাছ থেকে পূরণ করা হয়। জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধারের পর খনন করা হলে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়বে। এতে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ হবে।’

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম রেজা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘উপজেলায় প্রায় অর্ধেক জলাশয় মৎস্যচাষের অনুপযোগী। জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, সংরক্ষণের অভাবসহ নানা কারণে মোট সংখ্যার একটি বড় অংশ ইজারা থেকে বাদ রাখা হয়।’

জলাশয় দখলবাজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দখলবাজির কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে উচ্ছেদ করা হয়ে থাকে।’

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :