কুমিল্লায় আ.লীগ কার্যালয় সরগরম, ‘তালাবদ্ধ’ বিএনপিরটি

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০১৭, ১০:৩৩ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭, ১০:৪৬

বোরহান উদ্দিন ও তানিম আহমেদ, কুমিল্লা থেকে

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের বাকি আর পাঁচ দিন। কিন্তু প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন আর তিন দিন। শেষ মুহূর্তে ভোট চেয়ে প্রার্থী আর কর্মী-সমর্থকরা ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে।

ভোটের আগে সরগরম আওয়ামী লীগের কার্যালয়। তবে পুরোপুরি ভিন্ন চিত্র বিএনপি কার্যালয়ের। সেখানে সুনশান নীরবতা।

ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মী, অঙ্গ ও সহযোগী নেতাকর্মীদের পদভারে মুখর কান্দিরপার সংলগ্ন মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়। কিন্তু শহরের ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখা সংলগ্ন দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি অফিস বেশিরভাগ সময় থাকছে তালাবদ্ধ। শুক্রবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিএনপির দাবি, নেতাকর্মীদের চাপ বেশি থাকায় জেলা কার্যলয়ে স্থান সংকুলন হবে না, তাই এখানে আসা যাওয়া কম। তবে শহরের ধর্মসাগরের পাশে মনিরুল হক সাক্কুর প্রধান নির্বাচনী প্রচারণা কার‌্যালয়ে নেতাকর্মীদের আনাগোনা বেশি। সেখান থেকেই সব কিছু দেখভাল করা হচ্ছে। এটি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াসিনের কার্যালয় হিসেবে পরিচিত।

আগামী ৩০ মার্চ ভোটকে সামনে রেখে মোট চারজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু।

প্রচার শুরুর পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আলাদা দল গঠন করে প্রচারণা শুরু করেন। অনেকে নিয়মিত কুমিল্লায় থেকে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। কেউ কেউ আবার ঢাকা থেকে নিয়মিত যাচ্ছেন, আসছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে (এটিই সীমার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়) গিয়ে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের ভিড়। সামনে প্যান্ডেলে রাখা চেয়ারে ছোট ছোট ভাগে বসে কথা বলছেন। ভেতরে মূল ভবনে বসেছিলেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। স্থানীয় নেতারা এসে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। যারা আসছেন তাদের কাছ থেকে সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমকে।

সার্বিক অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে গোলাম রাব্বানী চিনু ঢাকাটাইমসকে বলেন, নেতাকর্মীরা সারাদিন মাঠে প্রচার প্রচারণায় ছিল। এর মধ্যে অনেকেই ঘরে ফিরে গেছে আর কিছু নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ে এসে আগামীকালের পরিকল্পনা জেনে নিচ্ছেন।

অন্যদিকে রাত আটটার দিকে সাক্কুর প্রধান নির্বাচনী পরিচালনার কার্যালয়ে গিয়ে পুরোপুরি ভিন্নচিত্র দেখা গেছে। সামনের খোলা জায়গায় দুইভাগে ভাগ হয়ে জন বিশেক নেতাকর্মীকে খোশগল্প করতে দেখা যায়। পরে ভেতরে ঢুকে সামনের বড় রুমে তিনজনকে কাগজ নিয়ে কিছু লিখতে দেখা যায়। বড় রুম ডিঙিয়ে সংরক্ষিত রুমের মধ্যে একজনকে ছোপায় বসে মোবাইলে কথা বলতে দেখা গেছে। অন্য একজনকে চা বানাতে ব্যস্ত দেখা যায়।

সেখানে উপস্থিতে একজন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর তেমন কেউ ছিলো না। যারা ছিলো তারাও চলে গেছে। সবাই কাজে ব্যস্ত। সকালে আসলে নেতাদের পাবেন।’

পরে ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখার পাশে অবস্থিত দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে এসে দেখা যায় মূল ফটকে লোহার গেইটে তালা দেয়া। সামনে দুটি প্লাস্টিকের বস্তায় মালামাল ভরা। সামনে দাঁড়িয়ে ‍দুই ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখা গেলেও ছবি তুলতে তারা চলে যান।

পাশের একজন দোকানির কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য অফিস খোলে। পরে আবার বন্ধ করে দেয়। এখানে নেতাকর্মীদেরও তেমন আসা যাওয়া চোখে পড়ে না।’

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াসিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার ঘনিষ্ঠ ছাত্রদলের এক নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শুরু থেকেই সাক্কু ভাইয়ের জন্য দিনরাত মাঠে থাকছেন ইয়াসিন ভাই। এবার আর কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যে কারণে তার সঙ্গে কথা বলা কষ্টকর। তবে যতটুকু জানি ছোট জায়গা হওয়ায় কার‌্যালয়টি নির্বাচনের কাজে তেমন ব্যবহার করা হচ্ছে না। এরবাইরে আর কিছু না।’

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/টিএ/বিইউ/ডব্লিউবি)