বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ উৎপাদন করছে ওয়ালটন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০১৭, ১২:১০

দেশে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে শিল্প-কারখানা বিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়লেও চাহিদায় এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং খরচ সহনীয় রাখতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবহারের গুরুত্বও বেড়েছে অনেক। এসব দিক মাথায় রেখে ওয়ালটন ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তির ফ্রিজ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। একইসঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষায় ফ্রিজের কম্প্রোসারে ব্যবহার করছে আর ৬০০এ গ্যাস। ধারণা করা হচ্ছে, ইনভার্টার প্রযুক্তির ফ্রিজ ব্যবহার করলে বছরে গ্রাহকের সাশ্রয় হবে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে বিরাজমান ঘাটতিও কমে আসবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারে এইচসিএফসি এবং সিএফসিমুক্ত আর৬০০এ গ্যাসযুক্ত ৩০টিরও বেশি মডেলের ফ্রস্ট ও নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে ওয়ালটন। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার প্রযুক্তির ৪৩০ লিটার, ৪৬৭, ৫১২, ৫২০, ৫২৬, ৫৫৫, ৫৭৫ ও ৫৮৫ লিটারের ১৫টি মডেলের নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ। আরও রয়েছে ৫০, ১১৫, ১৬৫, ২১৮, ৩১২, ৩৩৭, ৩৪৮ ও ৩৫৮ লিটারের ১০টি মডেলের ফ্রস্ট ফ্রিজ; ৮ মডেলের নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ। বাজারে আসছে আরও নতুন তিন মডেলের ইনভার্টার প্রযুক্তির আর৬০০এ গ্যাসসমৃদ্ধ নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ। ফ্রস্ট ফ্রিজ আসবে আরো তিনটি মডেলের।

ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে প্রযুক্তি পণ্য সহজলভ্য হওয়ায় ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবহার ও চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। বিশেষ করে, দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটায় এখন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঘরেই ফ্রিজের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ ব্যবহারের প্রতি মানুষের আগ্রহও বেড়েছে।

ইনভার্টার হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের লেটেস্ট প্রযুক্তি। যা ফ্রিজের কম্প্রেসারে ব্যবহৃত হয়। এতে মাদারবোর্ডের মাধ্যমে কম্প্রেসারের গতি নিয়ন্ত্রিত হয়। যখন প্রয়োজন পড়ে কেবল তখনই বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় এবং প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। এছাড়াও, সাধারণ ইন্ডাকশন প্রযুক্তির তুলনায় ইনভার্টার প্রযুক্তির কমপ্রেসার চালু হতে প্রায় ৮-১০ গুণ কম বিদ্যুৎ লাগে, চলে অতি লো ভোল্টেজেও।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, ইনভার্টার হচ্ছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। যে কোনো মোটরেই ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এর কার্যক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি এনার্জি সাশ্রয় হয়। তাই বর্তমানে বড় বড় শিল্প কারখানার মেশিনারিজে ব্যবহার করা হচ্ছে ইনভার্টার মোটর। এছাড়া ফ্রিজ ও এসির কম্প্রেসারে ব্যাপকভাবে ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইনভার্টার কিভাবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে তা ব্যাখ্যা করে ওয়ালটন আরএন্ডডি বিভাগের প্রধান তাপস কুমার মজুমদার বলেন, ফ্রিজের অভ্যন্তরে সংরক্ষিত খাবারের পরিমাণ অথবা রুমের তাপমাত্রা অনুযায়ী ইনভার্টার প্রযুক্তির কম্প্রেসারের গতি নিয়ন্ত্রিত হয়। যা চলে মাদারবোর্ডের মাধ্যমে। প্রয়োজন না হলে কম্প্রেসার চলে না। ফলে বিদ্যুৎ খরচ অনেক কম হয়। তিনি আরও বলেন, ইনভার্টারে কুলিং পারফরমেন্সের কোনো তারতম্য না থাকায় খাবারের মান অক্ষুন্ন থাকে। ইনডাকশন কম্প্রেসারের তুলনায় ইনভার্টার কম্প্রেসার কম ঘুরে বিধায় এর কার্যক্ষমতাও প্রায় দ্বিগুণ।

ওয়ালটন সোসিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, আর৬০০এ হচ্ছে পরিবেশ-বান্ধব রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। এটি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে। কিন্তু ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে একমাত্র ইনভার্টার প্রযুক্তি। তিনি আরও বলেন, কম্প্রেসারে আর৬০০এ গ্যাস ব্যবহারের জন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এই গ্যাস অতিমাত্রায় দাহ্য। কম্প্রেসারে অতি ক্ষুদ্র লিকেজও ভয়াবহ বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ডের কারণ হতে পারে।

তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে একমাত্র ওয়ালটনই ইউএনডিপি, ইউএসএইড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আর্থিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে নিজস্ব কারখানায় স্থাপন করেছে আর৬০০এ গ্যাসযুক্ত ফ্রিজের উৎপাদন লাইন। ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সর্বোচ্চ সতর্কতায় তৈরি হচ্ছে ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব আর৬০০এ গ্যাসযুক্ত ওয়ালটন ফ্রিজ।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাধারণত একটি ফ্রিজের মাসিক বিদ্যুৎ বিল গড়ে প্রায় ৩০০ টাকা। সেই হিসেবে পুরো বছরে আসে ৩৬০০ টাকা। গত বছর সারা দেশে ফ্রিজ বিক্রি হয়েছিল প্রায় ২০ লাখ। এসব ফ্রিজ যদি ইনভার্টার প্রযুক্তির হয়, তাহলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে করে পুরো বছরে একটি ফ্রিজে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে ১৮০০ টাকা। আর ২০ লাখ ফ্রিজের বাৎসরিক বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয় হবে ৩৬০ কোটি টাকা।

ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :