নির্বাচনী ব্যবস্থার ত্রুটি দূর কুমিল্লা থেকেই: সিইসি
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করার মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থার ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করতে চান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। ৩০ মার্চের ভোটকে সামনে রেখে কুমিল্লায় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
ভোটের ছয় দিন আগে শনিবার নির্বাচনী এলাকায় যান সিইসি। এ সময় তিনি কথা বলেন নির্বাচনী ব্যবস্থার ত্রুটি দূর করার বিষয়েই। কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এই মতিবিনিয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রথম কুমিল্লায় আসলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠে বাংলাদেশে। তবে ১৯৯১ থেকে শুরু করে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারের একতরফা ভোট বাড়ে) নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন উঠেনি। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আবারও ৮০ দশকের পরিস্থিতি ফিরে আসে।
এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন। এই কমিশনের অধীনে ১১টি উপজেলায় এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপনির্বাচনে ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ। গত কয়ের বছর ধরে নির্বাচনী ব্যবস্থায় যে ত্রুটিগুলো দেখা গেছে, সেগুলো এই নির্বাচনগুলোতে দেখা যায়নি।
নির্বাচন নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, ‘অতীতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পরিস্থিতি যেভাবে যেভাবেই হোক না কেন কোথাও না কোথাও কিছু ত্রুটি ও বিতর্কিত হয়েছে। সেই অবস্থা থেকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারবো। যদি আপনাদের সহযোগিতা থাকে।’
নির্বাচনী ব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর কাজ কুমিল্লা থেকেই শুরু হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রত্যেকটি গণতন্ত্রমনা মানুষ বিশ্বাস করে দেশে পরিপূর্ণ গণতন্ত্র ফিরে আসুক। কুমিল্লা থেকে সেই যাত্রা শুরু হোক। সাফল্যের মাধ্যমে সেই যাত্রা শুরু হোক। আগামী পাঁচটি বছর দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার করছি।’
নির্বাচনে ব্যক্তি বা দলীয় প্রভাবকে প্রশ্রয় না দিয়ে কঠোর থাকতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেন নুরুল হুদা। বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হলেন প্রভাবশালী ব্যক্তি। এর বাইরে কেউ কোনো ধরণের প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে তাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’
বক্তব্যের শুরুতে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসারদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনী দায়িত্ব একে পবিত্র দায়িত্ব মনে করে কাজ করবেন। আইনের মধ্যে যা আছে সেই আলোকে চলবেন। আমরা কারো পক্ষের নই। সংবিধান অনুয়ায়ী যার যে দায়িত্ব সেটা নির্ভয়ে পালন করবেন। যদি কেউ অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে চায় তা বরদাশত করবেন না।’
পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেবে বলেও নিশ্চয়তা দেন সিইসি। বলেন, কেউ কোথাও কোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হলে তাৎক্ষণিকভাবে জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চাকরি জীবনে কুমিল্লায় জেলা প্রশাসক ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে দায়িত্ব পালন করেছি তখন যারা আজকে উপস্থিত আছেন তাদের অনেকের সঙ্গে বিভিন্ন সময় দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। সুতরাং এখানকার মানুষ, পরিবেশ সবকিছু আমার নখদর্পনে। আশা করি কুমিল্লার মানুষ অন্যায়ভাবে কোনো আবদার করবেন না, কোনো বিশৃঙ্খলা করবেন না।’
জেলা প্রশাসক জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান, পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, বিজিবির ১০ ব্যাটালিয়ানের কমান্ডার আহসানুজ্জামান, র্যাব-১১র মোস্তফা কায়জার, আনসারের আ খ ম আমিনুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার রকিব উদ্দিন মণ্ডল।
ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/প্রতিনিধি/বিইউ/ডব্লিউবি
মন্তব্য করুন