তিস্তা চুক্তি মমতার সঙ্গে কথা বলেই হবে: দিল্লি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সই করার আগে তার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হবে। বিবিসি-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা নদীর জলবন্টন চুক্তি নিয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনায় বসবে ভারত সরকার।
মমতা দুদিন আগে একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ২৫ মে তিস্তার জলবন্টন চুক্তি সাক্ষরিত হবে বলে তিনি শুনেছেন, কিন্তু তার সঙ্গে কেউ কোনও আলোচনা করে নি।
তিনি বলেন, ‘হয়তো সব আলাপ আলোচনা করেই নেওয়া হয়েছে। আমি তো শুনেছি ২৫ মে বাংলাদেশে গিয়ে নাকি জলবন্টন চুক্তি সই হবে। অথচ আমি কিছুই জানি না এখনও পর্যন্ত। কেউ আমাকে কিছু জানায় নি। তোমরা যদি সব কিছু রেডি করে আমাকে বলো স্ট্যাম্প মারার জন্য, তাহলে আমি বলব সরি! আমাকে রাজ্যের স্বার্থ দেখতে হবে।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল বাগলে জানিয়েছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যটা নিয়ে কিছু বলা সমীচীন হবে না। তবে এটা বলতে পারি যে সরকারের কাজের অভিমুখ হল সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এগোন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যেভাবে সবপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে এগোন হয়, এক্ষেত্রেও সেভাবেই এগোন হবে।’
শুক্রবারের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে বাগলে স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণ করে যেভাবে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে, তার উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ‘স্থলসীমান্ত চুক্তি সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ফলেই সম্ভব হয়েছে। প্রত্যেক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই এগোন হয়েছিল। সেজন্যই সাফল্যের সঙ্গে ওই চুক্তি রূপায়ণ করা গেছে।’
তিস্তা চুক্তি নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু এখনই যে বলার সময় আসে নি, সেটা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাগলে জানান, ‘ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব আর পারস্পরিকভাবে লাভজনক সম্পর্ক এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সেই ভিত আরও শক্ত হবে।’
তিস্তা নদীর জল বন্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে আলাপ আলোচনা চললেও ২০১১ সালে মমতা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি ওই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন। তার মতে, ‘তিস্তা নদীর জল বন্টন নিয়ে চুক্তি করে বাংলাদেশকে জল দিতে হলে তার রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা চাষের পানি পাবেন না।’
সব সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও নিজের রাজ্যের কৃষকদের স্বার্থ দেখাটাই তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তার জলবন্টন কিভাবে করা যেতে পারে বা আদৌ চুক্তি করা ঠিক হবে কী না, তা নিয়ে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যান রুদ্রকে দিয়ে একটি সরকারি রিপোর্টও তৈরি করিয়েছেন মমতা। যদিও সেই রিপোর্টের বিস্তারিত কখনই প্রকাশ করা হয় নি।
(ঢাকাটাইমস/২মার্চ/জেএস)