সেই কালরাতে প্রথম প্রতিরোধ রাজারবাগে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০১৭, ২১:৫৯

২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে নারকীয় গণহত্যা শুরু করে তার প্রথম টার্গেট ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন। কিন্তু পুলিশের অকুতোভয় সদস্যরা রক্ত দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে।

সেদিন শহরজুড়ে পুলিশের ভূমিকা আর রাজারবাগের চিত্র কেমন ছিল?

বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতাকামী সর্বস্তরের বাঙালির মতো পুলিশের মধ্যেও ভেতরে ভেতরে মানসিক প্রস্তুতি ছিল পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিরোধের। ফলে তারা শহরজুড়ে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতেন এবং তা পাঠাতে থাকেন রাজারবাগে। পাকিস্তানি বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরোনোর খবরে পুলিশ লাইনসের সদস্যরা তাৎক্ষণিক সংগঠিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন প্রতিরোধের।

প্রায় চার ঘণ্টার প্রতিরোধ যুদ্ধে পুলিশের অর্ধশতাধিক সদস্য শহীদ হন। বন্দি হন প্রায় দেড় শ জন। পাকিস্তানি বাহিনীর মর্টারের আক্রমণের মুখে পিছু হটে অনেক পুলিশ সদস্য অস্ত্র, গোলাবারুদসহ রাজারবাগ ত্যাগ করেন।

তথ্য পাঠাতে থাকে পেট্রোল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে নানা রকম সংবাদ আসতে থাকে। পুলিশ কন্ট্রোলরুম থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল পার্টি পাঠানো হয়। তার শহরের পরিস্থিতির তথ্য বেতার মারফত থাকে পুলিশ লাইনসে।

পুলিশি সূত্রসহ নানা রাজনৈতিক সূত্র থেকে সংবাদ আসতে থাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আক্রমণ চালানো হতে পারে। এ সংবাদে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা বিক্ষিপ্তভাবে নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ এবং তাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে টহলরত একটি পুলিশ পেট্রোল পার্টি (চার্র্লি-৭) বেতার মারফত জানায়, সেনাবহিনীর একটি বড় কনভয় যুদ্ধসাজে শহরের দিকে এগুচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে পুলিশ পেট্রোল পার্টি সংবাদ পাঠায়, রমনা পার্কের (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সেনাবাহিনীর অন্তত ৭০-৮০টি সাঁজোয়া গাড়ি পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছে।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থানরত পেট্র্রোল পার্টির সদস্যরা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ির বহরকে ওই এলাকা অতিক্রম করতে দেখে। পুলিশ পেট্র্রোল কারটি ভিন্ন পথে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পৌঁছে এ সংবাদ দেয়। রাজারবাগে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা প্রতিরোধযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

রক্তাক্ত প্রতিরোধ রাত সোয়া ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়িগুলো রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের চারদিকে অবস্থান নিতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনীর এই আক্রমণের সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে সারা দেশের জেলা ও মহকুমায় পাঠানো হয় পুলিশ বেতার মারফত।

এর আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বেজে ওঠে অস্ত্রাগারের ঘণ্টা (পাগলা ঘণ্টা)। বিভিন্ন ব্যারাক ও ভবনে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা বেরিয়ে এসে একত্র হন সেলামি মাঠে। অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিতরণ করা হয় সবার মধ্যে। এরপর পুলিশ লাইনসের চারদিকে, ব্যারাক ও বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা।

শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ আসতে থাকে। রাজারবাগে পুলিশ সদস্যরা শ্বাসরুদ্ধ পজিশন নিয়ে আছেন শত্রুর প্রতিরোধে। পাকসেনাদের কনভয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের মেইন গেটে এসে পৌঁছায়।

পুলিশ লাইনসের দক্ষিণ-পূর্ব দিক (পুলিশ হাসপাতাল কোয়ার্টার সংলগ্ন) থেকে প্রথম গুলিবর্ষণ হয়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্যারেড গ্রাউন্ডের উত্তর-পূর্ব দিক (শাহজানপুর ক্রসিং) থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। ব্যারাকের ছাদে অবস্থানরত বাঙালি পুলিশ সদস্যরা পাকসেনাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। শুরু হয় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ। বাঙালি পুলিশ সদস্যদের মরণপণ প্রতিরোধে কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় ট্যাংক ও কামান সজ্জিত পাক বাহিনী। এর পরই পাকিস্তানি সেনারা মর্টার ও ভারী মেশিনগান দিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পিআরএফের চারটি ব্যারাকে আগুন ধরে যায়। পাকিস্তানি বাহিনী ট্যাংক বহরসহ প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢুকে পড়ে।

পাকিস্তানি বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা তাদের কৌশল পরিবর্তন করেন। একটি গ্রুপ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ মালিবাগ, চামেলীবাগ প্রান্ত দিয়ে ঢাকা শহরে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের আর একটি দল সমান তালে লড়ে চলে পাকিস্তানিদের ট্যাংক, কামান আর মর্টারের বিরুদ্ধে। চার ঘণ্টার মতো চলে যুদ্ধ।

সেদিনের মরণপণ লড়াই সম্পর্কে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, দেশেত্মবোধ থেকে পুলিশ সেদিন জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেন। তাদের বুকে ছিল দেশকে স্বাধীন করার স্পৃহা। ওই সময় পুলিশের হাতে বাংলাদেশের পতাকাও দেখা গেছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/এএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :