গাজীপুর বহু মামলার কূল পাচ্ছে না পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক,শাহান সাহাবুদ্দিন,ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ মার্চ ২০১৭, ০৮:১০ | প্রকাশিত : ২৬ মার্চ ২০১৭, ০৭:৫১

গাজীপুরে একের পর এক ঘটছে খুনের ঘটনা। নানা জায়গায় উদ্ধার হচ্ছে লাশ। এসব ঘটনায় মামলা হচ্ছে থানায়। কিন্তু চাঞ্চল্যকর বহু হত্যা মামলা তদন্তে কোনো কূল-কিনারা করতে পারছে না পুলিশ।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে পুলিশ একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের আগেই ঘটছে আরেকটি হত্যাকাণ্ড। ১৯ বছর আগে গাজীপুরের ছয়দানা এলাকার হামিদ (১৮) নামের এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় করা মামলার আসামি গ্রেপ্তার তো হয়ইনি, একই কায়দায় খুন হলেন মামলার বাদী মা।

জেলার বিভিন্ন থানায় করা অনেক হত্যা মামলার বয়স এক যুগ পেরিয়ে গেছে। এভাবে তৈরি হচ্ছে মামলাজট। দীর্ঘদিন মামলা চালিয়ে নিহতের স্বজনদের অনেকের ভিটেমাটি বিক্রির উপক্রম হয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা যায়, গত বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তিন মাসে জেলায় ১১টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ছাড়া, ওই তিন মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-শিশু ও কিশোরসহ ১৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আর চলতি বছর একই সময়ে জেলায় নয়টি হত্যাকাণ্ড ছাড়াও নারী ও শিশুসহ ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে।

এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে গাজীপুরে অন্তত ১০ জন নারীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় পুলিশ অপমৃত্যু মামলা করলেও সেগুলোর তদন্তে পুলিশের অগ্রগতি নেই। ফলে অপমৃত্যু মামলার ফাইল থানায় বস্তাবন্দি হয়ে রয়েছে।

জেলায় সংগঠিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ দ্রুত সময়ে আসামি গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার ফল মেলেনি বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।

জয়দেবপুর থানায় করা একটি হত্যা মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৯ বছর আগে গাজীপুরের ছয়দানা এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের হামিদ (১৮) নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত হামিদ ঝাজর এলাকার মৃত আফসার উদ্দিন ওরফে হারু মিয়ার ছেলে। এ ঘটনার পর নিহতের মা হামিদা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে জয়দেবপুর থানায় মামলা (নং-৩৫,তাং-১৭/৯/৯৮) করেন। কিন্তু দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও ওই হত্যার রহস্য উৎঘাটন কিংবা হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

উপরন্তু হামিদ হত্যা মামলার বাদী তার মা হামিদা বেগমকেও চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে পারুল বেগম বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মামলা (নং-১০৬/১৭) করেন। ভাই ও মায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অসহায় দুই বোন অভাব-অনটন ও আতঙ্কে দিনযাপন করছে।

পারুল বেগম জানান, বড় ভাইয়ের পর তার মাও খুন হওয়ায় তারা আতঙ্কের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। আসামি গ্রেপ্তার কিংবা বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি অভিযোগ করেন, ‘এই হত্যা মামলার আসামিদের পরিবারের সঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার গোপন যোগসাজশ রয়েছে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রায়ই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম জাহির করেন। আসামি গ্রেপ্তারের কথা বললে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে আসামি ধরে দিতে বলে। অথচ আসামিদের ভয়ে আমার প্রাণ যায়যায়।’

তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা জয়দেবপুর থানার এসআই পরিমল বিশ্বাস অভিযোগ নাকচ করে বলেন, ওই মামলার আসামিদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।

অন্যদিকে, জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামের সাথে হামিদা বেগম হত্যা মামলার বিষয়ে আলাপকালে তিনি মামলার বাদীকে তার সাথে দেখা করার পরামর্শ দেন। এ সময় তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তেলে-বেগুণে চটে গিয়ে বলেন,‘কবিতা শোনার সময় নাই।’

গাজীপুর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সবুর (দক্ষিণ) ও মোহাম্মদ রাসেল শেখ (উত্তর)ঢাকা টাইমসকে জানান, একই পরিবারে দুজন সদস্য নৃশংসভাবে খুন হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। মামলার তন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে দ্রুত সময়ে আসামি গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানান তারা।

(ঢাকাটাইমস/২৬মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :