ট্যানারির বকেয়া জরিমানা নিয়ে শুনানি বৃহস্পতিবার
পরিবেশের ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানার বকেয়া ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে মালিকদের করা আবেদনের বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার শুনানি হবে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার এ দিন নির্ধারণ করেন। একই সঙ্গে ওই দিন ট্যানারি কারখানাগুলোকে জরিমানা করে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনেরও শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছে আদালত।
আদালতে ট্যানারি মালিকদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন মনজিল মোরসেদ।
গত ২ মার্চ ১৫৪ ট্যানারিকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের এই বকেয়া টাকা জমা দিতে বলা হয়। হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। আবেদনটির উপর শুনানি শেষে গত ১৯ মার্চ চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একইসঙ্গে মামলাটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।
এর আগে গত ১২ মার্চ হাজারীবাগ থেকে স্থান্তর না হওয়া ট্যানারিগুলোর কার্যক্রম বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ট্যানারি মালিকদের পক্ষ থেকে করা আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৬ মার্চ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের ডিভিশন বেঞ্চ এক আদেশে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ট্যানারি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা হয়।
আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ট্যানারি শিল্প কারখানা সরিয়ে নিতে সরকার নতুন করে সময়সীমা দেয়। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে বেলা।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০১ সালে ট্যানারিশিল্প হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওই আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুরির মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারিশিল্প অন্যত্র সরিয়ে নিতে ২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্ট ফের নির্দেশ দেয়। সরকারপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরে ওই সময়সীমা কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। এরপরও ওই এলাকা থেকে ট্যানারিশিল্প কারখানা সরিয়ে নেয়নি। নতুন করে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাজারীবাগ থেকে যেসব ট্যানারি স্থানান্তর করা হবে না, আগামী ১ মার্চ থেকে ওইসব ট্যানারির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।
এর আগে গত ২ মার্চ হাজারীবাগের ১৫৪টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জরিমানা বাবদ পাওয়ানা ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদের এক আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত।
২০১৬ সালের ১৬ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ১৫৪টি ট্যানারি কারখানাকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে ওই বছরের ১৮ জুলাই ১৫৪ ট্যানারি কারখানাকে দৈনিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা থেকে কমিয়ে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয় আপিল বিভাগ। জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলেছিল আদালত। শিল্প সচিবকে এ বিষয়ে তদারকি করতে নির্দেশ দেয় আদালত।
(ঢাকাটাইমস/২৭ মার্চ/এমএবি/জেডএ)