১০ টাকার চালে স্বচ্ছতা ফিরেছে রংপুরে

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর
 | প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০১৭, ০৮:১২
ফাইল ছবি

হতদরিদ্রদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহায়তা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির প্রথম পর্বে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও দ্বিতীয় পর্বে অনেকটাই স্বচ্ছতা ফিরে এসেছে। চলতি মাসের শুরু থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রায় এক মাসে এই কর্মসূচি নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কাজ থাকে না-বছরের এমন পাঁচ মাসের প্রতি মাসে হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে ১০ টাকায় ৩০ কেজি চাল বিতরণ করা হয় এই কর্মসূচিতে।

প্রথম পর্ব সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে এই কর্মসূচিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। হত দরিদ্রদের বদলে সম্পদশালীদেরকে চাল নেয়া, ওজনে কম দেয়া, উপকারভোগীদের সই সকল করে চাল আত্মসাৎ বা পুরো চালই বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিষয়টি নিয়ে সংসদেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির পর প্রশাসন ব্যবস্থাও নেয়। ৫০ লাখ কার্ডের মধ্যে দুই লাখ ১৮ হাজার ৮৬৫টি কার্ড বাতিল হয়। চাল বিতরণে নিয়োগ দেয়া পরিবেশকদের মধ্যে ১৩০ জনকে বাতিল করে দেয়া হয়। ৩৭ জনের বিরুদ্ধে করা হয় বিভাগীয় মামলা।

পাশাপাশি এবার ৫০ লাখ উপকারভোগীর তালিকাও প্রকাশ করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (িি.িফমভড়ড়ফ.মড়া.নফ)এই তালিকা দেয়া আছে।

সবচেয়ে বেশি কার্ড বাতিল হয় রংপুরে, সব মিলিয়ে ৭০ হাজার। এর আগের তালিকায় দুর্বলতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মার্চ ও এপ্রিল-এই দুই মাসের জন্য বিতরণ কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা এসেছে সেখানে।

প্রথম ধাপে গরিবের চাল প্রভাবশালীদের ঘরে গেলেও এবার প্রকৃত গবিররাই পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বলছেন, চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে জেলার ৭৬ টি ইউনিয়নে এক যোগে চাল বিতরণ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ উঠেনি।

কর্মকর্তাদের দাবি, গতবার যেসব অভিযোগ উঠেছে এবার বিবেচনা কওে সমাধান করা হয়েছে। এরপরে দরিদ্রদের হাতে কার্ড পৌছে দেয়া হয়েছে। সে কারণে অনিয়মটা বন্ধ হয়েছে।

রংপুর খাদ্য অফিস জানায়, দ্বিতীয় ধাপে রংপুরের আট উপজেলায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৬১ জন ভোক্তা দশ টাকায় কেজি দরে চাল ক্রয় করছেন। যার মাসিক চাহিদা চার হাজার ৩৫১. ৮৩ মেট্রিক টন। এই চাল ২৫৬ জন পরিবেশকের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে।

সুত্রটি বলছে, রংপুর সদর উপজেলায় পাঁচ ইউনিয়নে ১৭ জন পরিবেশকের মাধ্যমে নয় হাজার ৬৮০ জন, বদরগঞ্জ উপজেলায় ১০ ইউনিয়নে ৩৯ পরিবেশকের মাধ্যমে ১৯ হাজার ৯৬২ জন, মিঠাপুকুর উপজেলায় ১৭ ইউনিয়নে ৫৩ পরিবেশকের মাধ্যমে ২৯ হাজার ৮০১ জন, পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৫ ইউনিয়নে ৪৩ পরিবেশকের মাধ্যমে ২৪ হাজার ৩৬ জন, তারাগঞ্জ উপজেলায় পাঁচ ইউনিয়নে ১৮ পরিবেশকের মাধ্যমে নয় হাজার ১১১ জন, গংগাচড়া উপজেলায় নয় ইউনিয়নে ৩৩ পরিবেশকের মাধ্যমে ১৯ হাজার ২৬৩ জন, কাউনিয়া উপজেলায় ছয় ইউনিয়নে ১৯ পরিবেশকের মাধ্যমে ১২ হাজার ৫৫৭ জন, পীরগাছা উপজেলায় নয় ইউনিয়নে ৩৪ পরিবেশকের মাধ্যমে ২০ হাজার ৬৫১ জন ১০ টাকায় চাল পাচ্ছেন।

সপ্তাহে তিনদিন অর্থাৎ সোম, মঙ্গল ও বুধবার আবার কোন কোন উপজেলায় মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এই চাল বিতরণ করা হয়। সেখানে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, চেয়ারম্যান, পুলিশ এবং খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘এবার কার্ড বিতরণের আগে পুলিশ এবং খাদ্য বিভাগের স্থানীয় ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে প্রকৃত অসহায়দের তালিকা করে তাদের হাতেই কার্ড দিয়েছেন। সে কারণে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। আমরা শক্ত অবস্থানে থেকেই চাল বিতরণ করছি। ’

রংপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা শাহজাহান ভুইয়া ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার আমরা মাঠে কাজ করছি। আমাদেরকে প্রশাসন সহযোগিতা করেছে, সহযোগিতা করেছে স্থানীয়রাও। সে কারণে এবার অনিয়ম বন্ধ করতে পেরেছি।’ এবার এতদিনে যেহেতু কোনো অভিযোগ উঠেনি, তাই বাকি সময়েও অভিযোগ উঠবে না বলে আশা করেন তিনি।

ঢাকাটাইমস/২৮মার্চ/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :