বিখ্যাত ১৪ রকম মিষ্টির কথা

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০১৭, ১৩:০৬

কোনো উপলক্ষ পেলেই বাঙালির মিষ্টি না হলে কি চলে! মিষ্টিমুখ বলে একটা কথা আছে না! মিষ্টি ঠিক যেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। নানা পালাপার্বণে মিষ্টি যেন থাকা চাই-ই চাই। মিষ্টিমুখ ছাড়া উৎসব যে বেমানান! রসগোল্লা, পান্তুয়া, চমচম যে আমাদের কতকালের ঐতিহ্য। হাতের কাছেই এখন মিষ্টির দোকান। সেখানে থরে থরে সাজানো মিষ্টি। কিন্তু একবার দেশটার সব জেলাগুলোর দিকে তাকান না! কত স্বাদের আর নামের মিষ্টি সেখানে। চলুন জেনে আসি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিখ্যাত সব মিষ্টি সম্পর্কে:

. নাটোরের কাঁচাগোল্লা

মিষ্টি বললেই প্রথমে মুখে নাম আসবে নাটোরের কাঁচাগোল্লার। নাটোরের কাঁচাগোল্লা শুধু কোনো সাধারণ মিষ্টি নয়। এটি নাটোরের ঐতিহ্য। কাঁচাগোল্লা কিন্তু গোল নয় আবার কাঁচাও নয়, লম্বাও নয়। তবুও নাম তার কাঁচাগোল্লা। খাঁটি দুধের ছানা ও চিনি কাঁচাগোল্লার প্রধান উপাদান। ১ কেজি কাঁচাগোল্লা তৈরিতে প্রায় এক কেজি কাঁচা ছানা এবং ৪০০-৫০০ গ্রাম চিনির দরকার পড়ে। এ কাঁচাগোল্লায় একটি মিষ্টি কাঁচা ছানার মতো গন্ধ পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো মিষ্টিতে পাওয়া যায় না।

. গাইবান্ধার রসমুঞ্জরী

স্বাদ ও গুণাগুণের কারণে গাইবান্ধার রসমঞ্জরীর রয়েছে আলাদা সুনাম। রসালো ঘন দুধের ক্ষীরের সঙ্গে খাঁটি ছানায় তৈরী মারবেল সদৃশ্য ছোট ছোট গোলাকার রসগোল্লা সমন্বয়ে তৈরি হয় এই মিষ্টি।

. টাঙ্গাইলের চমচম

টাঙ্গাইলের চমচম সারা দেশেই বিখ্যাত তার ভুবন ভোলানো স্বাদের জন্য। ব্রিটিশ আমলেও এ চমচমের স্বাদ গোটা উপমহাদেশেই বিখ্যাত ছিল। এখনও তেমনি বিখ্যাত। ধারণা করা হয় যশোর হালই নামের মিষ্টির এক কারিগর এ চমচমের স্রষ্টা। এ চমচমগুলো সাধারণত লালচে রঙের যার উপড়িভাগে চিনির গুড়ো থাকে। আর ভেতরের অংশ অনেক রসালো আর নরম। চমচমের গুণগত মান আর স্বাদ মূলত পানি আর দুধের অনুপাতের ওপরই নির্ভর করে।

. নওগাঁর প্যারা সন্দেশ

ঠিক কখন থেকে নওগাঁয় এ প্যারা সন্দেশের প্রচলন শুরু হয় তা স্পষ্টভাবে বলা যায় না। প্রথম দিকে এ প্যারা সন্দেশ পূজা মন্ডপে দেব দেবীর উপাসনার কাজে ব্যবহৃত হতো। লোকমুখে শোনা যায় নওগাঁ শহরের কালিতলার মহেন্দ্রী দাস নামে এক ব্যাক্তি প্রথমে প্যারা সন্দেশ তৈরি শুরু করেন। প্যারা সন্দেশ তৈরির সময় তরল দুধের সাথে চিনি মিশিয়ে তা ভালোভাবে জ্বাল করে ক্ষীর তৈরি করা হয়। ক্ষীর যখন জড়িয়ে আসতে শুরু করে তখন গরম ক্ষীর দুই হাতের তালুর মাঝে সামান্য চাপ দিতে হয়। এভাবেই তৈরি করা হয় প্যারা সন্দেশ। এর রঙ হালকা খয়েরি রঙের। এ সন্দেশগুলো প্রস্থে প্রায় ১/২ ইঞ্চি আর লম্বায় ২ ইঞ্চি হয়ে থাকে। ১ কেজি প্যারা সন্দেশ তৈরি করার জন্য প্রয়োজন পড়ে ৭ লিটার দুধ। এ মিষ্টির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এতে দুধ আর চিনি ছাড়া অন্য কোনো উপকরণ ব্যবহার করা হয় না।

. মেহেরপুরের সাবিত্রী রসকদম্ব

স্বাধীন বাংলাদেশর প্রথম রাজধানী মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর চেনেন অনেকেই। মেহেরপুর কিন্তু মিষ্টির জন্যও বিখ্যাত। রস নেই তবু রসকদম্ব আর সাবিত্রী নামের মিষ্টি দুটি মেহেরপুর জেলার ১৫০ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। সাবিত্রী আর রসকদম্ব দীর্ঘদিন বিদেশে পাড়ি। এই মিষ্টির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ফ্রিজে না রেখে এক সপ্তাহ আর ফ্রিজে এক মাসেরও বেশি একই স্বাদ বজায় থাকে। দুধ তথা দুধের চাছি আর চিনিই মূলত এই মিষ্টি তৈরির উপকরণ। তবে মিষ্টি তৈরির সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে চুলায় জ্বাল দেওয়ার বিষয়টি। নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী নির্ধারিত তাপে মিষ্টির চুলায় জ্বাল দিতে হয়। সুচারুভাবে জ্বাল দেওয়ার কাজটি করতে হয়।

. কুষ্টিয়ার স্পেশাল চমচম

কুষ্টিয়ার ঔহিত্যবাহী মিষ্টির স্পেশাল চমচম। স্বাদে ও সুবাসে মৌ মৌ করে। মন ভরিয়ে দিতে জুড়ি নেই। প্রাচীনকাল থেকে কুষ্টিয়া মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। এখানকার ময়রারা যে বিশেষ চমচম বানান তার সুনাম দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও।

. যশোরের রসগোল্লা

যশোরের রসগোল্লা আহ কী স্বাদ! এ মিষ্টির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে মিষ্টির পরিমাণ কম। দেশি গরুর দুধ, উন্নতমানের চিনি আর জ্বালানি হিসেবে এক নম্বর কাঠ এ মিষ্টি তৈরির মূল উপাদান।

. সাতক্ষীরার সন্দেশ

এ সন্দেশ তৈরি করা হয় খাঁটি দুধের ছানা দিয়ে। এর সাথে চিনি আর হালকা ময়দা জ্বালিয়ে সন্দেশ তৈরি করা হয়। এ সন্দেশ অত্যন্ত সুস্বাদু।

. রাজবাড়ীর চমচম

টাঙ্গাইলের মতোই স্বাদের জন্য বিখ্যাত রাজবাড়ীর চমচম। তবে এই চমচম স্বাদে দারুণ।রাজবাড়ির শংকরের ক্ষীরের চমচমের কথা আলাদা করে বলতেই হয়।

১০. কুমিল্লার রসমালাই

কুমিল্লার রসমালাই কুমিল্লা জেলার এক ঐতিহ্য। একটি পাতিল বা কড়াইয়ে ১ মণ দুধ প্রায় ২ ঘন্টা ধরে জ্বাল দিয়ে ঘন করে ১৩-১৪ কেজি ক্ষীর তৈরি করা হয়। এ দুধ থেকে পাওয়া ছানার সাথে কিছু ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট রসগোল্লা রসগোল্লা তৈরি করা হয়।প্রথমদিকে কুমিল্লার রসমালাইয়ের নাম ছিল ক্ষীরভোগ। তখন মাটির হাঁড়িতে বিক্রি হতো এ মিষ্টি। পাকিস্তান আমলে অবাঙ্গালিরা এসে এ ক্ষীরভোগকে রসমালাই বলতে শুরু করে। সেখান থেকেই এ নাম প্রসিদ্ধ হয়ে যায়।

১১. নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টি

নেত্রকোনা জেলার একটি প্রসিদ্ধ মিষ্টির নাম বালিশ মিষ্টি। এটি আকারে বালিশের মত বড় নয় ঠিকই কিন্তু আকৃতিগত দিক থেকে অনেকটাই বালিশের মতো। এ মিষ্টির উপরে ক্ষীরের প্রলেপ থাকে বলে একে অনেকটাই বালিশের মতো দেখায়। এ মিষ্টি তৈরি হয় দুধ, ছানা, চিনি আর ময়দা দিয়ে। প্রথমে দুধের ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মন্ডের মতো প্রস্তুত করা হয়। এরপর সেই মন্ড থেকে তৈরি করা হয় বিভিন্ন সাইজের বালিশ যা পরে চিনির গরম রসে ভাজা হয়। এরপর ঠান্ডা করে চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় বেশ কিছুক্ষণ। বিক্রি করার সময় আরেক দফা এর উপড় ক্ষীরের প্রলেপ দেয়া হয়।এ মিষ্টি বিক্রি হয় পিস হিসেব। এর তিন ধরনের আকৃতি আছে। তবে বড় আকৃতির বালিশের আকার সাধারণত ১৩-১৪ ইঞ্চির মতো হয়ে থাকে।

১২. মুক্তাগাছার মন্ডা

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মন্ডাও অনেক বিখ্যাত। আর অন্যন্য বিখ্যাত মিষ্টির মতোই এটি নিয়েও অনেক কিংবদন্তি চালু রয়েছে। একটি কিংবদন্তী এমন যে, ২০০ বছর আগে মুক্তাগাছার গোপাল পাল নামক এক মিষ্টি প্রস্তুতকারক নাকি স্বপ্নের মাধ্যমে এক ঋষির কাছ থেকে এ মন্ডা মিষ্টি তৈরির আদেশ পেয়েছিলেন। এ সাধুই নাকি তাকে এ মন্ডা মিষ্টি তৈরির কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিলেন। যতদূর জানা যায় প্রথম মন্ডা মিষ্টি তৈরি হয় বাংলা ১২৩১ সালে।মন্ডার মূল উপাদান দুধ ও চিনি। এ মিষ্টিটি সাদা কাগজে মোড়ানো থাকে। মিষ্টিটি নরম এবং শুকনো।

১৩. রাজশাহীর রসকদম

রসকদম, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম মিষ্টান্ন। খোটখাটো অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বড় ধরনের যে কোন অনুষ্ঠানে এই মিষ্টির রয়েছে ব্যাপক কদর। শুধু রাজশাহীতেই নয় দেশের প্রতিটি জেলায় রাজশাহীর রসকদম নামে রয়েছে এর সুপরিচিত । এমনকি দেশের বাইরেও ভারত, আমেরিকাতেও রয়েছে এর পরিচিতি।

১৪. অন্যান্য

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ বিশেষ মিষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছেন সেখানকার ময়রারা। তাঁদের নিষ্ঠা ও সৃজনশীলতায় ঐতিহ্যবাহী হয়ে উঠেছে সেসব মিষ্টি। এর মধ্যে আছে বিক্রমপুর ও কলাপাড়ার রসগোল্লা, শাহজাদপুরের রাঘবসাই, খুলনা ও মুন্সীগঞ্জের আমৃতি, যশোরের খেজুরের নোলন গুড়ের প্যারা সন্দেশ, মাদারীপুরের রসগোল্লা, সিরাজদিখানের পাতক্ষীরা, নওগাঁর রসমালাই,পাবনার প্যারা সন্দেশ, সিরাজগঞ্জের পান্তুয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখি, চাপাই নবাবগঞ্জের চমচম প্রভৃতি। সৌজন্যে: জোভাগো বাংলাদেশ

(ঢাকাটাইমস/২৮মার্চ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :