হবিগঞ্জে বাড়ির মালিক-ভাড়াটের তথ্য নেই প্রশাসনে

পাবেল খান চৌধুরী, হবিগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০১৭, ০৮:১৯

হবিগঞ্জ শহরসহ জেলার আট উপজেলা ও ছয় পৌরসভার আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী দুই লক্ষাধিক ভাড়াটের তথ্য নেই অধিকাংশ বাড়ির মালিকের কাছে। একইভাবে বাড়ির মালিকদেরও তথ্য নেই প্রশাসনের হাতে।

জঙ্গিসংক্রান্ত পরিস্থিতি এড়াতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তথ্য দিতে বাড়ির মালিকদের পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সিলেটের শিববাড়ীর আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানায় চার দিনের অভিযানের রেশ কাটতে না কাটতে পরদিন বুধবার (২৭ মার্চ) মৌলভীবাজারের দুই জায়গায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একটি বাড়ির অবস্থান মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায়। একই মালিকের অন্য বাড়িটি সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুরে। নাসিরপুরের আস্তানায় সোয়াটের অভিযানের সময় বৃহস্পতিবার সেখানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হয় নারী-শিশুসহ সাত-আটজন। বুধবারই কুমিল্লার কোটবাড়িতে আরো একটি বাড়িতে ঘিরে ফেলে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে।

এভাবে একের পর এক জঙ্গি আস্তানার সংবাদে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পড়েছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বিভিন্ন মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর।

গত বছরের ১ জুলাই রাজধানী ঢাকার সুরক্ষিত এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার নির্দেশনার পরও অধিকাংশ বাড়ির মালিক তাদের ভাড়াটেদের তথ্য সংগ্রহ করে থানায় জমা দেননি। নিজেদের অজ্ঞতা ও বাসা ভাড়া বেশি পাওয়ার আশায় অনেক বাড়ির মালিক দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ প্রশাসনের। অবশ্য এ জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকেও দায়ী করছেন অনেক বাড়ির মালিক।

বাড়িওয়ালা ও প্রশাসনের এমন উদাসীনতায় জঙ্গিদের নাশকতামূলক কর্মকা-ের ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়াটেদেরও রয়েছে অবহেলা। ভাড়াটিয়াদের কাছে বাড়ির মালিকরা তথ্য ফরম দিলেও বেশির ভাগ ভাড়াটিয়া তা পূরণ করে মালিকের কাছে জমা দেননি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, শুধু হবিগঞ্জ পৌর এলাকার উমেদনগর, চৌধুরী বাজার, নোয়াবাদ, বগলা বাজার, যশেরআব্দা, নোয়াহাটি, গার্নিং পার্ক, রামকৃষ্ণ মিশন রোড, ঘাটিয়া বাজার, বাণিজ্যিক এলাকা, বদিউজ্জামান সড়ক, পুরান মূন্সেফি, শ্যামলী, উত্তর শ্যামলী, দক্ষিণ শ্যামলী, মাস্টার কোয়াটার, মুসলিম কোয়াটার, নিউ মুসলিম কোয়াটার, সিনেমা হল ঝিলপাড়, গোসাইপুর, জঙ্গল বহুলা, ইনাতাবাদ, স্টাফ কোয়াটার সড়ক, পুরাতান হাসপাতাল আবাসিক এলাকা, কোরেশ নগর, অনন্তপুর, দক্ষিণ অনন্তপুর, রাজনগর, কলেজ কোয়ার্টার, বেবি স্টেশন, ঘোষ পাড়া, কোর্ট স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস রোড, মোহনপুর, শায়েস্তানগর, মাহমুদাবাদ, তেঘরিয়া, ঈদগাহ সড়ক, পোদ্দার বাড়ি আবাসিক এলাকাসহ ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় লক্ষাধিক ভাড়াটিয়া ভাড়াটিয়া বসবাস করেন।

এ ছাড়া জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং, আজমীরীগঞ্জ, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলায় রয়েছে আরো প্রায় লক্ষাধিক ভাড়াটিয়া। তাদের অধিকাংশ লোকের তথ্য নেই মালিকদের হাতে। ফলে অনেকটা অনিরাপদ অবস্থায় বসবাস করছেন জেলার ১৮ লাখের বেশি মানুষ।

হবিগঞ্জ সদর, মাধবপুর, নবীগঞ্জ ও বাহুবলের বেশ কিছু এলাকা অতিগুরুত্বপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কর্মরত দেশি-বিদেশি অনেক নাগরিক ওই সব এলাকায় বাস করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাড়ির মালিক জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করা বাড়ির মালিকের দায়িত্ব। বিগত সময়ে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে বাড়ির মালিকদের ওপর প্রশাসনের চাপ ছিল। ওই সময় ভাড়াটিয়াকে সন্দেহ হলে পুলিশকে অবহিত করারও আহ্বান জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু হঠাৎ করেই তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম আবার বন্ধ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ স ম সামছুর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘আমরা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি। আশা করি দ্রুতই সব তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হবে।’ এ ক্ষেত্রে তিনি বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সহযোগিতা কামনা করেন।

পুলিশ সুপার জানান, ইতিমধ্যে ৯টি থানা এলাকায় কয়েক হাজার ভাড়াটিয়া ও মালিকের কাছে তথ্য ফরম বিতরণ করা হয়েছে। অনেক এলাকা থেকে তথ্য ফরম পূরণ করে থানায় জমাও দিয়েছে। বাকিগুলো জমা হয়ে যাবে।

কেউ ভুল তথ্য দিল কি না তা প্রথমে বাড়ির মালিক যাছাই-বাছাই করবেন বলে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটি আবার যাছাই-বাছাই করবে। যদি কোনো ভাড়াটিয়া বা বাড়ির মালিক ভুল তথ্য উপস্থাপন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জনগণের সহযোগিতা কামনা করে পুলিশ সপার বলেন, শুধু পুলিশ বা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষে এসব নাশকতা ঠেকানো অনেক কঠিন। কোনো এলাকায় সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে তাৎক্ষণিক তা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :