মানিকগঞ্জে যক্ষ্মায় এক বছরে ৯৯ মৃত্যু, উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ থেকে প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০১৭, ১১:১১| আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৭, ১১:৫২
অ- অ+

মানিকগঞ্জে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং এনজিওগুলো কাজ করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না রোগটি। ২০১৬ সালেই এ জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৯৯ জন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত বছর যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারি ভাবে খরচ হয়েছে ২৮ লাখ টাকারও বেশি।

মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলায় ২০১৬ সালে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় তিন হাজার ৩০৮ জন। এসব রোগীর মধ্যে সম্পূর্ণ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৪৭৫ জন। আর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৯৯ জন। গত বছর চিকিৎসাধীন ছিল আরও ৭৬৪ জন। এছাড়া চলতি বছরের গত তিনমাসে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় এক হাজার ১৬৪ জন। সব মিলিয়ে মানিকগঞ্জে এখন পর্যন্ত যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৭৩০ জন।

গত বুধবার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নের কোটাই গ্রামের একটি বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় স্বাস্থ্য সেবিকা মিনু আক্তারের সঙ্গে। এ সময় মিনু আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের জন্য আমাদের যে কোনো ইউনিয়নের এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম পর্যন্ত ঘুরতে হয়। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ থেকে তিন সপ্তাহের বেশি যেসব মানুষের ফুসফুসে কাঁশি, জ্বর ও মুখে অরুচি থাকে তাদেরকে কফ পট দিয়ে সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটি দিনে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে বলি। সেখানে গিয়ে যদি কোনো মানুষের যক্ষ্মা ধরা পড়ে তারপর তাদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে থাকি।

মিনু জানান, তার কাজ গ্রামে গ্রামে ঘুরে যক্ষ্মার রোগী খুঁজে বের করে পরীক্ষার জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো। যদি কোনো ব্যক্তির যক্ষ্মার মত রোগ ধরা তারপর ছয়মাস রোগীদের বাড়িতে গিয়ে ওষুধ সেবন করিয়ে সুস্থ করে তোলাই তার কাজ।

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের যক্ষ্মা রোগ ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. বিকাশ চন্দ্র তরফদার বলেন, যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার আওতায় আনতে গ্রামে গ্রামে সচেতনতামূলক পথ নাটক, সুশীল সমাজের লোকদের নিয়ে নিয়মিত সেমিনারসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিং করানো হচ্ছে। এই চিকিৎসকের মতে, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি টানা ছয়মাস নিয়মিত চিকিৎসা নিলে তার রোগ ভাল হবে।

মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. ইমরান আলী বলেন, মানিকগঞ্জে যক্ষ্মা রোগ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এ জেলায় যক্ষ্মা নির্ণয়কারী ‘জিন এক্সপার্ট মেশিন’ না থাকায় যক্ষ্মা রোগ পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি দাবি করেন, তারা যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখছেন।

সিভিল সার্জন বলেন, মানিকগঞ্জে ২০১৬ সালে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে, তিন হাজার ৩০৮জন। এসব রোগির মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে দুই হাজার ৪৭৫জন। আর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৯৯ জন। গত বছরে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন ছিল ৭৬৪ জন। আর চলতি বছরের গত তিনমাসে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে এক হাজার ১৬৪জন। সব মিলিয়ে মানিকগঞ্জে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী রয়েছে এক হাজার ৭৩০জন।

তিনি বলেন, মানিকগঞ্জে জিন এক্সপার্ট মেশিন না থাকায় অনেক সময় একজন ব্যক্তির যক্ষ্মা রোগ থাকলেও সেটা কফ পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। এ কারণে মানিকগঞ্জ থেকে এতদিন যক্ষ্মা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। যক্ষ্মা নির্ণয়কারী অত্যাধুনিক জিন এক্সপার্ট মেশিন কিছু দিনের মধ্যে সদর হাসপাতালে আনা হবে বলে জানান ডা. ইমরান আলী।

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/প্রতিনিধি/জেডএ)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অবস্থান কর্মসূচি
দুদকের নতুন চেয়ারম্যান-কমিশনারদের সম্পদের হিসাব প্রকাশের আহ্বান টিআইবির
এভিয়েশন কোর্স সম্পন্ন করলেন ২ পুলিশ কর্মকর্তা
স্বেচ্ছায় সরে গেলে ক্ষমা পাবেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা