শিক্ষার প্রসারে নিরক্ষর তারা মিয়ার নিরন্তর চেষ্টা

নেত্রকোণা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:৩০

অভাবের সংসারে জন্ম তারা মিয়ার। সে সময় তার মতো মানুষদের ইশকুলে যাওয়া ছিল এক অসম্ভব চিন্তা। চোখের সামনে সমবয়ীরা পড়ালেখা করেছে, সরকারি-বেসরকারি বড় চাকরিও করে। তারা প্রায়ই এলাকায় আসে, কিন্তু তারা মিয়ার মত মানুষদেরকে কি আর সময় দেয়ার মত সময় তাদের আছে? তারা মিয়া ভাবেন, তার যে পরিণতি হয়েছে, সেটি যেন অন্যদের না হয়।

কেবল ভেবে বসে থাকেননি নেত্রকোণার দুর্গাপুরের তারা মিয়া, অভাবের কারণে যারা পড়তে পারেন না, তাদের সহায়তায় বাড়িয়ে দেন হাত।

গারো পাহাড় ঘেষা উপজেলার গ্রাম চকলেংগুরা। এই্ গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর হেলিম মিয়ার তিন সন্তানের মধ্যে বড় তারা মিয়া। আর্থিক অনটনের কারণে কেউই পড়াশোনা করতে পারেনি। এটা ওটা করে সংসার চালান। বছর খানেক আগে ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা কেনার পর অভাব কিছুটা ঘোঁচে তারা মিয়ার। যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে সংসদের খরচ মিটিয়েও কিছুটা থাকে উদ্বৃত্ত। তারা মিয়া সিদ্ধান্ত নেন, এই উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে তিনি শিক্ষার উপকরণ কিনবেন, বিলিয়ে দেবেন গরিব শিক্ষার্থীদের।

তারা মিয়া বলেন, ‘আমার বউ-পুলাপান মিলায়া ঘরে তিন জন। প্রত্যেক দিন খরচাপাতি বাদ দেয়া কিছু টাকা থাহে। এই টাকা দেয়াই পুলাপানরার লাইগ্যা, কিছু করার চেষ্টা করি।’

এরই মধ্যে তারা মিয়ার সুনাম ছড়িয়েছে এলাকায়। স্থানীয়রা জানান, এলাকার নলুয়াপাড়া প্রাথমিক স্কুল, চকলেংগুরা, দেবথৈল মিশনারি, আগার-অনির্বাণ স্কুলসহ ১৭টি স্কুলের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ কিনে দিয়েছেন তারা মিয়া।

চকলেংগুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাজেদা আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এলাকার বিভিন্ন স্কুলের অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদেরকে প্রায় এক বছর ধরে খাতা, কলম দিচ্ছেন তারা মিয়া। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের দিচ্ছেন টিফিন বক্সও। তার এই সহায়তা পেয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী উপকৃত হচ্ছে।’

নলুয়াপাড়া প্রাথমিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাহাত মিয়া জানায়, তার বাবা দিনমজুর। সব সময় খাতা, কলম কিনে দিতে পারেন না। এক সপ্তাহ আগে তারা মিয়ার কাছ থেকে সে খাতা ও কলম পেয়েছে।

একই স্কুলের প্রতিবন্ধী শিশু চতুর্থ শ্রেণির আফসানা। সে জানায়, তারা মিয়ার দেয়া টিফিন বক্সে করে প্রতিদিন বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসে।

তারা মিয়া সবশেষ গত মঙ্গলবার শিশুদের মধ্যে খাবারের প্লেট বিতরণ করেন সদর ইউনিয়নের দেবথৈল গ্রামে মিশনারিজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন মিশন এই স্কুলটি চালায়।

স্থানীয় সাংবাদিক নিতাই সাহা বলেন, ‘নিরক্ষর তারা মিয়ার কাছ থেকে আমরা শিখছি। এলাকায় তার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার নিরন্তর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং এ জন্যে আমরা গর্বিত।’

তারা মিয়ার স্ত্রী নাজমা আক্তার বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে ক্লাস টুতে পড়ে। তারে আমরা লেখাপড়া করায়াম। অনেক বড় মানুষ অইব। এইডা আমরা আমরার স্বপ্ন। এলাকার গরিব পুলাপাইনও যেন লেহাপড়া করতারে হের লাইগ্যা আমার স্বামী চেষ্টা করে। আমিও তার লগে চেষ্টা করি। দরকার পড়লে একটু কম খায়া অইলেও চেষ্টা করবাম।’

তারা মিয়া বলেন, ‘সমাজে যেন কেউ যেন আমার মত না অয়। সবাই যেন লেহাপড়া করে, শিক্ষিত অয়। যতদিন পারি, ততদিন এই চেষ্টা করবাম।’

তারা মিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুর আলম সাজু। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘ছেলেটা অনেক বড় মনের মানুষ। তার থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। আমরাও অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে সহায়তা দেবো।’

ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :