‘অভিমানী’ সোহেল তাজ আবারও ‘দূরে দূরে’

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:৩৫ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:৫০

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস

অভিমানে মন্ত্রিসভা ও সংসদ সদস্যপদ ছাড়ার সাত বছর পর গত অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে আগে আলোচনায় আসেন জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজ। তিনি দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন-এমন আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সত্য হয়নি। আর সম্মেলনে যোগ দিলেও এরপর আর দলের কাজে নিজেকে জড়াননি তিনি।

দলীয় ও পারিবারিক সূত্রগুলো বলছে, সোহেল তাজ এখন বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন। তবে তিনি আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে যোগ দেননি। পারিবারিক আয়োজনেই নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন। দুই এক দিনের মধ্যেই আবার বিদেশে চলে যাবেন।  

বিএনপি-জামায়াতবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সাহসী  ভূমিকার জন্য প্রশংসিত ছিলেন জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই অভিমান করে মন্ত্রিত্ব, সংসদ সদস্য এবং দলের সদস্য পদ সবই ছেড়ে দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা অগ্রাহ্য করে তার বিদেশ চলে যাওয়ার পর তার আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় সোহেল তাজেরই বোন সিমিন হোসেন রিমিকে।

সোহেল তাজ কী কারণে মন্ত্রিত্ব আর সংসদ সদস্য পদ ছেড়েছেন, সেটি আজও স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে সরকার বা তাজ পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।

গত বছরের শুরুর দিকে দেশে ফেরার পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন সোহেল তাজ। এই সাক্ষাৎ কেবল কুশল বিনিময় নয়, এমনটিই প্রচার পেয়েছিল সে সময়।

তবে গণমাধ্যমে নানা ধরনের খবর প্রকাশের পর সোহেল তাজ তার ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন। তিনি জানান, দুই বোনকে সঙ্গে নিয়ে বাবা তাজউদ্দীন আহমদ ও মা জোহরা তাজউদ্দীনের নামে গঠিত ‘মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাতেই তিনি গণভবনে যান। কয়েকটি গণমাধ্যমে যে রাজনীতিতে ফেরার খবর প্রকাশ হয়েছে সেটি মিথ্যা।

গত অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে আগে সোহেল তাজকে নিয়ে আবারও গুঞ্জন তৈরি হয়। দলের সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে তিনি বেশ কয়েকদিন বৈঠক করেছেন। সে ছবিও গণমাধ্যমে এসেছিল। এরপরই গুঞ্জন উঠে সোহেল তাজ আবার দলীয় কাজে সক্রিয় হচ্ছেন। আর তিনি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পেতে পারেন।

গত ২০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যোগ দেন সোহেল তাজ। এরপর রাজনৈতিক অঙ্গণে নানা গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলে। তবে সম্মেলনের পর ঘোষিত কোনো কমিটিতেই সোহেল তাজের নাম ছিল না। আর তিনি ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, বছরের বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত কাজেই প্রায়ই দেশে আসেন তিনি। দেশে এসেই নিয়মিতই যান গাজীপুর।

সোহেল তাজের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশে আসেন সোহেল তাজ। এখানে তিনি পারিবারিকভাবেই সময় কাটাচ্ছেন। আর চলতি সপ্তাহে আবারও তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার কথা রয়েছে।

সোহেল তাজের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি বলেন, দেশে ফিরলেই  বাবা তাজউদ্দীন আহমদ ও মা জোহরা তাজউদ্দীনের নামে গঠিত ‘মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’ নিয়ে কাজ করেন সোহেল তাজ, কিন্তু রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ডে জড়িত নন তিনি।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, ‘সম্মেলনের আগে সোহেল তাজ দলে ফিরে আসছেন এমন একটি গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তা গুঞ্জনই থেকে যায়। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আগামীতেও তাঁর (সোহেল তাজ) রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।’

এ বিষয়ে জানতে সোহেল তাজ ও তাঁর বোন সিমিন হোসেন রিমির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। সোহেল তাজের ব্যক্তিগত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়, অন্যদিকে সিমিন হোসেন রিমি ফোন রিসিভ করেননি।

সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান সোহেল তাজ। কিন্তু পাঁচ মাসের মাথায় ২০০৯ সালের ৩১ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। এরপর আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি সরকারের সঙ্গে।

ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/টিএ/ডব্লিউবি