লিচুর মধু

দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দরে সুস্বাদু ও মিষ্টি লিচুর পরিচিতি দেশজুড়ে। লিচু বাগানে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কয়েকজন মৌচাষি। এতে একদিকে যেমন মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে মৌমাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ন ঘটায় লিচু গাছ মালিকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। বাগানে মৌ চাষ করে চাষিরাও খুশি এবং মালিকরাও খুশি।

চিরিরবন্দরে প্রায় ১১শ লিচু বাগান। প্রতি বছরই মোটা অঙ্কের অর্থ আয় হয় বাগানগুলো থেকে। চলতি বছর চিরিরবন্দর উপজেলায় পাঁচশ ১০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে লিচুর বাগানগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে।

উপজেলার পুন্ট্রি ও ভিয়েল ইউনিয়নের সড়কের পাশ দিয়ে অবস্থিত লিচু বাগানগুলোতে বাক্স বসিয়ে মৌচাষ করে মধু সংগ্রহ করছেন চাষিরা।

মৌ চাষি রাশেদুল ইসলাম জানান, লিচু বাগানে তারা শতাধিক ব্রড ও নিউক্লিয়াস নামের ছোট বড় কাঠের বাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি বাক্সে একটি রানী মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছি ও অসংখ্য এপিচ মেইলিফ্রা জাতের কর্মী মৌমাছি রয়েছে। কর্মী মৌমাছিরা লিচুর মুকুল হতে মধু সংগ্রহ করে নিজ নিজ কলোনিতে মৌচাকে এনে জমা করে। ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর প্রতিটি বাক্স থেকে পাঁচ থেকে ঝয় মণ মধু সংগ্রহ করা হয়।

তিনি বলেন, যে লিচু গাছে মৌমাছির আগমন বেশি হয় সে গাছের মুকুলে পরাগায়ন ভাল হয়। ফলে ওই গাছে বা বাগানে লিচুর যেমন বাম্পার ফলনের সম্ভবনা থাকে, তেমনি মৌ চাষিরা বেশি মধু সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারে। উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে মৌ চাষিরা প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ মণ মধু সংগ্রহ করে বাজারজাত করছেন।

কাঠের তৈরি শত শত বিশেষ বাক্সের মাধ্যমে মৌ চাষের দৃশ্য দেখে এলাকাবাসীও উদগ্রীব হয়ে ছুটে আসছেন মধু কেনার জন্য লিচু বাগানে। ক্রেতা দেলোয়ার হোসেন জানান, বাজারে খাঁটি মধু পাওয়া যায় না। তাই নির্ভেজাল মধু সংগ্রহ করতে পেরে তারা নিজেকে ধন্য মনে করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, চলতি বছর প্রতিটি লিচু বাগানে ভালো মুকুল এসেছে। আর এ কারণে প্রচুর মৌ মাছির আগমন দেখা দিয়েছে। লিচু গাছ থেকে মৌ মাছি মধু আহরণের ফলে গাছে গাছে বেশি করে পরাগায়ন হয় এবং শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ লিচুর বেশি ফলন হয়। এতে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন।

(ঢাকাটাইমস/২এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেডএ)