ব্লগার রাজীব হত্যা: দুই জনের ফাঁসির আদেশ বহাল
গণজাগরণের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় দুই জনের মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন এবং পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জন হলেন রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপ। তারা দুই জনই পলাতক। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথে পড়াশোনা করতেন।
রবিবার আলোচিত এই মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের এই রায় দিয়েছে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
দণ্ডপ্রাপ্ত অন্যদের মধ্যে মাকসুদুল হাসান অনিক পেয়েছেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বাকি পাঁচজনের মধ্যে এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছর কারাগারে থাকতে হবে। সাদমান ইয়াছির মাহমুদের তিন বছরের কারাদণ্ডসহ দুই হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত সবাই আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য। তারা জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দীন রাহমানীর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এই খুন করেছেন বলে বিচারিক আদালতে প্রমাণ হয়েছে। জসীমউদ্দীন রাহমানীকেও দেয়া পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সাজা বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত।
গত ২৭ মার্চ মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য ২ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি রাজীব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে আদালত।
গত বছরের ৭ নভেম্বর হাইকোর্টে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন মোশারফ হোসেন কাজল।
ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী রাজীব হায়দার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এ রায়ের পর মামলার নথিপত্র ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে আসে। পরে প্রধান বিচারপতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দেন। গত বছরের ৩১ অক্টোবর মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্য্তালিকায় ওঠে। গত বছরের ৭ নভেম্বর হাইকোর্টে এ মামলার শুনানি শুরু হয়।
২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে। এ ঘটনায় রাজীবের বাবা নাজিম উদ্দিনের করা মামলার তদন্তে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে উঠে আসে। মামলার তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ ওই আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। আর এবছরের ১৮ মার্চ তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতেন। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়। জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে বাকি আসামিরা ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন। রাহমানকে ওই হত্যাকাণ্ডে উৎসাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/এমএবি/ডব্লিউবি)