‘মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছি, স্কুলে যাব না’

রাজীবুল হাসান, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
| আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:১৬ | প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০১৭, ১৪:৫৮

‘আমি তো আসামি। স্কুলে যাব না। পড়ালেখাও করব না। স্কুলে গেলেই সবাই আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে। আমার সাথে কেউ বসতেও চাইবে না। হত্যা মামলায় মিথ্যা জেল খেটেছি, কেউ তো এ কথা বুঝবে না। সমাজে লজ্জায় আমি মুখ দেখাতে পারছি না।’

এমন কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে স্থানীয় হাজি জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বুশরা আক্তার পান্না। সে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কমলপুর মুসলিমের মোড় এলাকার রিকশাচালক মো. খায়ের মিয়ার ছোট মেয়ে।

পরিবারের অভিযোগ, ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক নজমুল হুদার রোষানলে পড়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এক মাসেরও বেশি সময় কারাভোগের পর গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায় পান্না। একই মামলায় তার সঙ্গে কারাভোগ করে তার বড় বোন দুই শিশু সন্তানের মা বন্যা বেগমও। কারাভোগের পর বাড়িতে এসেও তারা প্রায় অন্তরীণ অবস্থায় আছে, লোকলজ্জার ভয়ে।

এলাকার আলোচিত ঘটনা হওয়ায় প্রতিদিন প্রতিবেশীরা ছুটে আসছে ওই দুই বোনকে দেখতে। তাই বর্তমানে নিজ বাড়িতে ‘বন্দিজীবন’ই কাটাতে হচ্ছে তাদের। মিথ্যা ঘটনায় স্বাভাবিক জীবনে বাধা তৈরি করায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিচারসহ ওই মামলা থেকে মুক্তি চায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই বোনসহ তাদের পরিবার।

খায়ের মিয়া ও তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম বীনা জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে একটি ডাকাতি মামলায় অভিযুক্ত আসামি তাদের ছেলে কাউছারকে গ্রেপ্তার করতে এসআই নজমুল হুদার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের বাড়িতে আসে। পুলিশ সদস্যরা তাদের বাড়ির ফটকের গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। তখন ঘরে থাকা দুই বোন বুশরা ও বন্যা এগিয়ে গিয়ে বাড়ির গেইট ভেঙে পুলিশ প্রবেশ করায় প্রতিবাদ করেন। এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে এসআই নাজমুল হুদা দুই বোনকে কিল-থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে পেটান এবং ঘরে ঢুকে কাউছারের খোঁজ করেন।

পরিবারের অভিযোগ, এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের ঘরের আসবাবপত্র ও মালামাল তছনছ করতে থাকলে দুই বোন আবারও প্রতিবাদ করে। একপর্যায়ে কাউছারকে না পেয়ে দুই বোনকে আবারও মারধর করে ধরে নিয়ে যান এসআই নাজমুল। সেখানে নিয়েও দুই বোনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে পুলিশ।

দুই বোন বন্যা-পান্নাকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বিষয়ে ঢাকাটাইমসে খবর প্রকাশিত হলে চাপের মুখে পড়ে পুলিশ বিভাগ। পরে পুলিশ বিভাগ তাকে গাজীপুরে বদলি করে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় ভৈরব থানার সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসে থাকা এক যাত্রী পিকেটারদের ইট-পাটকেলে আহত হন। ওই বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই ঘটনায় পর ২০১৬ সালের ২২ জুন ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। গ্রেপ্তারের পর এদিনই ওই মামলায় অভিযুক্ত আসামি দেখিয়ে দুই বোনকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠায়।

রবিবার সকালে এই প্রতিনিধি তাদের বাসায় গেলে বন্যা জানান, জেলে যাওয়ার পর তার দুই শিশু সন্তানকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার বাবার বাড়ি থেকে তাদের বাড়ি নিয়ে যায়। আমি ৩৫ দিন কারাগারে বন্দী ছিলাম বলে আমার দুটি শিশু মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত ছিল। জেল খেটেছি বলে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাকে দেখতে আসেনি এবং আমার শিশু সন্তান এখনো ফিরে পায়নি।

তিনি জানান, জীবনে এমন অপমান আর শারীরিক নির্যাতনের শিকার কখনো হইনি। নির্যাতনের পর ওই এসআই আমাদের দুই বোনকে হুমকি দিয়ে বলেছিল ‘মাইরের কথা কাউকে বললে তোদের আবারও জেল থেকে থানায় আনা হবে।’ বিনা অপরাধে আমাদের জীবনকে কলঙ্কিত করায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা নজমুল হুদার বিচার দাবি করছি।

তাদের রিকশাচালক বাবা খায়ের মিয়া জানান, আমার দুই মেয়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু ‘মিথ্যা’ মামলা থেকে এখনো মুক্তি পায়নি।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত ওই পুলিশের বিচারসহ আমার মেয়েকে ‘মিথ্যা’ মামলা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি করছি।

(ঢাকাটাইমস/২এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :