বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে ঢাকা: এরশাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৪৮

‘বাসা থেকে রওনা দিয়েছিলাম দশটায়, এটুকু পথ আসতে লাগল দুই ঘণ্টা। ঢাকা ধীরে ধীরে বাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন পাঁচ ছয় হাজারের মতো মানুষ বাইরে থেকে আসে এবং এখানে থেকে যায়। এখন দুই কোটির ওপরে মানুষ ঢাকা শহরে। কয়েক বছরের মধ্যে তিন কোটি হবে। ইতিমধ্যে বাস অযোগ্য হয়ে গেছে। তারপরে তো এখানে নিঃশ্বাসই ফেলা যাবে না।’

কথাগুলো বলছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রবিবার রাজধানীর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন তিনি।

এরশাদ বলেন, ‘যুব সংহতি আমার দ্বিতীয় সন্তান। এই যুব সংহতিকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠল জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি হওয়ার কারণে আমরা ক্ষমতায় আসছিলাম। তোমরা শক্তিশালী হও, সংগঠিত হও, ইনশাআল্লাহ আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারবো।’

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘তরুণ যুবকরা আজ হতাশায় নিমগ্ন। কর্মসংস্থান নাই, আস্তে আস্তে পুরো জাতি-যুবসমাজ মাদকদ্রব্যে নিমজ্জিত হচ্ছে। ইয়াবা, ফেনসিডিল ইত্যাদি দ্বারা তারা হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জাতীয় জীবন থেকে তারা আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। হতশায় ভুগছে যুবসমাজ। অথচ যুবসমাজ হলো একটা দেশের শক্তি, দেশের ভবিষ্যৎ। সেই ভবিষ্যৎ আস্তে আস্তে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে, আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি না। কর্মসংস্থান আমাদের তৈরি করা প্রয়োজন।’

এরশাদ বলেন, ‘এই প্রয়োজন মিটাতে না পারলে আমাদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হবে। আমি শুনেছিলাম ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা। এখন কি ঘরে ঘরে চাকরি আছে? চাকরি পেতে হলে কী করতে হয়? ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ বাধা আছে, রেট আছে। কনস্টেবলে চাকরি নিতে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের জন্য ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা দিতে হয়। কোথায় পাবে সেই টাকাটা এই গরিব ছেলেটি বা মেয়েটি? আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিই না। যেহেতু কর্মসংস্থান নেই, সেহেতু ছোট একটা চাকরি নিতে মানুষকে অনেক ঘুষ দিতে হয়। আমাদের সময় এটা ছিল না। গর্ব করে বলতে পারি আমাদের সময় ঘুষ বাণিজ্য ছিল না।’

সাবেক স্বৈরশাসক বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের কথা শুনি। সত্যিকারে কি নারীরা আজ নিগৃহীত নয়? ৮৫ ভাগ নারী নির্যাতনের শিকার। প্রতিদিন দেখি নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, আত্মহত্যা করছে, মেরে ফেলা হচ্ছে। এরপর নারীর ক্ষমতায়ন কী করে হয়? ’

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘খবরের কাগজে পড়লাম, ৭৫ ভাগ বিবাহিত নারী নিগৃহীত। আমাদের সমাজে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে, কোথাও শান্তি নেই। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে পরিবর্তনের প্রয়োজন।’

এরশাদ বলেন, ‘মালদ্বীপের একটি মেয়ে রাজশাহীতে মেডিকেলে পড়তে এসে আত্মহত্যা করেছে। আসলে মেয়েটি কি আত্ম হত্যা করেছে? নিগৃহীত হয়েছে, ধর্ষিত হয়েছে, এর কারণে হয়তো আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা করেনি, তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এটা আমার বিশ্বাস। সত্যি হতে পারে, নাও হতে পারে। একটা বিদেশি নারী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আত্মহত্যা করবে এটা বিশ্বাস করা যায় না।’

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে বাস করি, কারো জীবনের নিরাপত্তা নেই। কোথায় কে গুম হয়ে যাবে। কোথায় কে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাবে। খবরের কাগজে পড়ি তার পরে ভুলে যাই। কিন্তু যার সন্তান হারিয়ে গেছে সে তো কখনো ভুলে না, তার মনে দুঃখ চিরকালই থেকে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যে দলই করি না কেন আমাদের দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা দেয়া, জান মালের হেফাজত করা।’

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর আমার ইতিহাস দুঃখের ইতিহাস। আমি ছয় বছর জেলে ছিলাম, আমার নেতাকর্মীরা জেলে ছিল। কোনো মিছিল মিটিং করতে পারিনি। সমস্ত পার্টি অফিস তালা দেয়া হয়। শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি। তবুও আজকে জাতীয় পার্টি বেঁচে আছে কেন? জাতীয় পার্টি জনগণকে ভালোবাসে, দেশের কল্যাণ চায়। আমরা মানুষের অনিষ্ট করিনি, মানুষ হত্যা করিনি, লুণ্ঠন করিনি। আমরা মানুষের অকল্যাণের জন্য রাজনীতি করিনি। এই জন্য জাতীয় পার্টি মানুষের মনের মধ্যে আছে।’

সাবেক সেনাশাসক বলেন, ‘আমরা কোনো নির্বাচনে সুবিচার পাইনি। ৯১ সালে জেলে ছিলাম, তাও ৩৫টা আসন পেয়েছিলাম। আমরা পোস্টার লাগাতে পারিনি, কারো কাছে যেতি পারিনি। ৯৬ সালেও একই কথা। ৯৬ সালে রাত্র দুইটো কারাগারের দরজা খুলে আমার কাছে প্রস্তাব এসেছিল। আপনি যা চান দেব কিন্তু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবেন না। তাদের অনুরোধ আমি রাখিনি। আমি বলেছি, আপনারা জাতীয় পার্টির সাথে অন্যায় করেছেন, অসহায় মানুষকে হত্যা করেছেন, জেলে দিয়েছেন আপনাদের সমর্থন করবো না। তাদের সমর্থন করিনি, সমর্থন করলাম আরেকটি দলকে। আওয়ামী লীগকে, তারা ক্ষমতায় আসলেন।’

এরশাদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তখন ক্ষমতায় নাও আসতে পারত, যদি সমর্থন না করতাম। তাদের কাছে কী পেলাম। আমার দলকে ভাগ করা হলো। আরেকটা জাতীয় পার্টি তৈরি করা হলো। আর এমপিদের কিনে নেয়া হলো। শেষ পর্যন্ত আমার নামে মামলা দিয়ে আমাকে ছয় মাসের জেল দেয়া হলো। আমাকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হলো। এই প্রতিদান পেলাম তাদেরকে সমর্থনের জন্য, তাদেরকে ক্ষমতায় আনার জন্য।’

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটা কথা বলি, নো বডি ইজ ফ্রেন্ড। আমরা শক্তি সঞ্চয় করতে পারলে মানুষ আসবে আমাদের সাথে হাত মেলাতে। আমরা কারো সাথে হাত মেলাতে যাবো না। আমাদের বন্ধু আমরা। আমি জোট করছি। ৩০-৪০ টা দল এসেছে আমাদের কাছে। বিশেষ করে ইসলামি দল এসেছে। অবহেলা করার কোনো কারণ নেই। এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। তারা স্তব্ধ হয়ে আছে, চুপ করে আছে, কথা বলতে পারছে না। তারা চাচ্ছে একটা প্লাটফর্ম। আমরা সেই প্লাটফর্ম দিতে প্রস্তুত আছি। আমার দল শক্তিশালী করার জন্য অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তারা আসছে আমাদের কাছে। একটি দল নয়, অনেক দল আসছে আমাদের কাছে। আমরা বসবো ৪ তারিখে। ইনশাল্লাহ আমরা জোট গঠন করবো।’

এরশাদ বলেন, ‘একটা কথা বলে রাখি, যদি বেঁচে থাকি তবে আগমী নির্বাচনে আমি নমিনেশন দেব। এর বাইরে কেউ নয়। এই কথাটা মনে রাখতে হবে। তাই কথা বলার আগে সাবধানে কথা বলবে। আমি যেটা চাই সেটা জানতে হবে। আর আমি যেটা চাই সেটাই করতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/এএকে/জেবি )

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বর্তমান ইসির অধীনে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা ১২ দলীয় জোটের

বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকার জুলুম-অত্যাচার অব্যাহত রেখেছে: মির্জা ফখরুল

সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট করতে দেব না: নাছিম

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে না বিএনপি

ভিন্নমত নির্মূলে প্রশাসন ও আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার: গণঅধিকার পরিষদ

নেতানিয়াহু হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর: ওবায়দুল কাদের 

বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের সংকট সামাল দেওয়া কঠিন: ওবায়দুল কাদের 

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে আ.লীগের কর্মসূচি

ঢাকা উত্তরে এক নেতার 'পকেট কমিটি', বলয়ে জিম্মি দক্ষিণ বিএনপি 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :