গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়নের তাগিদ
কোকা-কোলা বাংলাদেশ এবং বিজনেজ ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট যৌথভাবে রবিবার এক প্যানেল ডিসকাশনের আয়োজন করে, যেখানে গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধকরণ ও উন্নয়নের সামগ্রিক বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন সেক্টরের নীতি-নির্ধারক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ ও প্রগতিশীল মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজিত প্যানেল ডিসকাসনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল গ্রামীণ নারী উদ্যোগক্তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, যেখানে প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন মাফরুহা সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যান্ড সিইও, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো, আলী সাবেত, টিম লিডার, প্রিজম বাংলাদেশ, কান্তারা কে খান, ডিরেক্টর, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, শুবহা শেখর, ডিরেক্টর অব সিএসআর অ্যান্ড সাস্টেইনিবিলিটি, কোকা-কোলা ইন্ডিয়া এবং দৌলত আক্তার মালা, স্পেশাল করসপডেন্ট, দ্যা ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস।
প্যানেল ডিসকাশনে ‘নারী উদ্যোগক্তাদের উন্নয়নে প্রশংসিত উদ্যোগ ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়’ শীর্ষক আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ধ্যান ধারণা সম্বলিত দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবায়নযোগ্য বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার বিষয়েও দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নতিতে নারীর অবদানকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে বেশিসংখ্যক নারীদের সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধির নানা পদক্ষেপের বিষয়েও আলোচনা করা হয়।
প্যানেলটি সাজানো হয়েছে কোকা-কোলার উইমেন বিজনেস সেন্টারের (WBC) প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নানা তথ্য উপাত্ত ও অর্জিত সাফল্যগুলোকে বাংলাদেশের প্ররিপ্রেক্ষিতে নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে। WBC প্রজেক্টের এর মূল লক্ষ ছিল গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করে তোলা। এউদ্দেশ্যে জামালপুর ও খুলনা অঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার গ্রামীণ নারী এই প্রজেক্টের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন। প্রজেক্টের আওতাধীন নারীদের কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন বাঁধাসমূহের মোকাবেলায় ব্যবসায়িক দক্ষতা, প্রশিক্ষণ , বাজার তথ্য, কৃষি পরামর্শ, মোবাইল ব্যাঙ্কিং ও স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে তা কাটিয়ে উঠাতে সাহায্য করা। প্রজেক্টির কার্যক্রম শুরু হয় জামালপুর থেকে। বর্তমানে জামালপুর, খুলনা ও বাগেরহাটের আটটি উপজেলাতে উইমেন বিজনেস সেন্টার তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
প্যানেল ডিসকাশনের পাশাপাশি কোকা-কোলার উইমেন বিজনেস সেন্টারের তৃতীয় পর্যায়ের সম্প্রসারণের ঘোষণা দেয়া হয়, যেখানে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ যথাক্রমে জামালপুর ও খুলনা, বাগেরহাটে একই রকম প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের অর্জিত অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৃতীয় ধাপের অর্থায়ন ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় ধাপটি আগামী ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলবে । যেখানে মোট তহবিলের পরিমাণ ১,৫০,০০০.০০ ইউএস ডলার। প্রজেক্টটি ২০ হাজার গ্রামীণ নারীদের সরাসরি আর্থিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোশাররফ হোসেইন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি ছোটবেলার কথা মনে করতে পারছি যখন আমদের মা দাদিরা ঘড়ে কাজ করতেন আর আমরা বাইরে কাজ করতাম, বিশেষ করে বাজার সদাই। ঘরের আশেপাশেই তারা প্রচুর পরিমাণে শাক সবজি চাষ করতেন যা তাদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হবার মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। আমরা সৌভাগ্যবান যে আজকে কোকা-কোলার মতো কোম্পানি নারীদের সাবলম্বী করতে এগিয়ে এসেছে। আমি আশা করছি তাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ‘গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া যেতে পারে যেখানে দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবায়নযোগ্য নীতি নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে এরকম আরও অনেক প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে যা আমাদের নারী উদ্যোগক্তাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে। কোকা-কোলার মত এরকম কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এধরনের কাজে এগিয়ে আসায় আমি সাধূবাদ জানাই।’
কোকা-কোলা বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাদাব আহমেদ খান বলেন, ‘আমদের এই উইমেন বিজনেস সেন্টার হচ্ছে বিশ্বব্যাপী কোকা-কোলার ৫নু২০ কার্যক্রমের একটি বিশেষ অংশ যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ৫ মিলিয়ন সুবিধা বঞ্চিত নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন। আমি গর্বের সাথে বলতে চাই বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ আশা ব্যাঞ্জক। যদিও এই নারীদের অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিশেষ করে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে তারা প্রায়ই পিছিয়ে পড়ছে। কোকা-কোলা সবসময়ই সম্ভাবনাময় এসকল নারীদের সাফল্যের প্রচেষ্টায় নিরলসভাবে কাজ করে গেছে, যার ফলাফল উইমেন বিজনেস সেন্টারের প্রথম দুটি ধাপেই আমরা দেখেছি এবং এরই ধারাবাহিকতায় আমরা তৃতীয় ধাপের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আত্মবিশ্বাসী হয়েছি।”
বিজনেজ ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট এর সিইও ফেরদোউস আরা বেগম বলেন, ‘তৃতীয় প্রজন্মের এসকল নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের সম্ভাবনা, যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় বেশ সাবলীলভাবে তাদের কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। এসকল কর্মময় নারীদের অর্থনীতিতে অবদানের ভিত্তিকে আরও মজবুত করতে সঠিক নীতি নির্ধারণমূলক কর্মপরিকল্পনা ও উন্নত তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের শ্রমজীবী জনসংখ্যার ৩০% হচ্ছে নারী যার মধ্যে ৭৭% শ্রমজীবী নারী গ্রামে বসবাস করেন। মূলধারার উন্নয়মূলক কর্মকান্ডে এসকল গ্রামীণ নারী উদ্যোগক্তাদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অর্থনীতির দৃঢ় ভিত্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।’
(ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/জেবি)
মন্তব্য করুন