কৃমিনাশক ওষুধ খেয়ে রোদে না যাওয়ার পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল ২০১৭, ০৯:৫১

কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাদেরকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হচ্ছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়াচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, অসুস্থ হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হঠাৎ দেশে গরম পড়া, খালিপেটে ওষুধ খাওয়ানোসহ নানা কারণে শিশুরা অসুস্থ হতে পারে। এ বিষয়ে অভিভাবক, স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষকদের সচেতনতা জরুরি। বিশেষ করে ওষুধ খাওয়ার পর রোদে গিয়ে ছুটাছুটি না করার পরামর্শ তাদের।

চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা উপজেলায় আব্দুর রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, এই সমস্যাটা প্রতি বছরই নয়। একটু ঠান্ডার মধ্যে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর কথা। কিন্তু প্রতি বছর প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। আর এতে করে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

যেসব এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে, সেসব এলাকার চিকিৎসকরাও বলছেন, গরমের কারণেই এমনটি হয়েছে। বিশেষ করে যে শিক্ষার্থীরা ওষুধ খাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা রোদে খেলাধুলা করেছে, তারাই আক্রান্ত হয়েছে বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বছরে দুইবার এই ওষুধ খাওয়ানো হয়। একবার এপ্রিল এবং পরে অক্টোবরে। দুইবারই দেশে থাকে গরম। এর মধ্যে এপ্রিলে শীত শেষে গরম শুরু হয় পুরোদমে। আর অক্টোবরের দিকে কমতে থাকে তাপমাত্রা। তাই তখন এই জাতীয় সমস্যা কম দেখা দেয়।

গরমে যেহেতু এই সমস্যা হয়, তাহলে এপ্রিলের বদলে সময়টা খানিকটা এগিয়ে আনা সম্ভব কি না-জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক সানিয়া তাহমিনা ঢাকাটাইমসকে বলেন, এটা সম্ভব নয়। কারণ, এই ওষুধ বছরে দুইবার খাওয়ানো হয় এবং দুই বারের মধ্যে ছয় মাসের ব্যবধান থাকতে হয়। এপ্রিলে না খাইয়ে একমাস এগিয়ে আনলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ, সে ক্ষেত্রে অক্টোবরের বদলে তখনও এক মাস আগাতে হবে।

এই কর্মকর্তা বলেন, যদিও চারদিন এই কর্মসূচি থাকে, তারপরও কোনো এক দিন বেশি গরম পড়লে সেদিন এই ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া আছে।

এবার চারদিনে এবার চার কোটি শিশুকে এই ট্যাবলেট খাওয়ানোর কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলে বাচ্চাদের এই ট্যাবলেট খাওয়ানো হচ্ছে। তবে যত শিশুকে এই ট্যাবলেট খাওয়ানো হচ্ছে সেই তুলনায় অসুস্থ হওয়ার সংখ্যাটা খুব বেশি না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের শিশুদের অপুষ্টির সমস্যার অন্যতম কারণ কৃমি। হাত না ধুয়ে খাওয়া, খোলা খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেশ জুড়েই আছে। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকায় কৃমির সমস্যা একটু বেশিই। শিশুরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। এ কারণে সারা দেশেই শিশুদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ায় সরকার।

বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় অন্য অভিভাবকরা শিশুদেরকে ট্যাবলেট খাওয়াতে বিরত থাকছেন বলে আমাদের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিরা খবর দিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যত শিশুর অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে সেটি আতঙ্কিত হওয়ার মত ঘটনা নয়। এখন পর্যন্ত দুই কোটিরও বেশি শিশু এই ট্যাবলেট খেয়েছে, কিন্তু অসুস্থ হয়েছে হয়ত কয়েক হাজার। এই সংখ্যাটি খুব একটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।

ঢাকাটাইমসের মাগুরা প্রতিনিধি মোখলেছুর রহমান জানান, শনিবার সদর উপজেলার কাটাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থী কৃমিনাশক ওষুধ ধাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট ও শারীরিক দুর্বলতাজনিত কারণে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে কমপক্ষে আরও অন্তত ২০ শিশু।

প্রধান শিক্ষক বিমল সাহা বলেন, স্কুলে ওষুধ খাওয়ার পর বাড়িতে গিয়ে কয়েকজনকিছুটা অস্বস্তিবোধ করে। রবিবার সকালে শিক্ষার্থীরা অ্যাসেম্বলির পর ক্লাসে গিয়ে শ্বাসকষ্ট, পেটের পীড়া ও শারীরিক দুর্বলতার কথা বলে। এক পর্যায়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে।

আব্দুল হালিম নামে এক আভিভাবক বলেন, হাসপাতাল তার সন্তানকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বলছেন তাদের কিছুই হয়নি। পরে বাড়ি ফিরিয়ে আনার পর আবারো গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে সে।

মাগুরার সিভিল সার্জন সাদুল্লাহ বলেন, Ôমূলত গুজবের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মানসিক সমস্যার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।’

আমাদের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক প্রতিনিধি আরমান হোসেন জয় জানিয়েছেন, সদর উপজেলার বৌলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কৃমিনাশক ওষুধ খেয়ে ২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ জনকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের আধা ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের মাথা ঘোরা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাবসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়।

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন চৌধুরী শফিকুর আলম জানান, খালি পেটে কৃমির ওষুধ সেবনের কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি কোরবান আলী জানান, শৈলকূপা উপজেলায় শনিবার সকালে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ার পর থেকেই দলে দলে হাসপাতালে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এই সংখ্যাটি একশ ছাড়িয়ে যায়।

স্থানীয় দেবতলা, কবিরপুর, হিতামপুর, হাকিমপুর, পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঝাউদিয়া, কাতলাগাড়ি, ষষ্টিবরসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অসুস্থ শিক্ষার্থীরা ভ্যান, নসিমন, করিমন ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে করে হাসপাতালে আসতে থাকে।

হাসপাতালে স্যালাইনের অভাবও দেখা দেয়। এই ঘটনায় ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ দল শৈলকূপায় পাঠানো হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খন্দকার বাবর জানান, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ওষুধ খাওয়ানোর কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। ওষুধ খাওয়ার পর বাচ্চাদের রোদে না যেতে এবং ঠান্ডা স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আমাদের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম জানান, রবিবার কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে প্রায় ৭০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অসুস্থ শিক্ষার্থী ফারাজানা বলে, ‘কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ার পর পরই প্রচণ্ড মাথাব্যাথা শুরু হয়। এরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’

এ ছাড়া পাবনা, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন এলাকাতেই বিপুল সংখ্যক শিশুর কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/০৩এপ্রিল/এএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিএসএমএমইউতে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: ভিসি দীন মোহাম্মদ

ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে হাসপাতালগুলোকে

কেন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :