এখন প্রতিদিনই উৎসব
হালের ফ্যাশনে নতুন মাত্রা দিয়েছে ফ্যাশন হাউস ‘ইজি’। ছেলেদের পোশাকের ধরনে, গড়নে নতুনত্বের জন্য তরুণদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশি এই ব্র্যান্ডশপ। তাদের পোশাক ভাবনা নিয়ে এই সময়কে বলেছেন ইজির পরিচালক তৌহিদ চৌধুরী। শুনেছেন সৈয়দ ঋয়াদ
ইজির শুরুটা কীভাবে?
সাপ্লাইয়ের জন্য প্রস্তুত করা যে পোশাকগুলো কিভাবে তৈরি করে থাকেন?
আমরা প্রোডাক্ট তৈরি করার মাধ্যম খুঁজে পেয়েছিলাম। প্রথমে গার্মেন্ট থেকে প্রোডাক্ট তৈরি করে সাপ্লাই দেই। এক জায়গা থেকে ফেব্রিকস এনে অন্য এক জায়গায় কেটে এটি আরেক জায়গায় তৈরি করা সম্ভব। আমরা যে পোশাকগুলো পরি অন্যান্য দেশে কিন্তু সেগুলো অনেক বেশি দামি। আর আমাদের এখানে যেহেতু গার্মেন্ট পোশাক তৈরি হচ্ছে সে ক্ষেত্রে এই সুযোগটা একটু বেশিই।
সাপ্লাইয়ের কাজটা কতদিন চললো?
সাপ্লাই দিয়ে পোশাক বিক্রির প্রক্রিয়াটা চলতে থাকে ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ২০০৮ সালে এসে আমরা যৌথ মালিকানায় একটা শোরুম দিলাম। পার্টনারশিপ যার সঙ্গে ছিল তিনি শোরুমের মালিক। সেভাবেই মালিকানা হয়। সেটা বেশিদিন টিকেনি। কিছু সমস্যা থাকার কারণে ছয় মাস পর এটা বন্ধ হয়ে যায়। এর দুই মাস পর ২০০৯ সালে আমরা ‘ইজি’ নামে শোরুম নিয়ে যাত্রা শুরু করি।
তরুণদের আকৃষ্ট করতে পেরেছে ইজি। এই সাফল্য কীভাবে এলো?
আমাদের আগে পলো টি-শার্ট এত জনপ্রিয় হয়নি। কারণ পলো টি-শার্টের কলারগুলো বাকা হয়ে গোল হয়ে থাকত। আমরাই প্রথম টি-শার্টের কলারে শার্টের আদলে স্ট্রিট কলার দেওয়া শুরু করলাম। তখন বেচাকেনার চেয়ে বড় কথা কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেরা আমাদের টি-শার্টগুলো বেশি পরা শুরু করে। খুব বেশি বেচাকেনা হতো না। কিন্তু প্যাটার্ন নিয়ে এক ধরনের আলোচনা হতো। এভাবে বাজারে ইজির চাহিদা ক্রমেই বাড়তে লাগল। পরবর্তী সময়ে আমরা শার্টও তৈরি করেছি। আমাদের কালার প্যাটার্ন এবং দামের জন্য এই পোশাকগুলো মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কাছে বেশি জনপ্রিয় হয়। কারণ কাপড়ের মূল্য কোয়ালিটি এবং একই সঙ্গে কম দাম, সব দিক থেকেই কাস্টমারদের কাছে এটি পছন্দের জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে।
চাহিদা বাড়ায় আপনাদের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যাও তো বেড়েছে।
আমরা প্রথমে শোরুম দেই শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে। চাহিদা বাড়ায় দ্বিতীয় শোরুমটিও দেই আজিজ সুপার মার্কেটেই, তারপর শান্তিনগরে। এগুলো ভালো চলতে থাকে। এরপর সিলেটে ঘুরতে যাই। সেখানেও একটা ভালো জায়গা পাই। এভাবে বেশ কিছু বিভাগীয় শহরে ও জেলা শহরে আমরা আমাদের শোরুমগুলো বাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ত্রিশটির মতো শোরুম আছে। তবে এখন পজিশন নেওয়াটা অনেক কঠিন। ইলেকট্রনিক্স, প্লাস্টিক বলেন, অনৈক কিছুরই ব্র্যান্ডশপ হচ্ছে।
এখন তো ‘ইজি’ নামেই চলছে?
নামেই যদি কোনো প্রোডাক্ট চলে, তাহলে আমি বলব ‘না’। কারণ নাম দিয়ে কি হবে, যদি কোয়ালিটিই না থাকে! আমি বিশ্বাস করি ব্র্যান্ড তখনই ব্র্যান্ড যখন কোয়ালিটির জায়গায় কোনো ছাড় দেয় না। আমি ‘ইজি’ নামের উপর ব্যবসা করতে চাই না, বরং মানুষের বিশ্বাসের উপরই আমাদের আস্থা। যতদিন ভালো পোশাক দিতে পারব ততদিনই ক্রেতা থাকবে।
আপনাদের পোশাকের ক্রেতা কারা?
মূলত তরুণরা যারা পড়াশোনা করে, তাদের পাশাপাশি এখন অ্যাক্সিকিউটিভ কাস্টমার পাচ্ছি। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ‘ইজি’ একটা অবস্থান নিয়েছে। আসলে জিনিস ভালো দিতে হলে দাম একটু পড়বেই। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সব কিছুর মূল্যই বেড়েছে। লেবারদের কস্ট বাড়ছে। স্টক লটও পাওয়া যায় না। এখন কিছু নিম্নমানের বাংলা ফেব্রিকস বেরিয়েছে। যেগুলো ঠিক আমাদের পোশাক না, কিন্তু আমাদের সিল ব্যবহার করেও কেউ কেউ বিক্রি করছে।
কোন উৎসব বা দিবসে আপনাদের কার্যক্রম কম থাকে। এর কারণ কী?
এখন আসলে উপলক্ষ প্রতিদিনই। একটা সময় ছিল মানুষ ঈদের পোশাক দিয়েই চলতো এখন তো আর সেই সময় নেই। মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। যেকোনো ছোটখাটো অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মানুষ পোশাক কিনে। তাই আমাদের পোশাকের বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন সেভাবে থাকে না, যেটা থাকে সেটা খুব ছোট পরিসরে। আমরা সারা বছরকে মাথায় রেখেই পোশাক প্রস্তুত করি। তবে দুই ঈদে আমাদের প্রোডাকশন থাকে দ্বিগুণ। অন্য উৎসবগুলোতেও অল্প স্বল্প আয়োজন থাকে।
মন্তব্য করুন