হাওরে কৃষকের কান্না, দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৩৮ | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:০৮

আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ থেকে:

কিশোরগঞ্জসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার কৃষকদের একমাত্র অবলম্বন ইরি-বোরো চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। জমির পাশে দাঁড়িয়ে কান্না ছাড়া কৃষকদের আর কিছুই করার নেই। কত কয়েক দিনে হাওরাঞ্চলের অন্তত ২৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে।

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক বাঁধ। প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক। প্রতিটি কৃষক পরিবারে এখন শুধুই হাহাকার।

কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক হাওর এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

হাওরের পাঙাইয়া বাঁধটি ভেঙে কয়েকশত একর বোরো জমি তলিয়ে গেছে। পাশের হাসনপুর বাঁধটি রক্ষার জন্য শতাধিক কৃষক দিন রাত পরিশ্রম করছেন। বাঁধটি ভেঙে গেলে মিঠামইন, করিমগঞ্জ ও নিকলী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের স্বপন বোরো ফসল পানির নিচে তলিযে যাবে। এই চিন্তায় কৃষকদের পেয়ে বসেছে।

কেবল বাঁধ ভেঙে নয়, হাওরের ভেতর দিয়ে প্রবহমান নদীগুলোর পাড় উপছে পানি বোরো জমিতে গিয়ে পড়ছে। আর সাথে সাথেই তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। পুরো হাওর এলাকার একই চিত্র। অনেক কৃষক জমিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

বিস্তীর্ণ হাওরে সোনালী রঙ ধারণ করছিল ধান। বৈশাখে ধান কাটার স্বপ্ন দেখছিল কৃষক। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ধান। অনেক কৃষক আধা পাকা ধান কোনো রকমে কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। মিঠামইনের পাঙ্গাইয়া বিলের বাঁধ ভেঙে জমিতে পানি ঢোকায় কৃষক সবুজ মিয়ার ২০ একর কাঁচা বোরো জমি তলিযে গেছে। এখন তিনি ওই জমি কাটতে শ্রমিক পাচ্ছেন না।

কৃষক দানিছ মিয়া ঢাকাটাইমসকে জানান, তার জমি পুরোটাই পানির নিচে। ধারদেনা ও ঋণ করে তিনি এ বছর বোরো আবাদ করেছিলেন। জমি পানির নিচে থাকায় এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।

মিঠামইনের কাটখান ইউনিয়নের কৃষক মহসিন ঢাকাটাইমস জানান, তাদের ২০ একর বোরো জমিতে এখন তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে।

নিকলীর কৃষক হাবিবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, বোরো জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদেরকে পথে বসতে হবে।

মিঠামইন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ময়না আক্তার ঢাকাটাইমসকে জানান, হাওরের কৃষকরা যেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে বোরো মাড়াই করার কথা। ঠিক সে সময় বোরো ফসল পানির নিচে থাকায় কৃষকরা কাঁদছে। তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার কোনো ভাষা নেই বলে বলে তিনি জানান।

মিঠামইন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাফিউল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, কেবল মিঠামইনেই অন্তত পাঁচ হাজার একর বোরো জমি বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম বুধবার বিকালে ঢাকাটাইমসকে জানান, এখন পর্যন্ত ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী, করিমগঞ্জ উপজেলার হাওরে ১৭ হাজার ২৪ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জরিপ কাজ চলছে। তবে বেসরকারি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর হবে বলে ভুক্তভোগীরা ধারণা করছেন।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, হাওরের কৃষকরা কেবল একটি ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এই প্রাণের বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তাই হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানাই।

(ঢাকাটাইমস/০৫এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেবি)