তুলির আঁচড়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

লেখা ও ছবি: শেখ সাইফ
 | প্রকাশিত : ০৫ এপ্রিল ২০১৭, ২০:৪২

দেয়ালে সারি সারি সাজানো রঙিন মাটির সরা। এর কোনোটাই বাঘ, ফুল, পাখি, নারী, নদী, প্রকৃতি কোনোটায় বা আলপনা। লম্বা রশ্মিতে ঝুলানো বিভিন্ন কাগজি ফুল, পাখি, মাছ। তার কোনোটা আঁকারে ছোট আবার কোনোটা বড়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার অনুষদ চত্বর। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে চলছে এখন ব্যাপক প্রস্তুতি। সবার হাত এখন ব্যস্ত। কেউ ছবি আঁকছেন, কেউ মুখোশে রঙ তুলির আঁচড় বুলাচ্ছেন, কেউবা আবার কাগজ কাটায় ব্যস্ত। পেপার ম্যাশে রাজা রানি। তাদের এখনো আসল চেহারা ফুটে ওঠেনি। শুকাতে ব্যাস্ত শিক্ষার্থীরা। কেউ আবার ট্যাপা পুতুলের ম্যাশে রঙ্গিং কাগজের স্তর দিচ্ছেন।

কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারুশিল্প বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় পাটের শিক্ষার্থী আরিফা আফরিন উর্মীর সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'আমরা মঙ্গল শোভা যাত্রার অর্থ সংগ্রহের জন্য মূলত শরা, পাখি, ফুল প্রভৃতি তৈরি করছি। আবার মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্যও তৈরি করা হচ্ছে।'

বেচাবিক্রি নিয়ে উর্মী বলেন, 'প্রথম দিকে বিক্রি একটু কম ছিল। এখন অনেক ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে শেষ সপ্তায় বিক্রি প্রচুর হবে।'

মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি পণ্যের মূল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, 'সরা আঁকার অনুপাতে দাম কমবেশ আছে। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি সরা, পাখি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে, মাটির ব্যাংক ও ২০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া বিভিন্ন মুখোশ বিক্রি হচ্ছে। ছোটগুলো ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। বড়গুলো ৬০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা, ফুল ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।

এসব কিছুতে মূলত বাংলাদেশের সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। 'আনন্দ লোকে মঙ্গল আলোকে বিরাজ সত্য সুন্দর' প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে।

পাশেই একমনে ছবি আঁকছিলেন প্রিতম মজুমদার। তিনি চারুকলা থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তিনি জল রঙ দিয়ে ছবি আঁকছিলেন। তিনি বলেন, ' প্রতি ছবির মূল্য রাখা হচ্ছে এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে জুনিয়র ও সিনিয়র শিক্ষকের আঁকা ছবি অনুপাতে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। শিল্পীদের মধ্যে আছেন- শিক্ষক আব্দুস সাত্তার তৌফিক, দুলাল চন্দ্র রায়, কামাল উদ্দিন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, মোস্তাফিজুর হক প্রমুখ। এছাড়া সাবেক শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবিও আছে। যেমন, রাশিদুল মানিক, মল্লিক বণিক, জুয়েল এ রব, সাফফার বাবু, রত্নেস্বর সূত্রধর, পারভেজ হাসান, রিগ্যান, আজমল হোসেন প্রমুখ।'

পাশের কক্ষে চলছে মুখোশ তৈরির সমারোহ। একঝাঁক শিক্ষার্থী মুখোশ তৈরি ও রঙ করায় ব্যস্ত। মূলত বাঘ ও পেঁচার মুখোশ তৈরি ও রঙ করায় ব্যস্ত তারা। পাশাপাশি মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়াতেও রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন।

কক্ষ থেকে বের পাশের বারান্দায় উঁচু উঁচু মাটির তৈরি মুখাবয়ব। কোনোটা নারীর, কোনোটা পুরুষের। জানতে পারলাম তারা রাজা-রানি। একের পর এক কাগজের স্তর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পেপার ম্যাশের রাজা-রানির মুখোশ। প্রায় আট থেকে দশ স্তর দেয়া হবে কাগজের জানালেন, কারুশিল্প বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় পাটের শিক্ষার্থী নামিরাহ ফারজানা।

পাশে উন্মুক্ত স্থানে অনেকগুলো বাঁশের খাঁচা। দেখতে কিসের অবয়ব তা বোঝা মুশকিল। তার বাঁধছেন, কেউ পেরেক ঠুকছেন। কাছে যেয়ে জানতে পারি এগুলোই মঙ্গল শোভা যাত্রার মূল প্রতীক। তার প্রায় চল্লিশ ভাগ কাজ হয়েছে। আগামী ১০ তারিখের ভেতর মূল ফ্রেমের কাজ শেষ হবে। তারপর কাগজ লাগানোর কাজ শুরু। তবে বৃষ্টি কিছুটা বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। বলছিলেন, অলক রাজ বংশী। তিনি ভাস্কর্য বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় পাটের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এখানে তৈরি করা হচ্ছে মোরগ, ঘোড়া, হাতি, হরিণ, পেঁচা, পাখি, ট্যাপা পুতুল প্রভৃতির কাঠামো। বিশাল আকৃতির এসব মঙ্গল শোভা যাত্রার প্রতীক রঙেচঙে কিছুদিনের মধ্যেই সেজে উঠবে আপন আলোয়।

(ঢাকাটাইমস/০৫এপ্রিল/এসএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :