কটিয়াদীতে এক কাপ চায়ে এক কেজি মরিচ!
এক কাপ চায়ের মূল্য ৫ টাকা। আর ৫ টাকা দিয়েই কেনা যাচ্ছে ১ কেজি কাচা মরিচ। নিশ্চয় অবাক হয়েছেন? হ্যাঁ অবাক হবার মতই কথা।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ ও ভাটির বড় হাওরের চরে এ বছর কাচা মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। এলাকাগুলো হচ্ছে- উপজেলার জালালপুর, লোহাজুরী, মসুয়া ও করগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। বাম্পার ফলন হলেও উপযুক্ত মূল্যে বিক্রি করতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন মরিচ চাষিরা। এবারে ভাল জাতের মরিচ বীজ চারা তৈরি করে সঠিক সময়ে মরিচ রোপন করায় ও প্রতিকূল আবহাওয়া না থাকায় আশনুরূপ মরিচের ফলন হয়েছে।
তবে বাজারে উপযুক্ত মূল্যে বিক্রি করতে না পেরে আনন্দের বদলে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন মরিচ চাষিরা।
কৃষকরা জানান, মরিচ ক্ষেত একটি দীর্ঘ মেয়াদী রবি শস্য। মরিচ গাছ মরে না যাওয়া পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ২ বার প্রতি বিঘা জমিতে ৪-৬ মন মরিচ উৎপাদন সম্ভব।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর প্রায় ২শ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষাবাদ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ফলন হয়েছে দিগুণ।
এদিকে বাজারে কাচা মরিচের আমদানি ও প্রচুর।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি কাচা মরিচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা এবং প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকা।
বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা মরিচের প্রচুর আমদানি- তবে ক্রেতা কম। বর্তমানে বাজারে ক্রেতা কম থাকায় কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। মৌসুমের শুরুতে বাজার ভাল থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ছিল। কিন্তু দরপতনে এখন তাদের মাথায় হাত।
মরিচ বিক্রি করতে আসা জালালপুর ঝাকালিয়া গ্রামের কৃষক মানিক ও সাফি মিয়া বলেন, গত বছর মরিচের দাম বেশি পাওয়ায় এবারে তিনি ১ একর জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। আর এ পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করেছেন মাত্র ১৩ হাজার টাকা। অথচ গত বছর ওই পরিমাণ কাচা মরিচ তিনি বিক্রি করেছেন ১৬-১৯ হাজার টাকা। বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠছে না।
মসুয়া বেতাল গ্রামের কৃষক ফুল মিয়া বলেন, দাম কমে যাবার কারণে ক্ষেত থেকে মরিচ উঠাচ্ছি না। গত কিছুদিন আগেও মরিচের বাজার ভাল ছিল, কিন্তু গত কিছুদিন ধরে মরিচের বাজার হঠাৎ কমে গেছে। যে দাম পাচ্ছি, তাতে উৎপাদন খরচও উঠবে না।
জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে এ এলাকার মরিচ। উৎপাদন বেশি হলেও মরিচ সংরক্ষণের কোন উপায় নেই। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন এলাকার মরিচ চাষিরা।
অপরদিকে, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মধ্যসত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে অঢেল মুনাফা।
কৃষক মতি মিয়া বলেন, এক বিঘা জমি থেকে মরিচ পেয়েছেন ২১ মণ। কিন্তু দাম না থাকায় বেকায়দায় পড়ে ২০০ টাকা মণ দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ মরিচ সংরক্ষণের তার কোনো ব্যবস্থা তার নেই।
কটিয়াদী বাজারের ঝাকালিয়া নদীর বাঁধের পাইকারি ব্যবসায়ী আনাছ মিয়া বলেন, কিছুদিন যাবত বাইরে থেকে পাইকাররা কম আসছেন। তাই হয়ত বাজার একটু কম, তবে সামনে এমন থাকবে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে দাম কমে গেছে।
(ঢাকাটাইমস/৭এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)
মন্তব্য করুন