বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চার জনের মৃত্যু: উত্তাল হাতীবান্ধা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৫৫

ফেরদৌস আলমের গত বুধবার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল পাশের মদাতী কাকজিরটারী গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ের সাথে। কিন্তু বিয়ের বর না হয়ে ফেরদৌস লাশ হয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে। একই অবস্থা মিল্টন হোসেনেরও।

বৃহস্পতিবার একটি প্রাইভেট কোম্পানির চাকরিতে যোগ দেয়ার কথা ছিল মিল্টনের। কিন্তু চাকরিতে যোগদান করা হলো না তারও। বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তার মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে প্রাণ দিতে হলো- ফেরদৌস আলম, মিল্টন হোসেনসহ খোরশেদ আলম ও উকিল হোসেনকে।

শুক্রবার লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ওই পরিবারগুলোর প্রত্যেক বাড়িতে থেকে থেমে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাদের কান্নায় পুরো গ্রামের আকাশ বাতাস ভারি হয়ে আসছে।

এদিকে ওই ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সভা শেষে তিন দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান সমিতি।

চার ইলেকট্রিশিয়ানের মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে গত বৃহস্পতিবার রাতে হাতীবান্ধা রেলস্টেশন এলাকায় এক জরুরি প্রতিবাদ সভায় তিন দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা করেন স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান সমিতি।

এ সময় বক্তব্য রাখেন- সমিতির সভাপতি আলতাব হোসেন বাবু, সদস্য আইয়ুব আলী, মিল্টন খন্দকার, অমিত হাসান প্রমুখ।

ফেরদৌস আলমের চাচাতো ও খোরশেদ আলমের মামাতো ভাই সুজানুর রহমান সুজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যুৎ বিভাগের কথা মত ছিঁড়ে পড়া তার মেরামত করতে যায় ওই চার ইলেকট্রিশিয়ান। তারা বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে খুঁটিতে উঠেন। তারপরও হঠাৎ করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন চালু করে তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঝড়ে ওই উপজেলার ভেলাগুড়ি মধ্যম কাদমা এলাকায় খুঁটি থেকে বিদ্যুতের একটি তার ছিঁড়ে পড়ার কারণে পুরো এলাকা অন্ধকারে ঢেকে যায়। গত বুধবার সকালে বিদ্যুতের ওই ছিঁড়ে পরা তারটি মেরামত করতে যায় স্থানীয় চার ইলেকট্রিশিয়ান।

এরা হলেন- মধ্যম কাদমা গ্রামের অনার্স পড়ুয়া ছাত্র মিল্টন হোসেন, ভেলাগুড়ি গ্রামের খোরশেদ আলম, ফেরদৌস আলম ও উকিল হোসেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মনছুর আলী জানান, প্রথমত বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠেন উকিল হোসেন। এরপর ছেঁড়া তারটি নিয়ে উঠেন ফেরদৌস আলম ও খোরশেদ আলম। মই ধরে উঠতে চেষ্টা করেন মিল্টন হোসেন। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন চালু হলে প্রথমে উকিল হোসেন পরে বাকি তিনজনেই বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে হয়ে নিচে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ফেরদৌস আলম, খোরশেদ আলম ও মিল্টন হোসেন মারা যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় উকিল হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়।

হাতীবান্ধা আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগকে না বলেই তারা বিদ্যুতের ছেঁড়া তার মেরামত করতে গিয়েছিল। ফলেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান বলেন, হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ এনামুল কবিরকে বিষয়টি তদন্ত করতে নিদের্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগকেও আদালাভাবে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৭এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :