চট্টগ্রামে দূষণ বাড়ছে বাধাহীন, অভিযান নেই

আজাদ সোহাগ, চট্টগ্রাম
| আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:৫৫ | প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:২৪

চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা, শিল্প কারখানার বর্জ্যে জল ও শব্দদূষণসহ নানা খাতে পরিবেশ দূষণ বেড়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত অভিযান নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের। এমনকি সাত-আট বছর আগে চালানো অভিযানে দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার কোনো তদারকিও নেই।

ফলে বাধাহীনভাবে চলছে পরিবেশ দূষণ। আর লোকবলের সংকটের কথা বলে দায় সারছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিকের দাবি, আগ্রহ থাকলেও লোকবল সংকটের কারণে তারা সব দিকে সমান গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চালাতে পারছেন না। এ ছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নেই তাদের।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরে গত আট বছরে পাহাড়ধসের ১৩টি ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৮৫ জন। এর মধ্যে শুধু ২০০৭ সালের ১১ জুনের পাহাড়ধসের ঘটনায় ১২৭ জনের মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে কর্ণফুলী নদীর আশপাশে গড়ে ওঠা চার শতাধিক ছোট-বড় কলকারখানার হাজার-হাজার টন বর্জ্যে নাভিশ্বাস ওঠা নগরবাসীর পাশাপাশি মরণদশা দেশের একমাত্র খরস্রোতা নদীটির।

এ ছাড়া শিল্প ও আবাসিক এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা ছাড়িয়েছে দ্বিগুণের বেশি। শিল্পকারখানা ও যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়ায় অতিমাত্রায় দূষিত হচ্ছে বায়ু।

একই সঙ্গে জাহাজ কাটা শিল্পে বিষাক্ত গ্যাস, অগ্নিকা- এবং যন্ত্রাংশের নিচে চাপা পড়ে গত এক দশকে মারা গেছে অন্তত ১৩০ জন শ্রমিক। অথচ এসব জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।

সংস্থাটি গত ১৪ মাসে যে ১৪১টি অভিযান চালিয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশের বেশি অভিযান পরিচালিত হয়েছে পলিথিনের বিরুদ্ধে। বিপরীতে শিল্প কলকারখানায় তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) বিষয়ে নিয়মিত অভিযান থাকলেও এসব কারখানায় দূষিত বর্জ্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযানই হয়নি।

অন্যদিকে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে মাত্র ৩ শতাংশ, শব্দদূষণের বিরুদ্ধে এক শতাংশের কম, বায়ূদূষণের বিরুদ্ধে ৭ শতাংশ এবং পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৬ শতাংশ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ফলে পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

তারা বলছেন, নগরীর দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভিযান বাড়ানো উচিত। সে ক্ষেত্রে পাহাড় কাটা, শিল্প কলকারখানার দূষিত বর্জ্য, বায়ূদূষণের পাশাপাশি তরল বর্জ্য শোধনাগার বিষয়ে আরও সক্রিয় হতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তর গত ১৪ মাসে চট্টগ্রাম মহানগরে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে ১৪১টি অভিযান চালায়। এসব অভিযানে ৪৭ টন পলিথিন জব্দের পাশাপাশি এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এক কোটি ১৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা আদায় করতে সক্ষম হলেও বাকি ১৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা অনাদায় থাকে।

এ ছাড়া পরিবেশ দূষণের দায়ে ১৬৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি। অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযানের ৯টি খাতের মধ্যে এই ১৪ মাসে নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে ৪৯টি, কলকারখানা হতে নিঃসরিত তরল বর্জ্য (ইটিপি বহির্ভূত প্রতিষ্ঠান) বিরোধী ৩৯টি, পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন কারখানার বিরুদ্ধে ২৩টি, পুকুর ও খাল ভরাটের বিরুদ্ধে ১২টি, বায়ূদূষণের বিরুদ্ধে ১১টি এবং পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ৫টি অভিযান পরিচালনা করা হয়।

কলকারখানার দূষিত বর্জ্য ও জাহাজ ভাঙা শিল্পের বর্জ্যের মতো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট দুটি খাতে ওই ১৪ মাসে কোনো ধরনের অভিযানই পরিচালিত হয়নি। আর শব্দদূষণের বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে মাত্র একবার।

(ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বন্দর নগরী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা