বোরো ধান চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ফরিদপুরের কৃষকরা

মফিজুর রহমান শিপন, ফরিদপুর
 | প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০১৭, ২১:৫৬

‘আশনুরূপ মূল্য না পাওয়ায়, আর উৎপাদন খচর অধিক হওয়ায়’ গত সাত বছরে জেলায় বোরো ধানের আবাদের বিশ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমেছে। বোরোর মৌসুমে এখন চাষিরা ঝুঁকছেন সরিষা, মসুর, পেঁয়াজ ও গম জাতীয় ফসলের দিকে।

ফরিদপুর জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার নয়টি উপজেলায় ২০১০-১১ সালে জেলা বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯ হাজার ৪১৭ হেক্টর, এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ছয় হেক্টর। ২০১১-১২ সালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৭৮৬ হেক্টর, আবাদ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৮২ হেক্টর। ২০১২-১৩ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ২২৫ হেক্টর, আবাদ হয়েছিল ২৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর। ২০১৩-১৪ সালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ২২৮ হেক্টর, আবাদ হয়েছিল ২৬ হাজার হেক্টর। ২০১৪-১৫ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৯১৬ হেক্টর, আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার হেক্টর। ২০১৫-১৬ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ২৯১ হেক্টর, আবাদ হয়েছিল ২২ হাজার হেক্টর এবং চলতি মৌসুমে ২০১৬-১৭ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৫ হাজার ৩৮৭ হেক্টরের বিপরীতে চাষাবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৯১ হেক্টর জমিতে।

জেলার কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, গত সাত বছরের বোরো ধানের আবাদ কমেছে বিশ হাজার হেক্টর জমিতে।

বোরো ধানের বদলে এবার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায়, পেঁয়াজ ছয় হাজার হেক্টর, সরিষা তিন হাজার হেক্টর, মসুর চার হাজার হেক্টর আর গম প্রায় ৫ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত চাষ হয়েছে বলে জানায় ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুর রউফ।

ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত মৌসুমে তারা ধানের নায্য মূল্য পাননি। প্রতিমণ ধানের উৎপাদনে তাদের খরচ হয়েছে ৮শ টাকা। সেখানে মণপ্রতি বিক্রয় মূল্য এসেছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। এ কারণে তারা বিকল্প ফসল চাষে ঝুঁকছেন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার সিএন্ডবি ঘাট এলাকার কৃষক সামাদ শেখ জানান, গত বছর আমি ছয় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। বিঘাপ্রতি খরচ ছিল ১৪ হাজার, কিন্তু ধান বিক্রি হয় ১০ হাজার টাকায়। এ কারণে এ বছর ধান চাষ বাদ দিয়ে পেঁয়াজ, মসুর আর গম চাষ করছি।

বোরো চাষে এই ধসের কারণ প্রসঙ্গে জেলার সদর উপজেলার আম্বিকাপুর গ্রামের চাষি আব্দুর রব, আবুল হোসেন, সোলায়মান শেখসহ আরো বেশ কয়েকজন জানালেন, এই ধান চাষ শুধু সেচনির্ভর, আর সেচ কাজের জ্বালানির দাম, শ্রমিক খরচ অধিক হওয়া; অন্যদিকে উৎপাদিত এ ধানের দাম কাঙ্খিত না হওয়া এমনটি হয়েছে।

তারা জানালেন, বোরো বাদ দিয়ে আমরা এখন অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছি।

জেলার বোয়ালমালীর এলাকার ধান ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, এলসির মাধ্যমে চাল আসায় দেশের কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছেন না। এছাড়া সরকার যখন ধান কিংবা চাল কেনে সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিলারদের কাছ থেকে, কৃষক সরাসরি দিতে পারে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকরা এমনিভাবেই বোরো ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকবে।

তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ধান চাষে কৃষকদের প্রতি আরো সদয় হতে হবে, প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে।

ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার বিষয় স্বীকার করে কৃষি বিভাগ ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুর রউফ বলেন, শস্য বহুমুখীকরণের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ফলে গম, পেঁয়াজ, মুসরির মতো বিকল্প ফসলের চাষ বাড়ছে।

তিনি বলেন, বোরো উৎপাদন কম হলেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা হবে না।

(ঢাকাটাইমস/৯এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :