নববর্ষ সামনে রেখে ব্যস্ত কুলিয়ারচরের কুমারপাড়া

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০১৭, ১৫:৩২

রাজীবুল হাসান, ভৈরব থেকে

বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর বাটি দুয়ারিয়া গ্রামের কুমারপাড়ার কারিগররা মাটির খেলনা তৈরি করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর কয়েকদিন পরই পয়লা বৈশাখ। বাংলার ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা সারাদেশের মতো এই এলাকার কুলিয়ারচর, ভৈরবসহ আশেপাশের উপজেলাগুলোতে জমে উঠে। প্রতিবছর বৈশাখী মেলায় নারী পুরুষ শিশুরা উপস্থিত হয়ে আনন্দ উপভোগ করে। দোকানিরা শিশুদের জন্য মাটির তৈরি নানাজাতের খেলনা নিয়ে মেলায় বসে। এসব খেলনার মধ্য রয়েছে  মাটির তৈরি পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ঠুলি, পাটা, ব্যাংক, পাতিল, পাখল চুলা, হাঁস ইত্যাদি। গ্রাম ও শহরের  শিশুদের কাছে মাটির তৈরির এসব খেলনা খুবই জনপ্রিয় ও আনন্দের।

প্রতি বছর বৈশাখী মেলা এলেই অসংখ্য নারী শিশু মাটির খেলনা কিনতে মেলায় ভিড় করে। আর এসব খেলনা তৈরি করে এখানকার কুমার পাড়ার কারিগররা। বাপদাদার পেশা বলে আজও তারা মাটির দিয়ে খেলনা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

বাটি দুয়ারিয়া গ্রামের কুমার পাড়াতে নারী পুরুষ বৃদ্ধ বৃদ্ধা এমনকি শিশুরা পর্যন্ত মাটির খেলনা তৈরি করে থাকে। বিশেষ করে সামনে বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে কুমার পাড়ার কারিগররা দিন রাত কাজে ব্যস্ত রয়েছে। বছরের একটি মেলা তাদের আয়ের বড় উৎস বলে জানিয়েছেন কারিগররা। তবে এখন বাজারে প্লাস্টিকের তৈরি সামগ্রি পাওয়া যায় বলে তাদের বাপদাদার পেশা আগের মতো মুনাফা নেই বলে জানান তারা। তারপরও তারা একাজটি ছাড়তে পারছে না।

কুমার পাড়াতে কারিগররা এখন এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি করছে হাতি, ঘোড়া, পুতুল, ঠুলি, ব্যাংক, হাসঁ, পাটা, পাখল চুলা, বাঘ, হরিণ, কুমির, আম, লিচু ইত্যাদি। তবে সবই শিশুদের খেলনা। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই গৃহবধূ, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, পুরুষ ও তাদের সন্তানরা মাটি দিয়ে খেলনা তৈরি করছে। গ্রামে আটাঁলো মাটি না থাকায় অন্যস্থান থেকে তারা মাটি কিনে আনে বলে তারা জানিয়েছে। তারপর কাঠের তৈরি ফরমা এবং হাতে নৈপুণ্য কারুকার্যে তারা এসব খেলনা তৈরি করার পর রোদে শুকায়। এরপর বাড়িতে কূপ করে আগুনে পুড়িয়ে শক্ত হলে খেলনাতে বিভিন্ন রং দেয়। সামনে বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে গত এক মাস যাবত তারা বেশি বেশি উৎপাদন করে বাড়িতে মজুদ করেছে। বাড়ির পুরুষরা এসব খেলনা মেলায় নিয়ে বিক্রি করবে। এতে যা আয় হবে তা দিয়ে সংসারের আংশিক খরচ মেটাবে তারা।

কারিগর আরাধন ঢাকাটাইমসকে বলেন, এপেশায় এখন আর সংসার চলে না। বাপদাদার পেশা আর অবসর সময় কাটাতে এখনো এপেশার কাজ করছি।

শিখারানী পাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্লাস্টিক সামগ্রী বের হওয়ার পর এখন মাটির খেলনা বাজারে তেমন চলে না এবং দামও কমে যাওয়ায় তেমন মুনাফা নেই।

কারিগর সুদাংশু চন্দ্র পাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, বৈশাখী মেলায় এসব খেলনা বিক্রি করলে ৩/৪ হাজার টাকা মুনাফা হতে পারে। এই মুনাফায় সন্তানদের লেখাপড়া খরচ কোনো রকম চলে।

মুক্তা রানী পাল বলেন, আমার স্বামী কাপড়ের ব্যবসা করে, তবে বাড়িতে অলস সময় কাটাতে আর নিজের ব্যয় মেটাতেই মাটির খেলনা তৈরি করি। কারিগর ষড়স্বতি পাল বলেন, পেশার বাইরেও প্রতি বছর আমরা মাটির খেলনা তৈরি করি বলেই বাংলার ঐতিহ্য টিকে আছে। পাশাপাশি শিশুরা এসব খেলনা কিনে আনন্দ করে।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেবি)